Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 12:54 am

ঔষধি গ্রামের ঘরে ঘরে সচ্ছলতার হাসি

প্রতিনিধি, রংপুর: ২২ বছর আগে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পেটভাতা গ্রামে ঔষধি গাছের চাষ শুরু করেছিলেন কবিরাজ আব্দুল জব্বার। এক সময় সারাদেশের মানুষ এ গ্রামকে ‘ঔষধি গ্রাম’ হিসেবে জানতে শুরু করেন। কিন্তু তিন বছর আগে কবিরাজ আব্দুল জব্বারের মৃত্যু হলে গ্রামটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। পরে তার দেখানো পথে ঔষধি গাছগুলোর হাল ধরেন স্ত্রী সালেহা বেগম।
সরেজমিন দেখা যায়, পেটভাতা গ্রামের প্রবেশপথের পাশেই সারি সারি তুলসী ও বাসক গাছ। একটু পা বাড়ালেই বাড়ির আনাচে-কানাচে চোখে পড়বে বিভিন্ন আকৃতির লতাপাতার গাছ। কোনো বাড়ির আঙিনা বা উঠানে তেমন ফাঁকা জায়গা নেই; চোখ যায় শুধু গাছ আর গাছ। আর এগুলো লতাপাতা বা কোনো আগাছা নয়, সবই ঔষধি গাছ।

এখানেই শেষ নয়, গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গেলে দেখা যাবে বিলুপ্তপ্রায় অশোক, চিরতা, কর্পূর, পুনর্বভা, তেজবল, নাগেশ্বর, অশ্বগন্ধা, জাতিপুষ্প, গোরখ চাকুলিয়া ও কুটরাজ গাছ। এছাড়া জীবন রক্ষাকারী মহৌষধ হিসেবে পরিচিত তুলসী পাতা, বাসক পাতা, কালোমেঘ, ওলট কম্বল, হরতকী, বহেরা, অর্জুন, স্বর্ণলতা, তেজপাতা ও বস গাছের দেখা মেলে সবখানে। এভাবে গ্রামটি এখন ঔষধি গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
এলাকায় কবিরাজ হিসেবে পরিচিত আব্দুল জব্বার ২০০২ সালে নিজের প্রয়োজনে স্বল্প পরিসরে বাড়ির আশপাশে ঔষধি গাছ লাগিয়েছিলেন। পরে বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকার দরিদ্র কৃষকদের বাড়ির আঙিনা বা উঠানের পরিত্যক্ত জমিতে ঔষধি গাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন তিনি।

শুরুর দিকে এলাকার ১২ থেকে ১৫ জন কৃষককে নিজ উদ্যোগে চারা সংগ্রহ করে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সেগুলো লাগিয়ে দেন আব্দুল জব্বার। সেই সঙ্গে পরিচর্যাও করেছিলেন তিনি। পরে এক বছরের মাথায় সেসব কৃষকের বাড়িতে লাগানো ঔষধি গাছ দিয়ে মাসে ৪-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়।
বর্তমানে গ্রামটিতে প্রায় ৩০০ কৃষক ঔষধি গাছ লাগিয়ে প্রতি মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। সালেহা বেগম নিজেই এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে ঔষধি গাছ ও পাতা কেনেন। পরে ক্রয়কৃত গাছ ও পাতা প্রক্রিয়াজাত করে একাধিক আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন তিনি। এ থেকে সালেহা বেগমের প্রতি মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় হয়।

স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে গ্রামটি চিকিৎসকবিহীন গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। গ্রামের লোকজন অসুস্থ হলে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ঔষধি গাছ ব্যবহার করেন। এছাড়া প্রতিটি বাড়ির লোকজনেরই বেশিরভাগ ঔষধি গাছের গুণাগুণ জানা। পেটভাতা গ্রামের আমেনা বেগম বলেন, ‘পাঁচ শতক জমির ওপর আমার বাড়ি। এখানে বসবাসের পাশাপাশি ঔষধি গাছ লাগিয়েছি। প্রতি মাসে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত ঔষধি গাছ ও পাতা বিক্রি করি। এটা আমাদের বাড়তি আয়।’

আয়নাল মিয়া বলেন, ‘ঔষধি গাছ লাগিয়ে প্রতি মাসে ভালোই আয় হয়। ঔষধি গাছের জন্য আলাদা খরচ করতে হয় না। শুধু পরিচর্যা করলেই আয় করা সম্ভব।’ সালেহা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর ইচ্ছা ছিল গ্রামটিকে ঔষধি গ্রাম বানানোর। তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তার চেষ্টা বিফলে যায়নি।’
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান মণ্ডল বলেন, ‘পেটভাতা গ্রামে বহু প্রজাতির ঔষধি গাছ আছে। এসব গাছের মাধ্যমে ভুক্তভোগীরা উপকৃত হচ্ছেন।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানকার চাষিরা কম জমিতে ভেষজ চাষাবাদ করে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন। তাই এর উৎপাদন ও ব্যবসা সম্প্রসারণ হচ্ছে।’