নিজস্ব প্রতিবেদক: কঠোর মুদ্রানীতি প্রয়োগের মাধ্যম মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও দীর্ঘ সময় ধরে এ কৌশল ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারেনি, তবুও আরও কঠোর নীতি প্রয়োগ করতে চাচ্ছেন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। সংকোচনমূলক ধারা অব্যাহত রেখে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে মুদ্রানীতি গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ডে পাস হয়েছে, যা আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, মুদ্রা কর্তৃপক্ষের নীতি সুদহার অপরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এটি মুদ্রানীতির একটি প্রধান উপাদান, কারণ এটিকে আরও বাড়ানোর খুব কম সুযোগ রয়েছে।
তারা বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে পলিসি রেট বা রেপো রেট বারবার বাড়িয়েছে, যা দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশে। যদি এটি আরও বৃদ্ধি পায় তবে এটি জিডিপি (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) বৃদ্ধির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে, কারণ ঋণের হারের সীমা প্রত্যাহারের পর ভোক্তা পর্যায়ে ঋণের হার ১৫ শতাংশ অতিক্রম করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটি ১৪ জুলাই তাদের সভায় এমপিএস চূড়ান্ত করেছে, যা গতকাল বিবির পরিচালনা পর্ষদের সভায় আলোচনা করা হয়েছিল। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিবির গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। বৈঠক সূত্র জানায়, বোর্ড সদস্যরা দেশের চলমান চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে আলোচনা করেন।
২০২৩-২৪ অর্থবছর বাজেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশে রাখার ঘোষণা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে গত জুন শেষে গড় মূল্যস্ফীতি ঠেকেছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে। চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে সীমিত রাখার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। আর এজন্য ডলার বিক্রির মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা উত্তোলনের পাশাপাশি সরকারকে টাকা ছাপিয়ে ধার দেয়া বন্ধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অবশ্য সংকটে থাকা কয়েকটি ব্যাংককে নানা উপায়ে ধার দেয়ায় মুদ্রা সরবরাহ কাক্সিক্ষত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে থাকছে না।
এর অর্থ হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি এটিকে নামিয়ে আনার জন্য খুব কমই করতে পারে যদিও এটি দেরিতে হলেও বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ শুরু করেছে। সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ভোক্তা মূল্যবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে রোধ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করে, কঠোর আর্থিক অবস্থান সরকারের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। এজন্য ধারাবাহিকভাবে এবারও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি হবে। যদিও শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য সূচকও কাজে লাগাতে হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরই) আহসান মনসুর বলেন, আগামী মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে টাকাকে আকর্ষণীয় করতে হবে। সেটা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
সেইসঙ্গে নীতি সুদহার আরও বাড়াতে হবে। সেটা বাড়িয়ে ১০ করলে ভালো হয়। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকগুলোকে যে তারল্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে, সেটি বন্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত, এখন প্রবাসী আয়ে যে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে, তাও বন্ধ করে দিতে হবে। সেখানে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা সরকারের বেঁচে যাবে, যা শিক্ষা বা স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করতে পারবে। কারণ ডলারের দাম বাজারভিত্তিক হয়ে গেছে। এসব প্রণোদনা খাচ্ছে দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান, যার সঙ্গে যুক্ত স্বার্থান্বেষী মহল। এটা প্রকৃত রেমিটারদের কোনো উপকারে আসছে না। এই উদ্যোগগুলো নিলেই মূল্যস্ফীতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।