দেশে অনেক নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে এবং সেসব সংস্থার জন্য ভালো মানের আইনও রয়েছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। এখানে মূল বিষয় হচ্ছে, সুশাসন ও আইনের নীতিগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন। যদি আইনের বিধানগুলোর সঠিক প্রয়োগ হয়, অর্থাৎ বিচারহীনতার চর্চা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে ব্যাংক ও পুঁজিবাজারসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থায় যেসব অনিয়ম হয় তা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এবং এবিবির সাবেক সভাপতি মো. নূরুল আমিন। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেন হাসিব হাসান।
ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, চলতি মাসের ৩০ জানুয়ারি মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। গত মুদ্রানীতিতে যে বিষয়গুলো ঘোষিত হয়েছিল, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তার মেয়াদ শেষ হয়েছে। ওই মুদ্রানীতিতে যে মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল, বিশেষ করে মানি সরবরাহ, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ এবং সুদহার প্রভৃতি বিষয়ে কাক্সিক্ষত ফল অর্জিত হয়নি। বিশেষ করে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ অনেকটা কমে গেছে। এ বিষয়গুলোতে কাক্সিক্ষত ফল অর্জিত না হওয়ার কারণ কী? সে কারণগুলো ভালোভাবে চিহ্নিত করে চলতি মাসের মুদ্রানীতিতে ওই সমস্যাগুলো উত্তরণে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তার একটি সঠিক দিকনির্দেশনা থাকা উচিত। আর যদি সেটা না থাকে, সেক্ষেত্রে চলতি মুদ্রানীতি অর্থবহ হবে না।
তিনি আরও বলেন, গত বছর ১৪ থেকে ১৮ কোম্পানি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বেশিরভাগই স্বল্প মূলধনি কোম্পানি। আবার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে মিউচুয়াল ফান্ড, আইসিবি ও মার্চেন্ট ব্যাংক স্থিতিশীল বাজার তৈরির ক্ষেত্রে তেমন ভূমিকা রাখছে না। সার্বিকভাবে দেশের পুঁজিবাজারে উন্নতি করতে হলে ভালো মানের সরকারি, বেসরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পুঁজিবাজারে ভালো মানের কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত হলে বাজারের গভীরতা বাড়বে ও দেশের পুঁজিবাজার সম্প্রসারিত হবে এবং কারসাজির সম্ভাবনা কম থাকবে।
মো. নূরুল আমিন বলেন, দেশে বছরে দুবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। আর এই মুদ্রানীতি হচ্ছে মানি সম্পর্কিত। বিশেষ করে সুদহার, টাকার মান, মানি সরবরাহ ও ঋণ সরবরাহ ঠিক রাখা। এখন কথা হচ্ছে, মানি মার্কেটের সঙ্গে পুঁজিবাজার প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না হলেও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে। তাই মুদ্রানীতি ঘোষণায় পুঁজিবাজারের ওপর যেন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে অনেক নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে এবং ওইসব সংস্থায় ভালো মানের আইনও রয়েছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। আসলে মূল বিষয় হচ্ছে সুশাসন ও আইনের নীতিগুলো সঠিকভাবে প্রয়োগের বিষয়। যদি আইনের নীতিগুলো সঠিকভাবে প্রয়োগ হয়, অর্থাৎ বিচারহীনতার চর্চা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে ব্যাংক ও পুঁজিবাজারসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনিয়ম থেকে বেরিয়ে আসা যাবে। আইন প্রয়োগের ছোট্ট একটি উদাহরণ: মালয়েশিয়ায় এক ব্যক্তি গাড়ি কেনার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু ঋণ সঠিকভাবে পরিশোধ করেননি। সেজন্য গাড়িটি রাস্তায় চালানোর সময় মালিককে নামিয়ে ব্যাংক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে গাড়িটি নিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে দেশে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। অর্থাৎ ঋণখেলাপিদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বয়কটের কোনো বিধান নেই। বরং ঋণখেলাপিরা আইনের বিভিন্ন ফাঁক গলে বেরিয়ে আসছেন।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ