প্রতিনিধি, নোয়াখালী: নোয়াখালীর কবিরহাটের নলুয়ায় ২ মে ভোরে অসহায় ও হতদরিদ্র্য কৃষকের বাড়ি, ঘর দখলের চেষ্টা ও হামলার ভয়াবহ সন্ত্রাসী চিত্র আজো যেন তাদের চোখে ভাসছে। ওই দিনের ঘটনার কথা মনে ওঠলে কারো বুকে পানি থাকে না। এর আগে রাতের আঁধারে সন্ত্রাসীরা কৃষকের বাড়ি দখল, উচ্ছেদ ও লুটপাট করে।
এসময় বৃদ্ধ ও মহিলাসহ ৫ জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। এ নিয়ে মামলা হলেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। তবে এতে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নাফ মুনাফের ইন্ধনে এ সন্ত্রাসী হামলা চালানো এবং পুলিশ আসামী ধরছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
## মামলার পরও অজ্ঞাত কারণ আসামি ধরছে না পুলিশ
## বাড়ি-সম্পত্তি দখল করতে ভুয়া মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ
অপরদিকে, জোরদার দলের প্রধান নুর মোহাম্মদ আরো বেশ কিছু অসহায় ও চরম দরিদ্র্য পরিবারকে ফের উৎখাত করার হুমকি দেয়ায় প্রতিটি মুহুর্ত কাটছে তাদের দীর্ঘশ্বাসের। কথাগুলো জানালেন বিধবা ফাতেমা, পেয়ারা বেগমসহ শতাধিক নারী পুরুষ।
আরো পড়ুন-কবিরহাটে রাতের আঁধারে কৃষকের বাড়ি দখল, আহত-৬
আরো পড়ুন-কবিরহাটে সন্ত্রাসী কায়দায় কৃষকের বাড়ি দখল, মামলা হলেও গ্রেফতার নেই
বিষন্ন বেদনার বদনে ফাতেমা বললেন, খোদার আরশের নিচে আমাদের আর কোন জায়গা নেই। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফাতেমা জানান, গার্মেন্টসে কাজ করে কষ্টার্জিত অর্থে এই জমি কিনে ঘর-বাড়ি করেছি। এখন গ্রীস প্রবাসী নুর মোহাম্মদ অন্যায় ও জোর জবরে প্রভাবে ওই জমি নিজের বলে দাবি করছেন।
বিধবার ফাতেমা অভিযোগ করেন, রোজার পরই আমাদের বাড়ি ঘর ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে নুর মোহাম্মদ ও তার সন্ত্রাসীরা। তিনি আরো বলেন, এখান থেকে উচ্ছেদ করলে বিষ খেয়ে মরা ছাড়া আর বিকল্প কোন পথ খোলা নেই তার।
একই কথা জানালেন পেয়ারা বেগম। জানান, ইতোপূর্বে নুর মোহাম্মদরা প্রতিবেশি মোজাম্মেলদের মারধোর করে বাড়ি-ঘর তছনছ করে দিয়েছে। নুর মোহাম্মদ কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ায় কেহ তার অন্যায় ও জোর দখলের বিরুদ্ধে সাহস করে সত্য কথা বলেননা।
আহত গ্রাম পুলিশ রহিম অভিযোগ করেন, গত ২মে সংঘটিত হামলার বিচার চেয়ে কবিরহাট থানায় মামলা দিয়েছেন। তবে পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করেনি। অবশ্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর্জা মো. হাছান বলেন, দু’পক্ষেরই মামলা রয়েছে। আপাতত উভয় পক্ষকে শান্ত থাকতে বলা হয়েছে।
২ মে জেলার কবিরহাট উপজেলার ৩নং ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। সংঘটিত ঘটনায় গুরুতর আহত বৃদ্ধ আবুল কালাম (৯৯), মোজাম্মেল হোসেন (৬৫) ও তার স্ত্রী হালিমা খাতুন (৫৫) এবং গ্রাম পুলিশ আবদুর রহিম (৪৮) উপস্থিত হয়ে সংঘটিত সংশ্লিষ্ট ঘটনা বিষয়ে সাংবাদিকদের পূর্বাপর বর্ণনা দেন।
আহতরা অভিযোগ করেন, তাদের মালিকীয় ও ভোগ দখলীয় জমিতে আদালতের ১৪৪ ধারা অমান্য করে গ্রীস প্রবাসী নুর মোহাম্মদ গংরা টাকার জোরে বসত বাড়ি ও ঘরে হামলা করেন। এ সময় বসত বাড়ি ও ঘরে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে তারা বাড়ি দখলের চেষ্টা করে।
আবুল কালাম অভিযোগ করেন, নুর মোহাম্মদের অস্ত্রধারীদের আঘাতে হতদরিদ্র্য কৃষক মোজাম্মেলসহ ৬ জন গুরুতর আহত হয়।
ভুক্তভোগীরা দাবি করেন, নলুয়া মৌজায় বিভিন্ন খরিদীয় দলিল মূলে ৭ একর ৬২ শতক জমির মালিক ছিলেন এ কে এম নিজাম উদ্দিন মাষ্টার। তিনি মৃত্যুকালীন নি:সন্তান ছিলেন। ফলে ওয়ারিশ সূত্রে এ সম্পত্তির মালিক হন তার মা, এক ভাই ও বোন।
আহত কৃষক মোজাম্মেল ওই জমির মালিক এ কে এম নিজাম উদ্দিন মাষ্টারের বোন কামরুন নাহারের কাছ থেকে ১ একর ৫৪ শতক জমি কিনে নেন। পরে ওই জমিতে বাড়ি-ঘর নিমার্ণ করে ভোাগ দখল ও চাষাবাদ করে আসছিলেন।
কিন্তু প্রবাসী নুর মোহাম্মদ ও তার পরিবারের লোকজন দীর্ঘদিন এ জমি দখল করে রাখার চেষ্টা করে। এ নিয়ে আদালতে মামলা হয়। আদালত এ জমির উপর ১৮৯৮ সালের ফৌজধারী আইন অনুযায়ী ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে।
তবুও আইনের প্রতি কোনরুপ তোয়াক্কা না করে গ্রীস প্রবাসী নুর আহম্মদের নেতৃত্বে আবুল কাসেম, নুরুজ্জামান বাটু, ফয়েজ আহম্মদ, তোফায়েল আহম্মদসহ ১০০ থেকে ১৫০ জন বহিরাগত সন্ত্রাসী অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে রাতের আঁধারে অসহায়, নিরীহ ও হতদরিদ্র্য মোজাম্মেল হোসেনের বসত বাড়িতে হামলা চালায়। এ বিষয়ে আইনজীবি জামাল উদ্দিন ভূঁঞা বলেন, ১৪৪ অমান্য করার দায়ে পুলিশই নুর মোহাম্মদদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে পারে।
এ দিন ভোর বেলায় নুর মোহাম্মদের নেতৃর্ত্বে সংঘবদ্ধদল মোজাম্মেলের বসত ঘরের ছাল, দরজা, জানালা, বেড়া কেটে নিয়ে যায়। তারা বসত ঘরের প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে পুরো ঘরের নিশানা মুছে দেয়। এ সময় ওই পরিবারের আবুল কালাম, মোজাম্মেল হোসেন, হালিমাসহ অপরাপরদের বেদড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে রক্তাক্ত করে পৈশাচিক কান্ড চালায়। তবে এ বিষয়ে নুর মোহাম্মদ জানান, বিবাদমান জমির কাগজিক মালিক তিনি।