ক্রীড়া প্রতিবেদক: ঘরের মাঠে বরাবরই প্রতিপক্ষের জন্য শক্ত প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। কিন্তু সদ্য শেষ হওয়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। কোনো বিভাগেই ধারাবাহিকতার ছাপ রাখতে পারেনি স্বাগতিকরা। পরাজয়ের ব্যবধানটাও ছিল চোখে পড়ার মতো। তাই তো প্রশ্নটা ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে আসছে ঘুরে-ফিরে, আবারও কি কঠিন সময়ের মুখোমুখি বাংলাদেশের ক্রিকেট?
দল নির্বাচনে গত দুই মাস ধরে হতাশায় ভুগছেন নির্বাচকরা। তাই তো এ সময়ের মধ্যে ২৮ জন ক্রিকেটার খেলেছে জাতীয় দলে। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি মিলে অভিষেক হয়েছে ৭ জনের। কিন্তু ফলাফলের খাতা খুললে শূন্য ছাড়া কিছুই পাওয়া যাবে না। প্রধান নির্বাচকরা এটিতে বলেছিলেন ‘ক্লান্তি ঘোচানো’র কথা। ব্যাপারটা অবশ্য কেউই সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না।
নির্বাচকদের দল নির্বাচনে তড়িঘড়ি দেখলে মনে পড়ে আজ থেকে ১৮ বছর আগের কথা। সে সময় দলে কোনো খেলোয়াড় কখন ঢুকতেন আর কখন বের হতেন তা হিসাব রাখায় অনেকটা দায় হতে যেত ক্রিকেটপ্রেমীদের। বাংলদেশ ক্রিকেট কী আবারও সে যুগে ফিরে যাচ্ছে না তো?
অথচ ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে তরুণ একটা দল নিয়েও মাশরাফি বিন মুর্তজা অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড থেকে দারুণ সাফল্য নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। সে সময় তাসকিন আহমেদ, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমানদের পেয়েছিল এ দেশের ক্রিকেট। পরে মোস্তাফিজুর রহমানের মতো সম্ভাবনাময় একজন পেসারও হয়েছিল নতুন সংযোজন। এরপর থেকেই তাদের সঙ্গে নিয়ে যে কোনো কন্ডিশনে মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ, সাকিব-আল হাসানরা হয়ে উঠেছিলেন শক্তিশালী দল। কিন্তু গত দুই মাস ধরে হঠাৎ কী হলো এ দেশের ক্রিকেটে, যে এক সঙ্গে ৬-৭ জন ক্রিকেটারকে অভিষেক করাতে হলো? উত্তরটা হয়তো নির্বাচকরাই দিতে পারবেন ভালো।
আগামী মাসেই নিদিহাস ট্রফিতে অংশ নিতে শ্রীলঙ্কার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ। যেখানে টাইগারদের অন্য প্রতিপক্ষ ভারত। নিশ্চয় আরও কঠিন অবস্থার মুখে পড়তে যাচ্ছে টাইগাররা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও এর মধ্যে নিজেদের তৈরি করার সময় পাচ্ছে লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা। কিন্তু প্রশ্নটা যে থেকেই যাচ্ছে, কতটুকু পারবেন তারা।
খেলাধুলার ক্ষেত্রে কথাটা প্রায়ই শোনা যায়, যে দেশের ঘরোয়া লিগ যত শক্তিশালী, ঠিক জাতীয় দলও ততটাই শক্তিশালী। এর প্রমাণটা পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের দিকে তাকালে। কিন্তু আমাদের দেশে সেদিকে খুব একটা নজর নেই ক্রিকেট বোর্ডের। লোক দেখানো মতো বিসিবি প্রতি বছরই বিভিন্ন ঘরোয়া লিগ আয়োজন করে আসছে। তবে সেখান থেকে সাড়া জাগিয়ে কোনো উঠতি ক্রিকেটার আসছে না উঠে। তার মধ্যে আবারও যে দু-একজন পারফর্ম করে, তাকেই হুট করে জাতীয় দলে সুযোগ করে দেন নির্বাচক। যে কারণে এদেশের ক্রিকেট এগোচ্ছে না সামনে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট অতিমাত্রায় ফলনির্ভর। যে কারণে কঠিন সময়ের মুখোমুখি টাইগাররা। আসলে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে মনোযোগী নয়। কোনো ক্লাবই নতুন খেলোয়াড় তৈরিতে সামনে এগিয়ে আসছে না ঠিকমতো। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যারা ভালো করে, তারা সে পুরোনো মুখই।
অনেক আশা নিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) আয়োজন করেছিল বিসিবি। কিন্তু সেখানে বিদেশি ক্রিকেটারদের দাপটে ঠিকমতো সুযোগ হয়ে উঠে না দেশি ক্রিকেটারদের। যে কারণে নিজেদের প্রমাণও করতে পারছে না তরুণরা। যার ফলটা জাতীয় দলেও পড়বে দ্রুত।
অনেকদিন ধরেই প্রশ্নটা ছিল, মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পর বাংলাদেশের হাল ধরবেন কারা। কিন্তু বর্তমান ক্রিকেট কাঠামোর যে অবস্থা, তা থেকে দ্রুত বের না হয়ে এলে উত্তরটা হয়তো অজানাই থেকে যাবে ক্রিকেটপ্রেমীদের। নিশ্চয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এ দিকে নজর দেবে।