কক্সবাজরের মেরিনড্রাইভ সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা

এস. এম. রুবেল, কক্সবাজার: কক্সবাজারে পর্যটকদের ঘিরে নানা ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তার মধ্যে ‘রেন্ট-এ-বাইক’ নামে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কলাতলির মোড় থেকে মেরিনড্রাইভ সড়কের বিভিন্ন অংশে চোখে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে মোটরসাইকেল ভাড়া দেয়া এসব দোকানগুলো তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শর্ত পূরণ করে মোটরসাইকেল ভাড়া দিয়ে মেরিনড্রাইভ সড়ক ধরে ঘোরাফেরা করছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা। কিন্তু গত সোমবার মেরিন ড্রাইভ সড়কে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কক্সবাজার সরকারি কলেজের এক ছাত্রী নিহত হন; আহত হয় তার সঙ্গে থাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের এক ছাত্র। দুর্ঘটনার শিকার হওয়া মোটরসাইকেলটি ভাড়ায় নেয়া গাড়ি ছিল। গাড়িটি ভাড়া নেয়ার সময় ড্রাইভিং লাইসেন্স নেয়া হয়নি। এমনকি দুর্ঘটনার শিকার হওয়া ওই শিক্ষার্থীদের ড্রাইভিং লাইসেন্সও ছিল না। প্রশ্ন উঠেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কীভাবে দোকানগুলো পর্যটক ও তরুণ-তরুণীদের মাঝে মোটরসাইকেল ভাড়া দিচ্ছে? আর এই ক্ষেত্রে কী ছিল প্রশাসনের ভূমিকা?

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কলাতলি মোড় থেকে মেরিনড্রাইভ সড়কের দুই পাশে প্রায় ৮-১০টি দোকানে মোটরসাইকেল ভাড়া দেয়া হচ্ছে। দোকানের সামনে সারি সারি সাজিয়ে রাখা হয়েছেÑইয়ামাহা, এফজেট, জিক্সার, হিরো, টিভিএস, অ্যাপাসি, পালসারসহ নামিদামি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল। সঙ্গে রয়েছে হিরো, টিভিএস ও রানারের স্কুটি। এসব গাড়ির সামনে সাদা কাগজে বড় অক্ষরে লিখা রয়েছে ‘বাইক ভাড়া দেয়া হয়’। সকাল থেকে দোকানগুলোয় বাইক ভাড়া নিতে আসা পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। যাদের বেশিরভাগই উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণী। রয়েছে স্থানীয় কলেজের শিক্ষার্থীরাও।

কথা হয় কয়েকটি বাইক ভাড়া দেয়া প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে। তারা জানান, প্রতি ঘণ্টা ৩০০ টাকা করে সর্বনিম্ন ৩ ঘণ্টার জন্য ৯০০ টাকায় মোটরসাইকেল ভাড়া দেয়া হয়। আবার ৪ ঘণ্টার জন্য নিলে প্যাকেজে ভাড়া নেয়া হয় ১ হাজার টাকা। মোটরসাইকেল ভাড়া নিতে কী কী কাগজপত্র জমা দিতে হয় সেই বিষয়ে জানতে চাইলে তারা আরও জানিয়েছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে জমা দিতে হবে, না থাকলে প্রয়োজন নেই। নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করেই ২ হাজার টাকা অতিরিক্ত জামানত দিয়ে মোটরসাইকেল ভাড়া নিতে পারবে যে কেউ। ভাড়া গাড়ি চালানোর সময় ট্যুরিস্ট পুলিশ কিংবা ট্রাফিক পুলিশ আটকাবে কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে গাড়ির মালিক বলেন, ‘যেখানে পুলিশের হাতে পড়বেন, তাদের সঙ্গে সর্বোচ্চ ভালো আচরণ করবেন। যদি ছেড়ে না দেয় তবে আমাদের নাম্বারে ফোন দেবেন। বাকিটা আমরা ম্যানেজ করে নেব।’

এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের কক্সবাজার শাখার সভাপতি জসিম উদ্দীন কিশোর জানান, সড়কে গাড়ি চালানোর জন্য গাড়ি ও চালকের লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। এই নীতি অনুসরণ না করে যারা মোটরসাইকেল ভাড়া দিচ্ছে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের জরিমানা করতে হবে। পাশাপাশি দায়িত্বরত পুলিশ ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সে ক্ষেত্রে মেরিন ড্রাইভ সড়কে দুর্ঘটনা ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান, পর্যটন এলাকায় পর্যটকরা আনন্দ উল্লাস করতে আসে। সে ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল ভাড়া দেয়ার বিষয়টি একেবারে বন্ধ করা যাবে না। তবে মোটরসাইকেল ভাড়া দেয়ার আগে লাইসেন্স আছে কি না নিশ্চিত করার জন্য মালিকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ইতোমধ্যে ভাড়া দেয়া মোটরসাইকেল মালিকদের ডাকা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘অবৈধভাবে মোটরসাইকেল ভাড়া দেয়ার বিষয়টি জানা ছিল না। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। যাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কেউ মোটরসাইকেল ভাড়া দিতে না পারে। অন্যতায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০