কভিডকালে বেকারত্ব ও হতাশায় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা

মো. জিল্লুর রহমান: আত্মহত্যা একটি ভয়ংকর অপরাধ ও মানসিক ব্যাধি। আত্মহত্যা শুধু ইসলামেই মহাপাপ নয়, সমাজের দৃষ্টিতেও গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ। পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয়জনিত কারণে স্বাভাবিক মৃত্যুকে না মেনে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। মানুষের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা, মানসিক বেদনা ও অর্থনৈতিক দীনতা বেড়ে গেলে চরম হতাশা কাজ করে। হতাশাই নিজের মধ্যে নেতিবাচক ধারণাগুলো তৈরি করে। একপর্যায়ে মানুষ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। যখন নিজেকে ও নিজের জীবনকে ব্যর্থ মনে হয়, তখনই মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। একাজ যারা করে, তাদের আত্মঘাতক বা আত্মহননকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে করোনাকালের বিধিনিষেধে ঘরে বসে থাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক ধরনের স্থবিরতা, বেকারত্বসহ নানা কারণে হতাশা-বিষণœতা অনেক বেশি জেঁকে বসছে। মনোবিদসহ অনেকের পক্ষ থেকে বারবার এ ধরনের কথা বলা হচ্ছে। দেশে সাম্প্রতিক আত্মহত্যার প্রবণতা এবং এর সম্ভাব্য কারণ বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে মনোবিদদের সে কথাগুলোই সামনে আসছে।

সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন গত বছর আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানে একটি গবেষণা চালিয়েছিল। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০১ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। তাদের মধ্যে ৬৫ ছাত্র, অর্থাৎ আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৩৬ শতাংশই ছাত্র। ছাত্রীদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ছাত্র গত বছর আত্মহত্যা করেছে। বাংলাদেশের প্রায় ৫০টি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার আত্মহত্যার সংবাদ বিশ্লেষণ করে ফাউন্ডেশনটি জানিয়েছে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের আত্মহত্যার হার বেড়েছে। তাদের মধ্যে সম্পর্কগত কারণে ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, পারিবারিক সমস্যার কারণে ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, পড়াশোনা-সংক্রান্ত কারণে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ, আর্থিক সমস্যায় পড়ে ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ, আর মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। আত্মহত্যার কারণের মধ্যে আরও উঠে এসেছে, ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ মাদকাসক্ত হয়ে নির্বিকারে নিজের জীবন হননের পথ বেছে নিয়েছেন এবং আরও ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী নানা ধরনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে, যা ৬১ দশমিক ৩৯ শতাংশ বা ৬২ জন। এ ছাড়া মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ জন, যা মোট আত্মহননকারীর ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন, যা মোট আত্মহত্যাকারীর ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অন্যদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ২২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা সংখ্যায় ২৩ জন। গতবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন; এ ছাড়া আরও রয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, যাদের মধ্যে আছেন তিন শিক্ষার্থী। দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে এমন আত্মহননের হার নিঃসন্দেহে ভীতিকর ও উদ্বেগজনক চিত্র।

গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, চলতি ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অনিক চাকমা নামে এক ছাত্রের লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। অনিক আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। তার রুম থেকে ছয় পৃষ্ঠার চিরকুট উদ্ধার করা হয় এবং তার সহপাঠীরা জানিয়েছেন, পারিবারিকভাবে আর্থিক অসচ্ছল থাকায় এবং কাক্সিক্ষত কোনো কর্মে যুক্ত না হতে পারায় অনিক মানসিকভাবে বিষণœতায় ছিলেন। অন্যদিকে ২০২১ সালের অক্টোবরে রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে ঢাবির ২০১৪-১৫ সেশনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র আদনান সাকিবের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের জানা যায়, কাক্সিক্ষত চাকরি না পাওয়ায় তার মধ্যে হতাশা কাজ করত এবং এমন হতাশা থেকেই তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন। বেকারত্ব ও হতাশার কারণে এ ধরনের আত্মহত্যার খবর প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হয়।

আঁচল ফাউন্ডেশন তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছে, অনার্সপড়ুয়া তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার তুলনামূলকভাবে বেশি, যা ৩৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ধারণা করা হয়, এ শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার-কেন্দ্রিক সামাজিক চাপ বেশি থাকে এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কারণে তাদের মাঝে হতাশার ছাপ বেশি দেখা যায়। গবেষণায় ২২-২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি বলে উঠে এসেছে। সমন্বয়কৃত তথ্যগুলোর মধ্যে ৬০টি আত্মহত্যার ঘটনা এই বয়সসীমার শিক্ষার্থীদের মধ্যে হয়েছে, যা মোট ঘটনার ৫৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে ১৮-২১ বছর বয়সী তরুণদের আত্মহত্যার ঘটনা মোট সমন্বয়কৃত ঘটনার ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ বা ২৭ জন। এ ছাড়া ২৬-২৯ বছর এবং ২৯ বছরের ঊর্ধ্বে এই হার যথাক্রমে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ, যা সংখ্যায় যথাক্রমে ১০টি ও চারটি। সাধারণত ছাত্রীদের মাঝে আত্মহত্যার হার বেশি দেখা গেলেও এবারের সমন্বয়কৃত তথ্য থেকে দেখা যায়। গত বছর আত্মহত্যাকারীদের একটা বড় অংশই ছিল ছাত্র। মোট ৬৫ ছাত্র আত্মহত্যা করেন, যা মোট শিক্ষার্থীর ৬৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অন্যদিকে ছাত্রীদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ছিল ৩৬ জন বা ৩৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। করোনার মধ্যে সামাজিক, আর্থিক ও পারিবারিক চাপ বেড়ে যাওয়া ছাত্রদের আত্মহত্যার পেছনে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বলে মনোবিদরা মনে করেন।

আজকাল আত্মহত্যার ঘটনা প্রায়ই সংঘটিত হচ্ছে এবং সংবাদ শিরোনামে স্থান পাচ্ছে। বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তরুণ-তরুণীরা এই প্রবণতায় জড়িত হয় বেশি। একই সঙ্গে উচ্চপদের কর্মকর্তা, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, কর্মজীবী, দিনমজুর ও ব্যবসায়ীরা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করে থাকে। পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ লোক আত্মহত্যা করে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে, দেশে প্রতি বছর ১০ হাজারের অধিক মানুষ এই পথে পা বাড়ায়। ওই সংস্থাটির মতে, সারাবিশ্বে অত্মহত্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। আর আত্মহত্যার চিন্তায় মনস্তাত্ত্বিক রোগে ভোগে বিশ্বে প্রায় ১০ কোটি মানুষ। ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) একটি উদ্বেগজনক তথ্য উপস্থাপন করেছে। সেখানে দেখা যায়, পুরো ২০২০ সালটি ছিল কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের বছর এবং বিশ্বব্যাপী এত মৃত্যুর মিছিল আর কোনো মহামারিতে দেখেনি কখনও। বিবিএস বলছে, ২০২০ সালে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন পাঁচ হাজার দুজন। কিন্তু বিস্ময়করভাবে ওই ৯ মাসে আত্মহত্যায় মারা গেছেন ১১ হাজার মানুষ। অর্থাৎ করোনার চেয়ে আত্মহত্যায় মৃত্যুর হার দ্বিগুণ। অন্যদিকে বাংলাদেশ পুলিশের তথ্যমতে, আগের বছরগুলোয়ও এই প্রবণতা ছিল উদ্বেগজনক। ২০১৮ সালে ১১ হাজারের অধিক, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ১১ হাজার ৯৫ জন, ২০১৬ সালে ১০ হাজার ৬০০ জন, ২০১৫ সালে ১০ হাজার ৫০০ জন আত্মহত্যা করেছিল। ওই হিসাবকে দৈনিক ভাগ করলে গড়ে প্রতিদিন ৩০ জন আত্মহত্যা করছে।

বর্তমান যুগ হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। তাই আত্মহত্যার প্রবণতায়ও যুক্ত হয়েছে নতুন কারণ। বিশেষত ব্যক্তিবিশেষের মানসিক বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতাও আত্মহত্যার কারণ হতে পারে। দৈনন্দিন জীবনের নানা জটিলতা ও প্রযুক্তির প্রতি মানুষের অত্যধিক আসক্তি বাড়লেও আত্মহত্যার প্রবণতার মধ্যে খুব পরিবর্তন হয়নি। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাগুলো দুর্বল হয়ে গেলে মানুষ অসহায় বোধ করে এবং একপর্যায়ে আত্মহত্যা করে ফেলে। পৃথিবীজুড়ে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ আত্মহত্যা। যারা মনের দিক থেকে দুর্বল, ধৈর্য ও সহ্যক্ষমতা যাদের কম অবসাদ ও হেনস্তার শিকার হয়ে এবং হঠাৎ কোনো পরিবর্তনের সঙ্গে সহনশীল হতে না পেরে বিপথগামী হয়। অনেক ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায় মানসিক চাপ। এই চাপ সহ্য করতে না পারলে মানুষটি জীবন থেকে পালিয়ে যেতে এই পথ বেছে নেয়।

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধে আঁচল ফাউন্ডেশন ১০টি প্রস্তাব সুপারিশ করেছে। প্রতিটি জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে মেন্টাল হেলথ প্রফেশনাল নিয়োগ দেয়া এবং ইয়ুথ অরগানাইজেশনকে যথাযথভাবে ট্রেনিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে যথাযথ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যেতে পারে। নীতিনির্ধারণী সংলাপে তরুণদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পুরোপুরি দেশের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে আত্মহত্যার হার কমিয়ে আনা। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও সেবাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় অন্তর্ভুক্ত করা। মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কুসংস্কার ও হীনমন্যতা দূরীকরণে প্রাথমিক স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহে জরুরি ভিত্তিতে একটি জাতীয় হটলাইন সেবা চালু করা। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার লক্ষ্যে সরকার একটি বিশেষ অ্যাপস চালু করতে পারে, যেন যে কেউ দ্রুত মনোবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারে। প্রান্তিক পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং তরুণদের মেন্টাল হেলথ ফার্স্ট এইড ট্রেনিং সরবরাহ করা। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে যুগপৎভাবে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন আয়োজন করা। সচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ভূমিকা জোরদার করা এবং মানসিক চিকিৎসা-সংক্রান্ত পরামর্শ ফি ও ওষুধের দাম কমানো।

মানসিক সমস্যা যে কোনো মানুষেরই হতে পারে। মানসিক রোগগুলোর কারণ হলো মস্তিষ্কের মধ্যে কিছু রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণে তারতম্য সৃষ্টি হওয়া। ঠিকমতো চিকিৎসায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগ সেরে যায় বা নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু একাকী থাকতে বাধ্য হওয়া, চাকরি চলে যাওয়া, উপার্জন বন্ধ হওয়া, দারিদ্র্য, প্রেম-ভালোবাসায় মনের মানুষকে না পাওয়া প্রভৃতি আমাদের মস্তিষ্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেক মানুষ আছে যারা এসব সহ্য করেও জীবনপথে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু সবার মস্তিষ্ক সেই চাপ সহ্য করতে পারে না এবং এই অতিরিক্ত চাপ মস্তিষ্কে কিছু রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণে তারতম্য সৃষ্টি করে। এর থেকে তৈরি হয় হতাশা, ক্রোধ, বিষন্নতা এবং তারা ক্রমেই হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে থাকে ও আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে পড়ে। তরুণ-তরুণী ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ প্রবণতা ইদানীং বেশ বেশি।

‘আত্মহত্যা’ সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে অপছন্দনীয় এবং অনাকাক্সিক্ষত একটি ‘কাজ’। আত্মহত্যার চেয়ে ভয়ংকর বিব্রতকর ও কষ্টকর কোনো প্রেক্ষাপট সমাজে আর একটিও নেই। কিন্তু তার পরও ঘটনাটি ঘটে এবং বলা যায় হরহামেশাই ঘটে। আজকের তরুণরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ ও কাণ্ডারি। তারা নানা স্বপ্নের জাল বুনে, লেখাপড়া করে কাক্সিক্ষত কিছু অর্জন করতে চায়, পৃথিবীকে আলোকিত করতে চায়। অধিকাংশ তরুণই লেখাপড়া শেষ করে ভালো কর্মসংস্থান, পরিবারের জন্য কিছু করার তাগিদ এবং অনেকে প্রিয়জনকে জীবনসঙ্গী করে একটি সুন্দর সংসারের জাল বোনে; এগুলোর যেকোনো একটিতে কোনো ছেদ পড়লে সে চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়, নিজেকে ব্যর্থ মনে করে এবং জীবনকে মূল্যহীন মনে হয়। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, করোনাকালে বেকারত্ব সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। লাখো তরুণ-তরুণী কোনো কাক্সিক্ষত কর্মসংস্থান খুঁজে পাচ্ছে না। এ কারণে হতাশা চরমভাবে তাদের আঁকড়ে ধরছে। ফলে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে অপছন্দনীয় ও নিকৃষ্টতর কাজটিই বেছে নিচ্ছে। এর থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে এবং এজন্য সংশ্লিদের শুধু কাউন্সেলিং করলেই চলবে না, বরং নীতিনির্ধারকদেরও সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।

ব্যাংক কর্মকর্তা ও মুক্ত লেখক

zrbbbp@gmail.com

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০