Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 9:56 am

কথায় ‘চিঁড়ে ভিজবে না’, মানুষ বুঝে গেছে: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ নেতারা ‘দিশেহারা’ হয়ে ২১ আগস্ট হামলায় বিএনপিকে জড়াচ্ছে বলে দাবি করেছেন দলটির নেতা রুহুল কবির রিজভী। এসব কথা বলে মানুষকে চিঁড়ে ভিজানো যাবে না। মানুষ যা বোঝার তা বুঝে গেছে। আপনি ক্ষমতা দিয়ে, দুঃশাসন দিয়ে এসব কথা বলছেন, বলেছেন তিনি।

বিএনপি আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো ওই হামলায় দোষী সাব্যস্ত করে আদালত যাবজ্জীন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানকে। বিএনপির অভিযোগ, ওই মামলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারেকসহ বিএনপির অন্য নেতাদের আসামি করা হয়।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, শেখ হাসিনাকে খুনের এ চক্রান্তে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব জড়িত ছিল। গতকাল এক আলোচনা সভায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আওয়ামী লীগ নেতাদের কথার জবাবে বলেন, ‘তারা কাল থেকে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা নিয়ে মিথ্যাচার করছে। অল্প-স্বল্প নয়, কোরাস গাইছেন। একটা কথা আছে, হঠাৎ যদি একটা গরিব মানুষ অনেক টাকা পেয়ে যায়, সে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, পাগল হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নেতারা এত ক্ষমতা পেয়েছেন, এখন দিশেহারা হয়ে গেছে। কী করবে তারা? এজন্য এখন একটু হাফ পাগল হয়ে গেছে, আবোল-তাবোল কথা বলে বেড়াচ্ছে।’

বিএনপিকে ফাঁসাতে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের ফল বলে দাবি করেন রিজভী, যে হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মী নিহত হন, নষ্ট হয় শেখ হাসিনার শ্রবণশক্তি।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফল হচ্ছে ২১ আগস্ট বোমা হামলা এবং তারপরে বিচারিক প্রক্রিয়া। আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে ঘটনা ঘটিয়েছে, সেজন্য তারা ক্ষমতায় এসে ওই মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী তা বাস্তবায়নের জন্য তাদের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করিয়েছে। ১/১১’র সেনা সমর্থিত সরকার আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল। সেই সরকার কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্যান্য নেতার নামে অভিযোগপত্র দেয়নি। ক্ষমতায় এসে উনি (শেখ হাসিনা) নতুন করে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন।’

বিচার নিয়ে রিজভী বলেন, ‘বিচারিক প্রক্রিয়া আপনারা দেখছেন। সই নাই, স্বাক্ষর নাই, কোনো কিছু নাই, তারপরও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে রেখেছে। ন্যায়বিচার তো দূরের তারার মতো দেখতে হয়। প্রধান বিচারপতি (এসকে সিনহা) আপনার সব কথা শুনলেন, যখন বিরোধ হলো একবারে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে দেশছাড়া করে দিলেন, এখন তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। শেখ হাসিনা যা চান, তার বাইরে কোনো বিচার হয় না।’

বিএনপি ‘দুর্নীতির বিষবৃক্ষ’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, ‘ফরিদপুরের ছাত্রলীগের সভাপতি শামীম কোটি কোটি টাকা পাচার করল। ওটাও কি বিএনপির দুর্নীতির ফলশ্রুতি। আমরা যদি আওয়ামী লীগকে একটা ঘর ধরি, সেই ঘরের যারা বসবাস করেন তাদের ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে বের হয় পাপুল, তাদের সুটকেস থেকে বের হয় মো. সাহেদ, তাদের আলমারি থেকে বের হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা। সব তো আওয়ামী লীগের ঘর থেকে বেরুচ্ছে।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘আপনার শাসনামলের সন্ত্রাসের বিষবৃক্ষের কথা তো বলেননি, গুমের বিষবৃক্ষ এখানে রোপণ করেছেন তার তো কথা বলেননি।’

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুসহ সম্প্রতি প্রয়াত নেতাকর্মীদের স্মরণে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন রিজভী।

মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাবের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবদুর রহিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির হাবিব উন নবী খান সোহেল, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, রফিকুল ইসলাম, এমএ খালেক, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল বক্তব্য রাখেন।

আলোচনার পর মিলাদ এবং প্রয়াত নেতাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন উলামা দলের সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম তালুকদার।