Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 12:21 pm

কক্সবাজারে ৫৫ ঘোড়ার দায়িত্ব নিল ওয়াইআরসি

কাইমুল ইসলাম ছোটন, কক্সবাজার: বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে লাখ লাখ পর্যটক বেড়াতে আসেন। তাদের আনন্দ বাড়িয়ে দেয় সৈকতের ঘোড়াগুলো। কিন্তু লকডাউনের কারণে সৈকতজুড়ে সুনসান নীরবতা।

লকডাউনের কারণে বেকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রায় তিন লাখ মানুষ। প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে ঘোড়াগুলোর ওপরও।

এখানে লকডাউনে খাদ্যের অভাবে প্রথম দফার লকডাউনে গত বছর ২০টি এবং দ্বিতীয় দফার লকডাউনে চলতি বছর ১০টিসহ ৩০টি ঘোড়ার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘোড়া মালিক সমিতির সভাপতি আহসান উদ্দীন নিশান।

আহসান উদ্দীন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটক আসেন না। এ কারণে আমাদের কোনো আয় নেই। ঘোড়ার পিঠে চড়ার কারণে আয় হতো। এতে সচ্ছল ছিলেন ঘোড়া মালিকরা, ঘোড়ার যতœ নিতে পারতেন তারা, উন্নতমানের খাবার দিতে পারতেন। কিন্তু এখন আয় না থাকায় আমরা নিজেরাই বিপদে আছি, ঘোড়ার খাবার কীভাবে দেব?

তিনি আরও বলেন, ঘোড়াগুলো ছেড়ে দেয়ার পর কয়েকটি গাড়ির ধাক্কায়, লোকজনের আঘাতে ও রাস্তাঘাটের ময়লা-আবর্জনা, পলিথিন খেয়ে অসুস্থ হয়ে মারা গেছে।

একটি ঘোড়ার জন্য দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকার খাবার দরকার। ছোট ঘোড়ার জন্য ২০০, বড় ঘোড়ার জন্য ৩০০ টাকা লাগে। ছোলা, ভুসি, পাতার মিড়া (এক ধরনের গুড়), হার্ক (কুড়া) প্রভৃতি থাকে তাদের খাবারে।

শহরের সমিতি পাড়ার মোহাম্মদ আলম বলেন, আমার ১৫টি ঘোড়া ছিল। এর মধ্যে একটি ঘোড়া বিক্রি করে দিয়েছি। চারটি ঘোড়া মারা গেছে।

ইসলাম খাতুন নামে একজন ঘোড়ার মালিক বলেন, ঘোড়ার খাদ্য না পাওয়ায় অনেক ঘোড়া মারা যাচ্ছে। তাছাড়া নিয়মিত চিকিৎসা না পেলেও মারা যায়। তিনি ওয়াইআরসি থেকে নানা সহায়তা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

ওয়াইআরসি (ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব) কক্সবাজারের সদস্য আনছারুল হক বলেন, আমরা শুনছি অনেক ঘোড়া না খেয়ে মারা যাচ্ছে। আমাদের সংগঠনটি হলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আমরা চেষ্টা করি সবসময় ভালো কাজ করার জন্য। এ জন্য আমরা ঘোড়া মালিকদের পাশে দাঁড়িয়েছি, যাতে কোনো ঘোড়া অনাহারে আর মারা না যায়। অন্য সংগঠনগুলোকেও তিনি তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

মালিকদের সহযোগিতার পাশাপাশি ৫৫টি ঘোড়ার খাবারের ব্যবস্থা করেছে ওয়াইআরসি।

জানা গেছে, সংগঠনটি দুই থেকে তিন দিনের জন্য একসঙ্গে খাবার দিচ্ছে, পরে আবার দেয়া হবে। এটা চলমান। সব খাবার একসঙ্গে না দিয়ে আলাদা আলাদা দেয়া হচ্ছে। আমরা আশা করি, সমাজের সবাই আশা করি এগিয়ে আসবে, ঘোড়া মালিকদের পাশে দাঁড়াবে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি কলিম উল্লাহ কলিম শেয়ার বিজকে বলেন, অনেক মালিকের পাঁচ থেকে ১০টা ঘোড়া রয়েছে। তবে আয় কমে যাওয়ায় তারা ঘোড়ার খরচ মেটাতে পারছেন না।

ড্রিম এনিমেল ফার্মা ম্যানেজিং ডিরেক্টর মিনহাজুল আবেদিন নান্নু শেয়ার বিজকে বলেন, ঘোড়ার পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন। দীর্ঘদিন ময়লা আবর্জনা খাবার খাওয়ার কারণে ঘোড়া অসুস্থ হয়ে পড়বে।

কক্সবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. অসীম বরণ সেন বলেন, খাদ্যের অভাবে ঘোড়া মারা যাওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। বার্ধক্য ও নানা অসুখে ভুগে গত এক বছরে তিনটি ঘোড়া মারা গেছে। খাদ্যের অভাবে এত ঘোড়া মারা যাওয়ার খবর সঠিক নয়। কারণ আমরা ঘোড়া মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের ঘোড়াগুলোকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। ভবিষ্যতেও এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

এদিকে ঘোড়ার মৃত্যুর কারণ জানতে চেয়ে দুই সচিবসহ ১৩ জনের নামে আইনি নোটিস হয়েছে বলে জানা গেছে। যৌথভাবে নোটিস দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) ও পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (পাউ)।