কপ-২৭ সম্মেলনে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি: পরিবেশমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, কপ-২৭ সম্মেলনে আমরা কিছু আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। এটি (জলবায়ু পরিবর্তন) একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা; সেদিক থেকে আন্তর্জাতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। অংশগ্রহণকারী সবাই একটি ঐকমত্যে পৌঁছেছে। সে কারণেই আমরা এ সম্মেলনের সাফল্য দেখতে পাব বলে আশা করি। এখানে জলবায়ু-সম্পর্কিত প্রায় সব বিষয়েই আলোচনা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সব দেশের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে কপ-২৭-এর প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী।

সম্প্রতি মিসরের শারম-আল-শেখে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৭তম জলবায়ু সম্মেলন, যার আনুষ্ঠানিক নাম কনফারেন্স অব পার্টিজ-২৭ বা কপ-২৭। এবারের এ সম্মেলনের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। জলবায়ু ক্ষতিপূরণ তহবিল চালুর বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের ঐকমত্যকে এবারের সম্মেলনের বড় প্রাপ্তি দাবি করা হলেও এ তহবিলের অর্থায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট দাবি উত্থাপন করেছে।

ছায়া সংসদে সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জলবায়ু ঝুঁকির কারণে বিশ্বে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বিগত ৪০ বছরে এ দেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ১২ বিলিয়ন ডলার। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর আমাদের জিডিপিতে ক্ষতির পরিমাণ ১ দশমিক ৩ শতাংশ। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ছয় কোটি ৮০ লাখ লোক জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার এবারের জলবায়ু সম্মেলনে ২৭ বছর মেয়াদি জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে, যা বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে ২৩০ বিলিয়ন ডলার। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১০ দশমিক ৩ মিলিয়ন টন ধান উৎপাদন বেশি হবে। ফলে দেশে দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ৪০ লাখ প্রান্তিক পরিবারের জীবিকা নিরাপত্তা সুরক্ষিত হবে। পরিবেশবান্ধব যানবাহন চালুর কারণে পরিবহন খাতে ব্যয় কমবে ১০ শতাংশ। প্রায় দেড় কোটি লোক অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে।

অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বাংলাদেশে জলবায়ু ঝুঁকি নিরসনের লক্ষ্যে আট দফা সুপারিশ উপস্থাপন করে। এগুলো হলো জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগীদের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তাসহ দেশীয় অর্থায়ন নিশ্চিত করা; আগামী পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা; জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার আলোকে বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করা; জলবায়ু অর্থায়নে প্রাইভেট সেক্টরকে সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে কর্মকৌশল নির্ধারণ করা; জলবায়ু তহবিলের অর্থায়নে গৃহীত প্রকল্পে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা; গ্রিন টেকনোলজি ব্যবহারের কারণে শ্রমিকের কর্মসংস্থান যেন সংকুচিত না হয় সেই ব্যবস্থা নেয়া; জলবায়ু ঝুঁকি নিরসনে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রকল্প চালু করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে গবেষণা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি ও উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণা কাজে সম্পৃক্ত করা।

প্রতিযোগিতায় সরকারি দল হিসেবে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি এবং বিরোধী দল হিসেবে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ অংশ নেয়। প্রতিযোগিতার শেষে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দলসহ বিজয়ীদের মাঝে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেয়া হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০