এস এম রুবেল, কক্সবাজার: পর্যটন শহর কক্সবাজারের প্রধান সড়কগুলোয় জনদুর্ভোগ বাড়ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সড়কগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট লেগে থাকে। যার কারণে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে জনজীবন। অবশ্য সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন সড়কের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক নির্মাণ শেষে এই ভোগান্তি শেষ হয়ে স্বস্তি ফিরবে জেলাবাসীর মাঝে। তবে সাধারণ মানুষ বলছেন, সান্ত¡নার বাণী শুনিয়ে দায় সারেন দায়িত্বরতরা। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। মনগড়া নিয়মেই চলছে সড়কের যানবাহনগুলো।
ভুক্তভোগীরা জানান, হলিডে মোড় থেকে বাসটার্মিনাল পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়কটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৮ কোটি ৮১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এটি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারি সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে না। তবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) বলছে ইতোমধ্যে সড়কের ৮০-৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, বিকাল থেকেই শহরের বিলকিছ মার্কেট, পান বাজার রোড, হাসপাতাল সড়ক, গুনগাছতলা, টার্মিনাল, কলাতলি মোড় এলাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজট লেগে থাকে। এছাড়া নামে-বেনামে সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ গাড়ি স্টেশন। অন্যদিকে ফুটপাতের ওপর মোটরসাইকেল চালানো এবং পার্কিং করার বিষয়টি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ চালিত অবৈধ ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য বাড়ার কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করায় ইজিবাইক চালকদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয় পর্যটক ও স্থানীয়দের। এসব ইজিবাইক সড়কের ওপরই পার্কিং করা হয়।
শহরের বিলকিছ মার্কেট এলাকা থেকে শুরু করে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত প্রধান সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ঝুপড়ি দোকান। সড়কের ওপর ময়লার আবর্জনার স্তূপ, যত্রতত্র সিএনজি পার্কিং, সড়কের মাঝখানে ছোট বড় গর্ত, সড়ক দখল করে মালামাল ওঠানামার কাজ করা, ঢাকনা খোলা নালা, রাস্তার ধারে বৈদ্যুতিক খুঁটি রাখাসহ নানান কারণে প্রধান সড়কটি জনসাধারণের চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।
শহিদুল ইসলাম, আবদুল হান্নান ও মেহেদী হাসান নামের তিন পর্যটক জানান, বার্মিজ মার্কেটে বার্মিজ পণ্য ক্রয়ের জন্য এসেছেন। কিন্তু বৃষ্টি থাকায় প্রধান সড়কের ওপরই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ময়লা আবর্জনা রাস্তায় উঠে আসায় চলাচল করতে চরম অসুবিধায় পড়তে হয়েছে তাদের।
আসমা আকতার, শাহিনুল ইসলাম, ছাবের আলমসহ কয়েক শিক্ষার্থী জানান, যানজট ও সড়কের বেহাল দশার কারণে সঠিক সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছানো যায় না। রাস্তার মাঝে গর্ত থাকায় ঝুঁকি নিয়ে যানবাহনে চড়তে হয়। মোড়ে মোড়ে যানজট সৃষ্টি হলেও পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশের সেবা মিলছে না। যে কারণে দীর্ঘসময় যানজটে থাকতে হয়।
এদিকে সদর ট্রাফিক পুলিশের টিআই (প্রশাসন) আমজাদ হোসেন জানান, পর্যাপ্ত জনবল নেই তাদের। যা আছে তা দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, সড়কের ৪২টি পয়েন্টে দায়িত্ব পালনে জন্য ৪২ জন পুলিশ দরকার। কিন্তু ১২ জন পুলিশ দিয়েই কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে তাদের।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, সড়কের কাজ ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। কাজ শেষ হলে সড়কের বিশৃঙ্খলা দূর হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কক্সবাজার জেলা সভাপতি জসিম উদ্দিন কিশোর জানান, ফুটপাত দখল মুক্ত করা, অবৈধ টমটম নিয়ন্ত্রণে আনা, শহর থেকে গাড়ির কাউন্টার অন্যত্র সরানো, রাস্তার পাশ থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থানান্তর করাসহ সংশ্লিষ্টরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে শহরের প্রধান সড়কটি নিরাপদ করা সম্ভব। কিন্তু যুগ যুগ ধরে প্রভাবশালীদের কারণে এসব করা যায়নি।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. খিজির খান জানিয়েছেনÑশহরের প্রধান সড়কের কাজ দ্রুত করা হচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে সড়কটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হবে।