কভিডকালে যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য সময়ের তুলনায় কভিডকালে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। উদ্যোক্তা ও নতুন উদ্যোগের ক্ষেত্রে এ সময় দারুণ ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়েছেন উদ্যোক্তারা। খবর: এনবিসি নিউজ।

`ব্যবসায়ের জন্য এ সময়টি আসলেই সন্তোষজনক। মহামারি শুরুর পর আমরা অব্যাহতভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করতে দেখেছি,’ যুক্তরাষ্ট্রের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান জিপরিক্রুটারের প্রধান অর্থনীতিবিদ জুলিয়া পোলাক এ কথা বলেন। ‘এখনও ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা অপেক্ষা করছে,’ যোগ করেন তিনি।

সরকারের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নতুন কর্মসংস্থান ও বেকার মানুষদের মধ্যে বিরাট পার্থক্য দেখা গেছে। নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ। অন্যদিকে বেকার হয়েছেন ৭৪ লাখ মানুষ। এ বিষয়টি নিয়োগদাতা ব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ পরিচালক, অর্থনীতিবিদ ও শ্রমবাজারের বিশেষজ্ঞদের ভাবিয়ে তুলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দি সেনসাস ব্যুরোজ বিজনেস ফরমেশন স্ট্যাটিসটিকসের ডেটা অনুযায়ী, অসংখ্য মানুষ নতুন ব্যবসা চালু করার জন্য

আয়কর-সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। গত বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ নতুন প্রতিষ্ঠান ব্যবসা শুরুর জন্য আবেদন করেছেন। ২০১৯ সালের তুলনায় এ হার ৫৫ শতাংশ বেশি। তাদের অনেকে নতুন কর্মসংস্থান করতে পারবেন বলে আশাবাদী সেনসাস ব্যুরো।

‘ব্যবসার বাজারে নতুন কিছু ঘটতে যাচ্ছে, বিশেষ করে নতুন উদ্যোগগুলোয় বিপুল অর্থ বিনিয়োগের আশা করছি,’ বলেন নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান ডেভ পার্টনারসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভ কারভাজাল। নতুন উদ্যোগের বেশিরভাগই প্রযুক্তি-সংক্রান্ত বলে দাবি করেছেন তিনি। ‘ব্যবসায়ীদের পরিচালনা ও চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তাদের চিন্তাভাবনা আগের প্রজš§গুলোর তুলনায় ভিন্ন। মহামারি তাদের চিন্তাভাবনায় বিশাল পরিবর্তন এনেছে,’ যোগ করেন কারভাজাল। তার মতে, কেউ যদি প্রতি সপ্তাহে কাজের পেছনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করেন, তাহলে তার উচিত নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করা।

স্কোরের সার্টিফায়েড মেন্টর ফ্রাঙ্ক লামোনাকা বলেন, মহামারি অপ্রত্যাশিতভাবে ‘কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত’ উন্মোচন করেছে, যাতে ক্ষুধার্ত মানুষরাও নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে পারে। তাদের জীবনে ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্র মূল্যায়নের সময় এখন।

উদ্যোক্তাদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে স্কোর। এ প্ল্যাটফর্মে কাজ করতেন বাল্টিমোরের শিক্ষক ডেনিয়েল নিল। তিনি বলেন, আমি শিক্ষকতা পছন্দ করি। কিন্তু নিজের ব্যবসায়ের জন্য এ পেশা ছেড়ে দিতে হচ্ছে। তিনি গত বছর মে মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন ব্যবসা শুরু করেন। তিনি জানান, এখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুযোগ অপেক্ষা করছে, কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অনেক বিষয় সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। তিনি আগামী বছর তার প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘমেয়াদে কর্মী নিয়োগ দিতে চাই।’

বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস শীর্ষক প্রতিবেদন ২০২০-এ বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন কোনো ব্যবসা শুরু ও নিবন্ধন করতে গড়ে মাত্র চার দিন লাগে। এ কারণে সেখানকার অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করতে চান। দেশটির স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’স অফিস অব অ্যাডভোকেসি’র তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় তিন কোটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার ৯৯ শতাংশই ক্ষুদ্র ব্যবসা। স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এসবিএ) অনুযায়ী, কর্মিসংখ্যা ৫০০ জনের কম হলে তা ক্ষুদ্র ব্যবসা হিসেবে গণ্য করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির মেরুদণ্ড এ ধরনের ব্যবসায় উদ্যোগ। এর অন্যতম কারণ হলো, এখানে ব্যবসা শুরু করার সহজ প্রক্রিয়া। এসবিএ’র ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগকৃত কর্মিসংখ্যা প্রায় ছয় কোটি, যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট কর্মিসংখ্যার ৪৮ শতাংশ।

ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবার মজুরি দেয়ার জন্য সহযোগিতা ছাড়াও সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে থাকে দেশটি। এমনকি ঋণের কিছু অংশ কখনও ফেরত না দেয়ার শর্তে ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখার চেষ্টা করে দেশটির সরকার। এ কারণেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারছেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০