Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 4:07 am

কভিডের কারণে সংকটে আনোয়ারার রেস্টুরেন্ট ব্যবসা

এনামুল হক নাবিদ, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম): দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চলখ্যাত আনোয়ারা উপজেলায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট। উপজেলার কেইপিজেড, কাপকো, সিইউএফএল ও দেশের সাগরকন্যা-খ্যাত পারকি সমুদ্রসৈকতকে কেন্দ  করে গড়ে উঠেছে এই রেস্টুরেন্টগুলো। দীর্ঘদিন চুটিয়ে ব্যবসা করলেও চলমান মহামারি কভিড-১৯-এর কারণে এ ব্যবসা এখন বন্ধ হওয়ার পথে। তাই দিশাহারা হয়ে পড়েছেন এসব রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারীরা।

আনোয়ারার অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে দ্য টেস্ট অব লন্ডন, দারুচিনি, দেয়াং, ভোজনবাড়ি, বন্ধুর বাড়ি, হাঁড়িয়ালি, নিউ মক্কা, মদিনা, হাজি বিরিয়ানি ও কুটুমবাড়ি অন্যতম। নামের মতোই সুন্দর দেশি-বিদেশি কারুকার্যে সজ্জিত বাঙালি এবং বিভিন্ন বিদেশি খাবারের সমারোহ নিয়ে গড়ে ওঠা এসব হোটেল-রেস্টুরেন্ট।

দেখা গেছে, বিভিন্ন সমাজিক অনুষ্ঠান ও জbgmদিনের অনুষ্ঠানে বছরজুড়ে এসব রেস্টুরেন্ট কাস্টমারে টইটম্বুর থাকলেও করোনার প্রাদুর্ভাবে খরা শুরু হয়েছে এসব রেস্টুরেন্টে। তাই কর্মচারীদের বেতন, দোকানভাড়া, বিদু্যুৎ বিল প্রভৃতির খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এসব রেস্টুরেন্ট মালিককে। ফলে লাখ টাকা লোকসান দিয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে উপজেলার অনেক নামিদামি রেস্টুরেন্ট। এরই মধ্যে কয়েকটি বন্ধ হয়ে গেছে।

অনেক মালিক পুঁজি হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার রেস্তোরাঁ শ্রমিক। এত ঝড়-ঝাপটার মধ্যে অনেক খাতের উদ্যোক্তারা সরকারি প্রণোদনা পেলেও তা মেলেনি রেস্তোরাঁ মালিক ও শ্রমিকদের।

খবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চাতরী চৌমুহনী সেন্টারে অবস্থিত কয়েকটি রেস্টুরেন্টে করোনার আগে মাসে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় হলেও করোনা প্রতিারোধে দেয়া লকডাউনে বিভিন্ন সময় বন্ধ রাখায় এসব রেস্টুরেন্টের আয় চলে এসেছে এক থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যে। বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খরচ পুষিয়ে কোনোমতে এই ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন বলে জানান রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ।

করোনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া উপজেলার কালাবিবির দিঘিতে অবস্থিত হোটেল জামানের স্বত্বাধিকারী মো. কায়ছারের কাছে হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, বিদেশ থেকে ফিরে দেশে এসে দোকানের অগ্রিম  টাকা, ডেকোরেশন, বিজ্ঞাপনসহ সবকিছুতে প্রায় ২২ লাখ টাকা খরচ হয়। তিনি বলেন, এত টাকা বিনিয়োগ করে এখানে হোটেলটি নির্মাণ করি। এতদিন ভালোই চলছিল। তবে মহামারি ঠেকাতে বিভিন্ন সময় লকডাউনসহ সরকারি নিষেধাজ্ঞার ফলে হোটেলের ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতনসহ খরচ চালাতে না পেরে হোটেলটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

উপজেলার সর্ববৃহৎ দেয়াং রেস্টুরেন্টের মালিক ২নং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাইয়ুম শাহ্ জানান, আনোয়ারায় বিভিন্ন শিল্পজোন ও পর্যটন কেন্দ  করার জন্য ভিআইপি ও বিদেশি অতিথিদের জন্য মূলত দেয়াং মালঞ্চ রেস্টুরেন্টটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আসলে আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছিলাম তা পূরণ হয়নি। লকডাউন-পূর্ববর্তী সময়ে রেস্টুরেন্টকে এগিয়ে নেয়া গেলেও এখন প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লোকসান দিয়ে রেস্টুরেন্টটাকে টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, দেয়াং রেস্টুরেন্টে ২২ কর্মচারী রয়েছেন। রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকলেও তাদের ছাঁটাই করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই তাদের ছুটিতে রাখলেও বেতন চালিয়ে যেতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিল, ফ্লোর ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন এসব মিলিয়ে প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা খরচ হচ্ছে আমার।