Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 5:44 pm

কনকনে ঠাণ্ডায় জবুথবু যশোর

প্রতিনিধি, যশোর: যশোরাঞ্চলে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। কনকনে ঠাণ্ডায় জবুথবু হয়ে পড়েছে জেলার মানুষ। গতকাল সকাল ৬টায় যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সারা দিন জেলার কোথাও সূর্যের মুখ দেখা মেলেনি। আবহাওয়া অফিস বলছে, হিমালয়ান হিমবায়ুর ফলে তাপমাত্রার পারদ নিচের দিকে নামছে। সঙ্গে ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত হয়ে থাকছে প্রকৃতি। দিনের বেলাতেও ঝিরঝির শিশির বৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষ।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিন এ তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া অনেকে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। দিনের বেলাতেও সড়কে আলো জ্বেলে চলছে যানবাহন। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে নষ্ট হচ্ছে বোরোর বীজতলা ও সবজিক্ষেত। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। চরম দুর্ভোগে সব শ্রেণির মানুষ।

যশোর বিমানবাহিনীর আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, যশোরসহ দক্ষিণের জেলাগুলোতে মৃদু শৈতপ্রবাহ বিরাজ করছে। গত এক সপ্তাহ ধরে যশোরের তাপমাত্রা নিম্নমুখী। রোববার থেকে তাপমাত্রা নামতে শুরু করেছে। রোববার  সকালে যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেটি গতকাল আরও ২ দশমিক কমে রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতেই কুয়াশাছন্ন হয়ে পড়ছে পুরো এলাকা; দিনের বেলাতেও দৃষ্টিসীমা ১০০ মিটারের ভেতরে থাকছে। এ কারণে দিনে গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে সড়ক-মহাসড়কের সব ধরনের যানবাহন। সেই সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে শীত আরও বাড়ছে। আগামী কয়েক দিন এ ধরনের তাপমাত্রা বিরাজ করতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।

শীতের কারণে সবচেয়ে অসুবিধায় পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। যত ঠাণ্ডাই অনুভূত হোক না কেন, জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিদিন ভোরে তাদের রাস্তায় বের হতে হচ্ছে। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা গরম পোশাক গায়ে চাপিয়ে শীত ঠেকাতে পারছে বটে কিন্তু নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূলদের কষ্টের সীমা থাকছে না। অন্যান্য বছরে তীব্র শীতের সময়ে জেলায় শীতবস্ত্র বিতরণের চিত্র দেখা গেলেও এ বছর এর ছিটেফোটা দেখা মিলছে না। যে কারণে আক্ষেপ থেকে যাচ্ছে ছিন্নমূল অসহায় মানুষের। সঙ্গে ভোগান্তি বাড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের।

শহরের উপশহর খাজুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কথা হয় আব্দুর রহমান নামে এক ইজিবাইক চালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, শীত পড়লেও কিছু করার নেই। জীবিকার তাগিদে বের হতে হয়েছে। শহরে লোকজনের সংখ্যা কম হওয়ায় ভাড়া নেই বলে তিনি জানান।

পাশেই কথা হয় সবদুল হোসেন নামে আরেক রিকশা চালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে এই সময়ে শহরে বিভিন্ন এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ হলেও এবার তেমন কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা গরিব মানুষ, এই শীতে প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছি। তিনি বলেন, শীতের কারণে মোটেও বের হওয়া যাচ্ছে না। তারপরও সংসার চালাতে রিকশা নিয়ে বের হতে হয়েছে। তিনি বলেন, সকাল থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ১০০ টাকা আয় করেছি। অন্যান্য দিন এ সময়ে ৩ থেকে ৪শ টাকা আয় করতে পারতাম। শীতের কারণে মানুষ বের হচ্ছে না।

সকালের দিকে ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে যানবাহন চলাচলে সমস্যা দেখা দেয়। দুর্ঘটনা এড়াতে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যান চলাচল করতে দেখা যায়। চালকরা জানান বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

তীব্র ঠাণ্ডা ও ঘন কুয়াশায় যখন বিপর্যস্ত এ অঞ্চলের জনজীবন, তখনই এ অঞ্চলের মাঠে মাঠে কৃষক বোরো আবাদ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলার বিস্তীর্র্ণ মাঠে ৭৫০০ হেক্টর জমিতে বোরোর বীজতলা রয়েছে। এসব বীজতলা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সঙ্গে আলুসহ বিভিন্ন সবজিও হুমকিতে পড়েছে বলে কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, শীতের কারণে বীজতলা হুমকিতে থাকলেও এই মুহূর্তে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার সমস্যা নেই। কারণ যশোরাঞ্চলে যে বীজতলা রয়েছে তা অনেক বড় হয়ে গেছে। এগুলো ঘন কুয়াশার কারণে রং বদলালেও নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম। তারপরও আমরা কৃষকদের বীজতলা পলিথিন দিয়ে রাতে ঢেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। এর বাইরে দিনের বেলায় ক্ষেত থেকে ঠাণ্ডা পানি বের করে দিয়ে সেচ দেয়ার কথা বলছি।

এদিকে, তীব্র ঠাণ্ডায় হাসপাতালগুলো বেড়েছে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা। যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, হাসপাতালে প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা হাসপাতালে আসছেন। এ অবস্থায় শিশুদের গরম কাপড়ে ঢেকে রাখা ও গরম খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

চিকিৎসকদের মতে ঠাণ্ডায় শিশুরা ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। এ সময় বাইরে বের না হওয়ায় ভালো। জরুরি প্রয়োজনে বের হলে গরম কাপড় ও মাস্ক পরতে হবে। বাসি খাবার মোটেও খাওয়া যাবে না। কুসুম গরম পানি পান ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়ার জন্য গুরুত্ব দেন চিকিৎসকরা।