কক্সবাজার উপকূলে উধাও ইলিশ, হতাশ জেলেরা

প্রতিনিধি, কক্সবাজার: কক্সবাজারের উপকূলে টানা এক মাস জেলেদের জালে ধরা পড়েছিল ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। তবে গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ইলিশের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা। এতে হতাশ জেলার ছয় হাজার ট্রলারমালিক ও লাখো জেলে। কক্সবাজারের সাগর উপকূল থেকে হঠাৎ ইলিশ উধাও হওয়ার কারণ জানতে চাইলে জেলেরা জানান, কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। তাছাড়া বৃষ্টিও তেমন হচ্ছে না। তার কারণে সাগরের গভীরে চলে গেছে ইলিশ। কিন্তু গভীর সমুদ্রে গিয়ে ইলিশ ধরে আনার মতো সক্ষমতা কক্সবাজারের ট্রলারগুলোর নেই। এখানকার ট্রলারগুলো উপকূলের ৫০ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে।

এফবি কাইয়ূম ট্রলারের জেলে সাব্বির আহমদ (৫৫) বলেন, পাঁচ দিন ধরে তারা ২১ জন জেলে ট্রলার নিয়ে ৮০ কিলোমিটার দূরে গভীর সাগরে জাল ফেলে ইলিশ ধরার চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু ওই পাঁচ দিনে জালে ধরা পড়েছে মাত্র ৭৫টি ইলিশ। অথচ ১০ সেপ্টেম্বর একই স্থানে জাল ফেলে তারা ৩ হাজার ৭০০টি ইলিশ ধরেছিলেন। হঠাৎ ইলিশ কোথায় গেল, নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না এ ট্রলারের জেলেরা।

এফবি সোহেল নামে আরেকটি ট্রলারের জেলে আবদুল আমিন (৫১) বলেন, তাদের ট্রলারে ধরা পড়েছে মাত্র ৩৭টি ইলিশ। গত বুধবার থেকে বঙ্গোপসাগরে নি¤œচাপ সৃষ্টি হওয়ায় সাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। এ কারণে তারা ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরে এসেছেন।

ফিশারিঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির উপদেষ্টা ও ইলিশ ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত সময়ে ২৫টি ট্রলারে বিক্রি হয়েছে মাত্র দুই মণ ইলিশ। দামও তিন গুণ বেশি। ১০ দিন আগে এক কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হয়েছিল ৯০০ টাকায়। আর এখন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ফিশারিঘাট থেকে দৈনিক এক ট্রাক ইলিশও ঢাকায় সরবরাহ করা যাচ্ছে না। যদিও সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ২৫ মেট্রিক টন করে ইলিশ সরবরাহ হয়েছিল এ ফিশারিঘাট থেকে। সাগরে হঠাৎ ইলিশ উধাও হওয়ায় হাজারো ইলিশ ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন।

মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে কক্সবাজার থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ ইলিশ উধাও হওয়ায় রপ্তানিতেও ভাটা পড়তে পারে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, ১২ সেপ্টেম্বরের আগে টানা এক মাস কক্সবাজার উপকূলে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়েছিল। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ইলিশের আহরণ কমে এসেছে।

মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে ফিশারিঘাটসহ টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়াসহ জেলার বিভিন্ন মৎস্যকেন্দ্র থেকে দৈনিক ২২৫ মেট্রিক টন ইলিশ ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২ দিনে সরবরাহ হয়েছে ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ইলিশ। আগস্ট মাসের শেষের ১৭ দিনে আহরণ হয়েছিল প্রায় ৬ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে সাগরে দুই দফার লঘুচাপ সৃষ্টি, কম বৃষ্টিতে দাবদাহ পরিস্থিতির কারণে গভীর সাগর থেকে ইলিশ উপকূলের কাছাকাছি আসতে পারছে না। টানা কয়েক দিন ভারী বৃষ্টি হলে গভীর সাগর থেকে দল বেঁধে ইলিশ উপকূলের দিকে আসতে পারে। তখন ট্রলারের জালে আবার ইলিশ ধরা পড়বে।

কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ ধরতে কক্সবাজারের ছোট-বড় প্রায় ছয় হাজার ট্রলার সাগরে অবস্থান করছে। প্রতিদিন শতাধিক ট্রলার ঘাটে ফিরছে খালি হাতে। কিছু ট্রলারে ইলিশ ধরা পড়ছে ৩০ থেকে ১১০টি করে। তাতে হতাশ জেলে ও ট্রলারমালিকেরা।

জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, গত বছর জেলায় ইলিশ আহরণ হয়েছিল ৩৯ হাজার ৩১৪ মেট্রিক টন। এবার ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০