কবিরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নুরুজ্জামানের কাছে জিম্মি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবসরপ্রাপ্ত পরিসংখ্যানবিদ মো. নুরুজ্জামানের (৬৩) কাছে জিম্মির অভিযোগ করেছেন ওই হাসপাতালটির কর্মকর্তা-কর্মচারী। ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য করে আসলেও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় অবসরে গিয়েও তার দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে হাসপাতালটির স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকসহ ২৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ নুরুজ্জামান গত ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অবসরে যান। কাগজে কলমে অবসরে গেলেও চেয়ার ছাড়েননি তিনি। দীর্ঘ ২ বছর ধরে তিনি যথারীতি কবিরহাট হাসপাতালে তার চেয়ারে বসে দিব্যি দাপ্তরিক কাজ করে যাচ্ছেন।

নিয়ম অনুযায়ী অবসরে যাওয়ার তারিখ থেকে কোনো সরকারি কর্মচারী দাপ্তরিক ফাইলে কিংবা বিল ভাউচার দেখার কোনো ক্ষমতা রাখেন না। কিন্তু নুরুজ্জামান ওই নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গত ২ বছর যাবত হাসপাতালের বিভিন্ন বিল ভাউচার দেখে আসছেন এবং অবৈধভাবে ভুয়া বিল করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জোর প্রয়োগ করে তাতে স্বাক্ষর করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তার বিরুদ্ধে হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে ট্রেনিং ভাতা, উৎসব ভাতা ও চিত্তবিনোদন ভাতা উত্তোলন করতে ঘুষ আদায়, ভুয়া বিল ভাউচার করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করা, সরকারি ওষুধ চুরিসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। নুরুজ্জামানের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী হাসপাতালের ক্যাশিয়ার জাহিদুর রহমান সুমন।

অভিযোগে আরও জানা যায়, নুরুজ্জামানের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ইন্ধন দাতা ক্যাশিয়ার জাহিদুর রহমান সুমন নুরুজ্জামানের অবৈধ আয়ের একটা অংশ পেয়ে থাকেন। নুরুজ্জামান দাবি করেন অবসরে গেলেও জাহিদুর রহমান সুমনের অনুরোধ ও সহযোগিতার জন্য তিনি হাসপাতালে আসেন। অবশ্য জাহিদুর রহমান সুমন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ মো. নুরুজ্জামান ২০০৯ সালে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত থাকা অবস্থায় সরকারি ওষুধ চুরির অভিযোগে শাস্তিমূলকভাবে জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি হন। সেখানেও তিনি দুর্নীতি শুরু করে ধরা পড়ে মোটা অঙ্কের টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে ৮ বছর আগে কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি হয়ে আসেন। এখানে যোগদান করেই তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ঘুষ বাণিজ্য, অনিয়ম ও অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন নুরুজ্জামান।

সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় মাস আগে হাসপাতালের ১৮ জন স্বাস্থ্য সহকারী তাদের শান্তি বিনোদন ভাতা (রেস্ট এন্ড রিক্রেইশন) ভাতা উত্তোলন করতে গেলে নুরুজ্জামান অফিস খরচের কথা বলে জনপ্রতি এক হাজার ২৮০ টাকা করে জোর পূর্বক সবার থেকে আদায় করেন। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের প্রশিক্ষণ ভাতা, উৎসব ভাতাসহ যে কোনো ভাতা উত্তোলন করতে ২০-৩০ শতাংশ হারে উৎকোচ দিতে হয় নুরুজ্জামানকে। যারা তার চাহিদা মতো টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ কিংবা প্রতিবাদ করেন তাদের সাথে অশালীন ভাষা ব্যবহার করার ও অভিযোগও রয়েছে নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে যতগুলো কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ওই সকল কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি’দের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে যেতে ও প্রশিক্ষণ ভাতা উত্তোলন করতে অফিস খরচ, এজি (হিসাব রক্ষণ) অফিসের নাম ব্যবহার করে ৩০-৪০ শতাংশ হারে টাকা কর্তন করে রাখেন নুরুজ্জামান। গত ২ মাস আগে কবিরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সদর উপজেলায় বদলি হয়ে যাওয়া স্বাস্থ্য সহকারী গোলাম কাদের তার এলপিসি নিতে তার কাছ থেকে ১ হাজার টাকা আদায় করেন নুরুজ্জামান।

হাসপাতালের কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আরও বলেন, নুরুজ্জামান গত ২ বছর আগে অবসরে গেলেও সরকারি চাকরি বিধি ভঙ্গ করে আগের মতই অফিসের ফাইল পত্রে ও বিল ভাউচারে হস্তক্ষেপ করে আসছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিম্মি করে অন্যায়ভাবে টাকা আদায় করছেন। এছাড়াও হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ক্ষুদ্র মেরামত ও ফুল বাগানের পরিচর্যার জন্য বরাদ্দের টাকা বছরের পর বছর ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করছেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা স্বীকার করে বলেন, তিনি দুই বছর আগে চাকরি থেকে অবসরে গেলেও নিয়মিত কবিরহাট হাসপাতালে অফিসে করে আসছেন। গত ডিসেম্বর মাসে সিভিল সার্জন কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে গিয়ে নুরুজ্জামানকে অফিসে আসতে নিষেধ করে আসেন এবং এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়ে আসেন। সিভিল সার্জনের এ নির্দেশ অমান্য করে তিনি হাসপাতালে এসে তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে নুরুজ্জামানের সাথে কথা বললে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অবসরে যাওয়ার পর হাসপাতালে আসাটা সম্পূর্ণ অবৈধ, এটা আমার অন্যায় হয়েছে। তবে হাসপাতালে কর্মচারী সংকট থাকায় তিনি ক্যাশিয়ার জাহিদুর রহমানের নির্দেশে হাসপাতালে এসে দাপ্তরিক কাজে সহযোগিতা করেন মাত্র। কারো কাছ থেকে টাকা পয়সা নেন না বলে দাবি করেন তিনি।

কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, ৫০ শয্যা হাসপাতালটিতে পর্যাপ্ত জনবল নেই। এছাড়া হাসপাতালের প্রধান সহকারী আব্দুর রহিম কাজে পারদর্শী না হওয়ায় নুরুজ্জামানকে দিয়ে সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করানো হচ্ছে। তবে নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তিনিও পেয়েছেন বলে জানান। তাকে অফিসে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. মমিনুর রহমান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত পরিসংখ্যানবিদ নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়ার পর অফিসিয়ালই চিঠি দিয়ে তাকে হাসপাতালে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এরপরও যদি তিনি হাসপাতালে গিয়ে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সূত্র-সময় টিভি

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০