Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 3:56 am

কভিডকালীন মাতৃস্বাস্থ্য প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

সানজিদা আমিন: কভিড অতিমারির বিস্তারে দেশের স্বাস্থ্য পরিসেবার বেহাল দশায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই এর শিকার হচ্ছেন। তবে নারীদের অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। কভিডে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মধ্যে আছেন গর্ভধারণকারী মায়েরা। আমাদের দেশে প্রথমবার গর্ভধারণ করা বেশিরভাগ মা-ই কিশোরী। মা হতে গিয়ে তাদের যে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে হয়, তা পরিবারের অন্য সদস্যরা ভাবেন না। কভিড ও লকডাউনের কারণে নি¤œ আয়ের পরিবারগুলোতে মাতৃস্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে। কভিডকালে মায়েদের সেবা কেন্দ্রে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা আরও বেড়েছে। এ সময়ে যোগ হয়েছে বাল্যবিয়ের বাড়তি ঝোঁক। অল্প বয়সে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত মায়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)২০২১ সালের ৬ মে এক প্রতিবেদনে বলেছে, এপ্রিল মাসে দেশে নতুন করে গর্ভধারণ করেছেন ২৪ লাখ নারী। সংস্থাটির আশঙ্কা কভিডকালে জন্মকালীন পরিচর্যা এবং অন্তঃসত্ত্বা মা ও শিশুর জীবন রক্ষার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ফেরদৌসী সুলতানা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাড়িতে কাজের চাপ নারীকে সামলাতে হচ্ছে। বাসায় কভিড রোগী থাকলে নারীদের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকছে। আর নারী আক্রান্ত হওয়ার পর তার যতœ কে করবে, সেটা একটা বড় সমস্যা। অনেকের স্বামী প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছেন। অনেকেই কাজকর্ম হারিয়ে বাড়িতে আছেন। তারা পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী কতটুকু পাচ্ছেন, সেটা একটা প্রশ্ন। সামনে বড় সমস্যা হতে পারে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য। এই লকডাউনে অনেকে গর্ভধারণ করেছেন। এখন এসব মায়ের প্রসব পূর্ব, প্রসবের সময় এবং পরবর্তী সময়ে যত্নের বিষয়গুলো চিন্তায় রাখতে হবে। আয় কমে যাওয়ার কারণে সৃষ্ট হবে অপুষ্টি সমস্যা। নি¤œ আয়ের পরিবারের মা ও শিশুর অপুষ্টি বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। অপুষ্টি পঙ্গুত্ব থেকে শুরু করে আরও অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে।

নারী ও কিশোরীদের ওপর কভিডকালীন প্রভাব কেমন, তা নিয়ে সমীক্ষা করেছে ব্র্যাক এর জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি বিভাগ। ২০২১ সালের ২৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল এ জরিপ চলে। ব্র্যাক ১১টি জেলায় তাদের কর্ম এলাকার ৫৫৭ জন নারী-পুরুষের ওপর এ জরিপ করে। জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই নারী। দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ পুরুষ ও ৮০ শতাংশ নারী কভিডের জন্য সতর্কতামূলক বার্তা পেয়েছেন। কিন্তু সুরক্ষা সামগ্রীগুলো পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর চেয়ে পুরুষ অনেক এগিয়ে।

কভিড-১৯ বাংলাদেশ: র‌্যাপিড জেন্ডার অ্যানালাইসিস গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ২০২১ সালের মে মাসে। বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বলছে, লকডাউনের সারাবিশ্বে নারী নির্যাতন, বিশেষ করে পারিবারিক নারী নির্যাতন বেড়েছে। বেসরকারি সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এম জে এফ) ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে দেশে ২৭টি জেলায় নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপ অনুসারে ২৭টি জেলায় এপ্রিল মাসে ৪ হাজার ২৪৯ জন নারী এবং ৪৫৬টি শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এ ধরনের সহিংসতায় নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। অথচ একজন গর্ভবতী মা গর্ভধারণের পর থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া তার অধিকার। গর্ভকালীন যতেœর লক্ষ্য হলো মা ও শিশু সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং গর্ভজনিত কোনো জটিলতা দেখা দিলে তা প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা।

গর্ভকালীন অর্থাৎ ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া থেকে শুরু করে প্রসবের পূর্ব পর্যন্ত গর্ভবতী মা এবং তার পেটের সন্তানের যতœ নেয়াকে গর্ভকালীন যতœ বলা হয়। গর্ভকালে মায়ের সঠিক যতœ নিলে মা সুস্থ থাকেন, সুস্থ-সবল শিশুর জন্ম হয়, নবজাতক ও মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস পায়। প্রসব একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হলেও যে কোনো সময় জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। সবকিছু স্বাভাবিক হলেও এ সময় অতিরিক্ত যতেœর প্রয়োজন আছে। গর্ভধারণ মানেই কমবেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। নিরাপদে মা হওয়ার জন্য গর্ভে সন্তানের আগমন নিশ্চিত হওয়া মাত্র গর্ভকালীন পরিচর্যা শুরু করতে হয়। গর্ভকালীন পুরো সময় থেকে প্রসবের পর কিছুদিন পর্যন্ত নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে চারবার স্যাটেলাইট ক্লিনিক, কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র বা সদর হাসপাতালে এসে শারীরিক পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। তবে গর্ভবতী মা যদি কোনো কারণে শারীরিক অসুবিধা বোধ করেন তাহলে যে কোনো সময় উল্লিখিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে পরিবার পরিকল্পনার পরামর্শ নিতে হবে। প্রথমত ৪ মাসের (১৬ সপ্তাহ) মধ্যেÑদ্বিতীয়ত, ৬-৭ মাসের মধ্যে (২৪-২৮) সপ্তাহÑতৃতীয়ত, ৮ম মাসে (৩২ সপ্তাহ) এবং চতুর্থ ৯ মাসে (৩৬ সপ্তাহের) মধ্যে ডাক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে। তা ছাড়া গর্ভধারণের ৪ থেকে ৮ মাসের মধ্যে মাকে দুই ডোজ টিটি টিকা নিতে হবে; স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি করে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার থেতে হবে (খাবারের তালিকায় সাধ্যমতো ফলমূল, সবুজ শাকসবজি, ডাল, শিম, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ছোট মাছ ইত্যাদি)। প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে; ভারী কাজ ছাড়া অন্যান্য দৈনন্দিন কাজকর্ম গর্ভবতী মায়েরা করতে পারবে; পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে; দিনের বেলায় কমপক্ষে ২ ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হবে এবং গর্ভবতী মাকে মানসিকভাবে শান্তিতে রাখতে হবে। উল্লেখ্য, গর্ভকালীন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না, দীর্ঘ সময় ক্লান্তিকর ভ্রমণ ও ধূমপান করা এবং ছোঁয়াচে রোগীর (হাম, বসন্ত)  প্রভৃতিতে আক্রান্ত সংস্পর্শে থেকে দূরে থাকতে হবে। ওজন মাপা, স্বাস্থ্য শিক্ষা দেয়া, রক্তস্বল্পতা বা শরীরে রক্ত কম কিনা তা পরীক্ষা করা, রক্তচাপ পরিমাপ করা, পা অথবা মুখ ফুলে গেলে পানি আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা, শারীরিক অন্য কোনো অসুবিধা আছে কিনা, তা পরীক্ষা করা জরুরি।

গর্ভাবস্থা এবং প্রসবকালে সব নারীর নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি গর্ভকালীন, প্রসব পরবর্তী সব নারীর জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হলো নিরাপদ মাতৃত্ব। সন্তান প্রসবের পর মা ও শিশুর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ডাক্তারের প্রয়োজনীয় উপদেশ এবং ব্যবস্থাপনা হচ্ছে প্রসব পরবর্তী সেবা। প্রসবের পর একজন প্রসূতি মায়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। কারণ প্রসবের পর একজন মায়ের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ সময় লাগে। নিরাপদ মাতৃত্ব হচ্ছে নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। দুই দশক আগেও মাতৃমৃত্যৃ একটা বড় সমস্যা ছিল। তবে সরকার গৃহীত পদক্ষেপ এবং স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতির ফলে গত এক দশকে মাতৃমৃত্যুহার অনেক কমেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন নারীর গর্ভাবস্থায় কিংবা প্রসবোত্তর ৪২ দিনের মধ্যে শারীরিক জটিলতার কারণে মৃত্যু ঘটলে, তাকে মাতৃমৃত্যু হিসেবে ধরা হয়। কভিডকালে গর্ভধারণ প্রসবজনিত জটিলতাসহ কভিড আক্রান্ত অনেক মায়ের সন্তান জš§দানের পর মৃত্যুবরণ করেছেন।

তাছাড়া গর্ভবতী হওয়ার আগেই অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ মা শনাক্ত করা যায়। এতে অভিভাবকরা তাদের করণীয় সম্বন্ধে সচেতন হবেন; এর ফলে মাতৃ-মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমানো যায়। যেমন বয়স ১৮-এর কম অথবা ৩৫-এর বেশি; প্রথম গর্ভ বা ৩-এর অধিক সন্তান; উচ্চতা-১৪৫ সে. মি. (৪ ফুট ১০ ইঞ্চি) এর কম; জন্ম বিরতি ২ বছরের কম; পূর্ববর্তী প্রসবে প্রসবপূর্ব রক্তক্ষরণ, প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ অথবা জরায়ুতে গর্ভফুল আটকে থাকার ইতিহাস; বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত প্রসবের ইতিহাস; গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু বা নবজাতকের মৃত্যুর ইতিহাস এবং সিজারিয়ান অপারেশন বা যন্ত্রের মাধ্যামে প্রসবের ইতিহাস প্রভৃতি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, দেশে মৃত্যুহার লাখে ৭০ জনের নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ জাতীয় মাতৃস্বাস্থ্য কৌশল, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশ উন্নীত করা এবং দক্ষ ধাত্রীর মাধ্যমে প্রসবের হার ৫০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশে উন্নীত করা, পাশাপাশি মাতৃমৃত্যুর হার এবং নবজাতকের মৃত্যুহার কমিয়ে আনা। গর্ভকালীন কমপক্ষে ৪ বার গর্ভকালীন সেবা গ্রহণের হার ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করা। গ্রামীণ নারীরাও এখন উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। গণমাধ্যমের নানা রকম প্রচারের ফলে জনসচেতনতা তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে একজন গর্ভবতী মা গর্ভধারণের পর থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া তার অধিকার। শুধু মা-ই নয়, মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুরও যত্ন প্রয়োজন, যাকে বলা হয় গর্ভকালীন সেবা।

সীমাবদ্ধতা থাকলেও গত এক দশকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে, বিশেষ করে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অগ্রগতি এখন দেশের বহির্বিশ্ব নজর কেড়েছে। উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে মা ও শিশু মৃত্যুর হার। এর পেছনে সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, মাতৃ ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, উপজেলা হাসপাতালসহ জেলা এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান। কভিডকালেও  মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকছে। টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের করণীয় এবং তাদের পুষ্টি পরামর্শ বিষয়ে ধারণা দেয়া হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকারের ই-হেলথ ও ই-স্বাস্থ্য সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছেÑমোবাইল ফোনে স্বাস্থ্য সেবা, টেলিমেডিসিন সেবা, কমিটি ক্লিনিকসমূহ, টেলিমেডিসিন সেবা, এসএমএসের মাধ্যমে অভিযোগ-পরামর্শ জানানোর ব্যবস্থা, এসএমএসের মাধ্যমে প্রসূতি মায়ের পরামর্শ, এসএমএসের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে উপস্থিতি তদারকি, অনলাইন পপুলেশন রেজিস্ট্রি প্রভৃতি। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহ ইন্টারনেট সুবিধাসহ ল্যাপটপ কম্পিউটার দেয়া হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনা বর্তমান সরকারের মুখ্য কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম। মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্যসেবা কমিউনিটি ক্লিনিকের সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চাপ কমাতে স্বাস্থ্য কল সেন্টার ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে ঘরে বসে স্বাস্থ্য তথ্য জানা যাচ্ছে। অথচ নব্বই দশকে প্রতি ১ লাখ জীবিত শিশু জন্ম নিতে গিয়ে ৫৭৪ জন  মা মৃত্যুবরণ করতেন। বর্তমানে তা কমে প্রতি লাখে ১৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে। সে হিসেবে নব্বইয়ের দশকের তুলনায় মাতৃমৃত্যু ৭০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে।

বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রণীত পাঁচ বছর মেয়াদি ‘চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি কর্মসূচি ২০১৭-২০২২’ বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে দেশের সার্বিক স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটছে। দরিদ্র গর্ভবতী মায়েদের সহায়তার জন্য মাতৃকালীন ভাতা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ভাতা মা ও শিশু স্বাস্থ্য ও পুষ্টি উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। স্বাস্থ্য খাতে টেকসই উন্নয়ন অর্জন এবং কভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে সবাইকে ভূমিকা নিতে হবে। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হবে। এ জন্য উন্নত জাতি গঠন করতে হবে।                                                      

পিআইডি নিবন্ধ

সানজিদা আমিন: কভিড অতিমারির বিস্তারে দেশের স্বাস্থ্য পরিসেবার বেহাল দশায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই এর শিকার হচ্ছেন। তবে নারীদের অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। কভিডে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মধ্যে আছেন গর্ভধারণকারী মায়েরা। আমাদের দেশে প্রথমবার গর্ভধারণ করা বেশিরভাগ মা-ই কিশোরী। মা হতে গিয়ে তাদের যে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে হয়, তা পরিবারের অন্য সদস্যরা ভাবেন না। কভিড ও লকডাউনের কারণে নি¤œ আয়ের পরিবারগুলোতে মাতৃস্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে। কভিডকালে মায়েদের সেবা কেন্দ্রে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা আরও বেড়েছে। এ সময়ে যোগ হয়েছে বাল্যবিয়ের বাড়তি ঝোঁক। অল্প বয়সে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত মায়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)২০২১ সালের ৬ মে এক প্রতিবেদনে বলেছে, এপ্রিল মাসে দেশে নতুন করে গর্ভধারণ করেছেন ২৪ লাখ নারী। সংস্থাটির আশঙ্কা কভিডকালে জন্মকালীন পরিচর্যা এবং অন্তঃসত্ত্বা মা ও শিশুর জীবন রক্ষার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ফেরদৌসী সুলতানা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাড়িতে কাজের চাপ নারীকে সামলাতে হচ্ছে। বাসায় কভিড রোগী থাকলে নারীদের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকছে। আর নারী আক্রান্ত হওয়ার পর তার যতœ কে করবে, সেটা একটা বড় সমস্যা। অনেকের স্বামী প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছেন। অনেকেই কাজকর্ম হারিয়ে বাড়িতে আছেন। তারা পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী কতটুকু পাচ্ছেন, সেটা একটা প্রশ্ন। সামনে বড় সমস্যা হতে পারে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য। এই লকডাউনে অনেকে গর্ভধারণ করেছেন। এখন এসব মায়ের প্রসব পূর্ব, প্রসবের সময় এবং পরবর্তী সময়ে যত্নের বিষয়গুলো চিন্তায় রাখতে হবে। আয় কমে যাওয়ার কারণে সৃষ্ট হবে অপুষ্টি সমস্যা। নি¤œ আয়ের পরিবারের মা ও শিশুর অপুষ্টি বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। অপুষ্টি পঙ্গুত্ব থেকে শুরু করে আরও অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে।

নারী ও কিশোরীদের ওপর কভিডকালীন প্রভাব কেমন, তা নিয়ে সমীক্ষা করেছে ব্র্যাক এর জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি বিভাগ। ২০২১ সালের ২৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল এ জরিপ চলে। ব্র্যাক ১১টি জেলায় তাদের কর্ম এলাকার ৫৫৭ জন নারী-পুরুষের ওপর এ জরিপ করে। জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই নারী। দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ পুরুষ ও ৮০ শতাংশ নারী কভিডের জন্য সতর্কতামূলক বার্তা পেয়েছেন। কিন্তু সুরক্ষা সামগ্রীগুলো পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর চেয়ে পুরুষ অনেক এগিয়ে।

কভিড-১৯ বাংলাদেশ: র‌্যাপিড জেন্ডার অ্যানালাইসিস গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ২০২১ সালের মে মাসে। বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বলছে, লকডাউনের সারাবিশ্বে নারী নির্যাতন, বিশেষ করে পারিবারিক নারী নির্যাতন বেড়েছে। বেসরকারি সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এম জে এফ) ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে দেশে ২৭টি জেলায় নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপ অনুসারে ২৭টি জেলায় এপ্রিল মাসে ৪ হাজার ২৪৯ জন নারী এবং ৪৫৬টি শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এ ধরনের সহিংসতায় নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। অথচ একজন গর্ভবতী মা গর্ভধারণের পর থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া তার অধিকার। গর্ভকালীন যতেœর লক্ষ্য হলো মা ও শিশু সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং গর্ভজনিত কোনো জটিলতা দেখা দিলে তা প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা।

গর্ভকালীন অর্থাৎ ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া থেকে শুরু করে প্রসবের পূর্ব পর্যন্ত গর্ভবতী মা এবং তার পেটের সন্তানের যতœ নেয়াকে গর্ভকালীন যতœ বলা হয়। গর্ভকালে মায়ের সঠিক যতœ নিলে মা সুস্থ থাকেন, সুস্থ-সবল শিশুর জন্ম হয়, নবজাতক ও মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস পায়। প্রসব একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হলেও যে কোনো সময় জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। সবকিছু স্বাভাবিক হলেও এ সময় অতিরিক্ত যতেœর প্রয়োজন আছে। গর্ভধারণ মানেই কমবেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। নিরাপদে মা হওয়ার জন্য গর্ভে সন্তানের আগমন নিশ্চিত হওয়া মাত্র গর্ভকালীন পরিচর্যা শুরু করতে হয়। গর্ভকালীন পুরো সময় থেকে প্রসবের পর কিছুদিন পর্যন্ত নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে চারবার স্যাটেলাইট ক্লিনিক, কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র বা সদর হাসপাতালে এসে শারীরিক পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। তবে গর্ভবতী মা যদি কোনো কারণে শারীরিক অসুবিধা বোধ করেন তাহলে যে কোনো সময় উল্লিখিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে পরিবার পরিকল্পনার পরামর্শ নিতে হবে। প্রথমত ৪ মাসের (১৬ সপ্তাহ) মধ্যেÑদ্বিতীয়ত, ৬-৭ মাসের মধ্যে (২৪-২৮) সপ্তাহÑতৃতীয়ত, ৮ম মাসে (৩২ সপ্তাহ) এবং চতুর্থ ৯ মাসে (৩৬ সপ্তাহের) মধ্যে ডাক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে। তা ছাড়া গর্ভধারণের ৪ থেকে ৮ মাসের মধ্যে মাকে দুই ডোজ টিটি টিকা নিতে হবে; স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি করে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার থেতে হবে (খাবারের তালিকায় সাধ্যমতো ফলমূল, সবুজ শাকসবজি, ডাল, শিম, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ছোট মাছ ইত্যাদি)। প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে; ভারী কাজ ছাড়া অন্যান্য দৈনন্দিন কাজকর্ম গর্ভবতী মায়েরা করতে পারবে; পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে; দিনের বেলায় কমপক্ষে ২ ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হবে এবং গর্ভবতী মাকে মানসিকভাবে শান্তিতে রাখতে হবে। উল্লেখ্য, গর্ভকালীন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না, দীর্ঘ সময় ক্লান্তিকর ভ্রমণ ও ধূমপান করা এবং ছোঁয়াচে রোগীর (হাম, বসন্ত)  প্রভৃতিতে আক্রান্ত সংস্পর্শে থেকে দূরে থাকতে হবে। ওজন মাপা, স্বাস্থ্য শিক্ষা দেয়া, রক্তস্বল্পতা বা শরীরে রক্ত কম কিনা তা পরীক্ষা করা, রক্তচাপ পরিমাপ করা, পা অথবা মুখ ফুলে গেলে পানি আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা, শারীরিক অন্য কোনো অসুবিধা আছে কিনা, তা পরীক্ষা করা জরুরি।

গর্ভাবস্থা এবং প্রসবকালে সব নারীর নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি গর্ভকালীন, প্রসব পরবর্তী সব নারীর জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হলো নিরাপদ মাতৃত্ব। সন্তান প্রসবের পর মা ও শিশুর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ডাক্তারের প্রয়োজনীয় উপদেশ এবং ব্যবস্থাপনা হচ্ছে প্রসব পরবর্তী সেবা। প্রসবের পর একজন প্রসূতি মায়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। কারণ প্রসবের পর একজন মায়ের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ সময় লাগে। নিরাপদ মাতৃত্ব হচ্ছে নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। দুই দশক আগেও মাতৃমৃত্যৃ একটা বড় সমস্যা ছিল। তবে সরকার গৃহীত পদক্ষেপ এবং স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতির ফলে গত এক দশকে মাতৃমৃত্যুহার অনেক কমেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন নারীর গর্ভাবস্থায় কিংবা প্রসবোত্তর ৪২ দিনের মধ্যে শারীরিক জটিলতার কারণে মৃত্যু ঘটলে, তাকে মাতৃমৃত্যু হিসেবে ধরা হয়। কভিডকালে গর্ভধারণ প্রসবজনিত জটিলতাসহ কভিড আক্রান্ত অনেক মায়ের সন্তান জš§দানের পর মৃত্যুবরণ করেছেন।

তাছাড়া গর্ভবতী হওয়ার আগেই অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ মা শনাক্ত করা যায়। এতে অভিভাবকরা তাদের করণীয় সম্বন্ধে সচেতন হবেন; এর ফলে মাতৃ-মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমানো যায়। যেমন বয়স ১৮-এর কম অথবা ৩৫-এর বেশি; প্রথম গর্ভ বা ৩-এর অধিক সন্তান; উচ্চতা-১৪৫ সে. মি. (৪ ফুট ১০ ইঞ্চি) এর কম; জন্ম বিরতি ২ বছরের কম; পূর্ববর্তী প্রসবে প্রসবপূর্ব রক্তক্ষরণ, প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ অথবা জরায়ুতে গর্ভফুল আটকে থাকার ইতিহাস; বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত প্রসবের ইতিহাস; গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু বা নবজাতকের মৃত্যুর ইতিহাস এবং সিজারিয়ান অপারেশন বা যন্ত্রের মাধ্যামে প্রসবের ইতিহাস প্রভৃতি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, দেশে মৃত্যুহার লাখে ৭০ জনের নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ জাতীয় মাতৃস্বাস্থ্য কৌশল, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশ উন্নীত করা এবং দক্ষ ধাত্রীর মাধ্যমে প্রসবের হার ৫০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশে উন্নীত করা, পাশাপাশি মাতৃমৃত্যুর হার এবং নবজাতকের মৃত্যুহার কমিয়ে আনা। গর্ভকালীন কমপক্ষে ৪ বার গর্ভকালীন সেবা গ্রহণের হার ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করা। গ্রামীণ নারীরাও এখন উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। গণমাধ্যমের নানা রকম প্রচারের ফলে জনসচেতনতা তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে একজন গর্ভবতী মা গর্ভধারণের পর থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া তার অধিকার। শুধু মা-ই নয়, মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুরও যত্ন প্রয়োজন, যাকে বলা হয় গর্ভকালীন সেবা।

সীমাবদ্ধতা থাকলেও গত এক দশকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে, বিশেষ করে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অগ্রগতি এখন দেশের বহির্বিশ্ব নজর কেড়েছে। উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে মা ও শিশু মৃত্যুর হার। এর পেছনে সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, মাতৃ ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, উপজেলা হাসপাতালসহ জেলা এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান। কভিডকালেও  মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকছে। টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের করণীয় এবং তাদের পুষ্টি পরামর্শ বিষয়ে ধারণা দেয়া হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকারের ই-হেলথ ও ই-স্বাস্থ্য সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছেÑমোবাইল ফোনে স্বাস্থ্য সেবা, টেলিমেডিসিন সেবা, কমিটি ক্লিনিকসমূহ, টেলিমেডিসিন সেবা, এসএমএসের মাধ্যমে অভিযোগ-পরামর্শ জানানোর ব্যবস্থা, এসএমএসের মাধ্যমে প্রসূতি মায়ের পরামর্শ, এসএমএসের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে উপস্থিতি তদারকি, অনলাইন পপুলেশন রেজিস্ট্রি প্রভৃতি। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহ ইন্টারনেট সুবিধাসহ ল্যাপটপ কম্পিউটার দেয়া হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনা বর্তমান সরকারের মুখ্য কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম। মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্যসেবা কমিউনিটি ক্লিনিকের সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চাপ কমাতে স্বাস্থ্য কল সেন্টার ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে ঘরে বসে স্বাস্থ্য তথ্য জানা যাচ্ছে। অথচ নব্বই দশকে প্রতি ১ লাখ জীবিত শিশু জন্ম নিতে গিয়ে ৫৭৪ জন  মা মৃত্যুবরণ করতেন। বর্তমানে তা কমে প্রতি লাখে ১৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে। সে হিসেবে নব্বইয়ের দশকের তুলনায় মাতৃমৃত্যু ৭০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে।

বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রণীত পাঁচ বছর মেয়াদি ‘চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি কর্মসূচি ২০১৭-২০২২’ বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে দেশের সার্বিক স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটছে। দরিদ্র গর্ভবতী মায়েদের সহায়তার জন্য মাতৃকালীন ভাতা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ভাতা মা ও শিশু স্বাস্থ্য ও পুষ্টি উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। স্বাস্থ্য খাতে টেকসই উন্নয়ন অর্জন এবং কভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে সবাইকে ভূমিকা নিতে হবে। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হবে। এ জন্য উন্নত জাতি গঠন করতে হবে।                                                      

পিআইডি নিবন্ধ