ওয়েস্টার্ন মেরিনের ইজিএম বাতিলের দাবি শেয়ারহোল্ডারদের

 

নাজমুল ইসলাম ফারুক ও সাইফুল ইসলাম: ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) বাতিলের দাবি জানিয়েছেন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা। একই সঙ্গে কোম্পানির অডিটর নিয়োগেও আপত্তি তুলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বরাবর চিঠি দিয়েছেন তারা। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

উল্লেখ্য, তিন বছর পর গত রোববার ওয়েস্টার্ন মেরিনের ইজিএম অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে বোট ক্লাবে। অনুষ্ঠিত ওই ইজিএম কোম্পানির ভাড়া করা লোকদের দ্বারা সম্পন্ন করা হয়েছে বলে বিএসইসি বরাবর প্রদত্ত চিঠিতে দাবি করেছেন শেয়ারহোল্ডাররা।

সভায় শেয়ারহোল্ডারদের উপস্থিতির কোনো ধরনের রেজিস্টার ব্যবহার করা হয়নি জানিয়ে তারা বলেন, অর্থের বিনিময়ে ভাড়া করা লোকদের সেখানে আপ্যায়নও করা হয়েছে। অথচ এজিএম ও ইজিএমে উপহার ও আপ্যায়ন নিষিদ্ধ রয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ওই ইজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের আপত্তির মুখে একটি অডিট ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছে ওয়েস্টার্ন মেরিন। এই অডিট ফার্মের নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান শেয়ারহোল্ডাররা।

এছাড়া কোম্পানির বিভিন্ন পরিচালকদের হাতে থাকা শেয়ার ছেড়ে দেওয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠিতে সরকারের একজন প্রতিনিধি পরিচালনা পর্ষদের নিয়োগের দাবি জানান শেয়ারহোল্ডাররা। একই সঙ্গে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা। তাছাড়া প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থের সঠিক ব্যবহার হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন শেয়ারহোল্ডাররা।

এ সম্পর্কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শেয়ারহোল্ডার বলেন, কোম্পানির আইপিও অর্থ কোন খাতে খরচ করেছে তার কোনো হদিস নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অনুরোধ করেন তিনি। তাছাড়া সেদিন ইজিএমে ভাড়া করা লোকজন দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। এ কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির অডিটর নিয়োগে আপত্তি তুললেও কর্তৃপক্ষ তা মানেননি।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের কোম্পানি সচিব শাহদাত হোসেন বলেন, অডিটর নিয়োগের বিষয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ঠিক নয়, ইজিএমে কেউ আপত্তি করেনি। অথচ সেখানে সবাই অডিটর নিয়োগে সমর্থন করেছে।

প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলোর তিন বছর হয়ে গেছে, লক ইন সময় শেষ হয়েছে। নিয়ম মেনে স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদন নিয়েই এসব শেয়ার বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমার কাছে দুটি চিঠি এসেছে, সেগুলোতে ইজিএমের নোটিস দেইনি বলা হয়েছে। আসলে আমরা ইজিএমের নোটিস পত্রিকায় দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আসলে আমরা এজিএম পার্টি নামে কিছু শেয়ারহোল্ডারদের জন্য খুব বিপদে আছি। তাদের মনমতো কিছু না হলেই সমস্যা তৈরি হয়।

এদিকে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের হিসাববছর শেষ হয় ৩০ জুন, এর আগে  কোম্পানিটির সর্বশেষ এজিএম অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর। ওই বছর নভেম্বরে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরুর পর আইনি বাধ্যবাধকতায় দ্রুততম সময়ে এজিএম  শেষ করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে ২০১৫ হিসাববছরে যথাসময়ে পরিচালনা পর্ষদের সভায়  কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়ে লভ্যাংশ ও এজিএমের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কোম্পানিটি। নিয়মানুযায়ী সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর কোম্পানি নিবন্ধকের এখতিয়ারভুক্ত সময়ও পেরিয়ে যায়। আর নির্ধারিত সময়ে এজিএম করতে না পারায় গত বছরের ৩ জানুয়ারি ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডকে ‘এ’  থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেয় ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।

কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো কোম্পানির একটি এজিএম অনুষ্ঠানের পর ১৫ মাসের মধ্যে পরবর্তী এজিএম করতে হবে। তবে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের (আরজেএসসি) সম্মতিক্রমে তা ৯০ দিন অথবা যে পঞ্জিকা বছরের জন্য সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, সে বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ দুই সময়ের মধ্যে  যেটি আগে হয়, সে মেয়াদ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। বর্ধিত এ সময়ের মধ্যেও এজিএম অনুষ্ঠানে ব্যর্থতায় আদালতের নির্দেশে এজিএম আহ্বান ও পরিচালনা করা যায়। গত ইজিএম করার বিষয়টি আদালতের নির্দেশনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজার থেকে ২০১৪ সালে সাড়ে চার কোটি শেয়ার ছেড়ে ১৫৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে ওয়েস্টার্ন মেরিন। বাজার থেকে উত্তোলিত অর্থ দিয়ে ৮২ শতাংশই ব্যাংকঋণ পরিশোধ করা এবং বাকি অর্থ কোম্পানির অবকাঠামো উন্নয়ন ও আইপিও খরচ খাতের ব্যয়ের কথা ছিল। অথচ আইপিও অর্থ সঠিক ব্যবহার হয়েছে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন কোম্পানির

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০