নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে করোনা মহামারির (কভিড-১৯) আগে ফেব্রুয়ারিতে মানুষের গড় মাসিক আয় ছিল ৬ হাজার ২৭৩ টাকা, সেটা মহামারির সময়ে এপ্রিলে হ্রাস পেয়ে ৪ হাজার ৭৪৫ টাকা এবং সেপ্টেম্বরে তা ৪ হাজার ৪০৮ টাকায় দাঁড়িয়েছে। দেশে ৯৫ শতাংশ যুব নারীর জীবন ও জীবিকায় কভিড-১৯ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। ৭৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রান্তিক পর্যায় ও দূরত্বের কারণে এপ্রিল থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছেন না।
গতকাল করোনা-পরবর্তী জীবনে ‘যুবদের অ্যাডভোকেসি ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় কভিড-১৯ এর প্রভাব’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ পরিচালিত একটি জরিপ এসব তথ্য উঠে আসে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, নীলফামারী, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, জামালপুর, দিনাজপুর, নওগাঁ, ও কুড়িগ্রামসহ মোট ১০টি জেলার ১৮-৩৫ বছর বয়সী মোট ৫৫০ জন যুব নারীদের ওপরে এ জরিপ চালায় অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ।
জরিপে প্রাপ্ত ফলে আরও বলা হয়, এ সময়ে মূল্যস্ফীতির কারণে ঋণগ্রহণের হার বেড়েছে। ৬৪ দশমিক ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন অর্থিক সংস্থানের জন্য তাদের ঋণ বা ধার করে চলতে হয়েছে।
মহামারিজনিত কারণে স্বাস্থ্য ব্যয় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ৩৭ শতাংশ উত্তরদাতা। করোনাকালীন গৃহস্থালি কাজের চাপ বেড়েছে বলে মনে করেন উত্তরদাতাদের ৭৯ শতাংশ। জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা (যৌন, শারীরিক এবং মানসিক) উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। মহামারি চলাকালীন সময়ে সহিংসতার শিকার নারীদের সহায়তায় পুলিশ এবং স্থানীয় সহায়তার ব্যবস্থা ছিল কিনা সেই প্রশ্নে নেতিবাচক জবাব দিয়েছেন ৩৫ দশমিক ২৭ শতাংশ।
এছাড়া ৬৭ দশমিক ২৭ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন করোনাকালীন সময়ে তাদের সরকারি সেবা গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। হাসপাতাল, বিশেষত স্থানীয় পর্যায়ের হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি না থাকার কথা জানিয়েছেন উত্তরদাতারা। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের তাৎক্ষণিক খাদ্যদ্রব্য প্রয়োজন, ৬১ শতাংশ জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন এবং ৪৮ শতাংশ জনগণের জীবিকা এবং আয়ের উৎসের সংস্থান প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আখতারুজ জামান খান কবির বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ১৮-৩৫ বছরের যুব পুরুষ ও নারীদের নিয়ে কাজ করে আসছে। গত মার্চ মাস থেকে দেশে করোনার প্রকোপ দেখা দেয়ায় আমাদের হোঁচট খেতে হয়েছে। পরবর্তীতে স্বাস্থবিধি মেনে মেনে আমরা প্রায় দেড় মাস পর সীমিত পরিসরে অফলাইন ও অনলাইনে ট্রেনিং কার্যক্রম পুনরায় চালু করি।
এসডিজি অর্জনে সরকারকে বেসরকারি সংস্থা, মিডিয়া, সিভিল সোসাইটির এরকম জরিপ ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ইয়ং পিলল প্রকল্পের ম্যানেজার নাজমুল আহসান বলেন, কভিড-১৯ সবার জন্যই সংকট বয়ে নিয়ে এসেছে, বিশেষ করে যুব ও নারীদের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। আমারা আশঙ্কা করছি অনেক নারীই আর কর্মক্ষেত্রে সহজে ফিরে যেতে পারবে না। নারীদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুনরায় যুক্ত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ উইমেন রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার ইকুইটি ম্যানেজার মরিয়ম নেসা তার বক্তব্যে বলেন, এমন এক সময়ে কভিডের ধাক্কা লেগেছে যখন আমাদের অর্থনৈতিক জীবনে গতিময়তা এসেছিল। কভিড আমাদের পেছনে ঠেলে দিয়েছে এবং নতুন চ্যালেঞ্জর মুখোমুখি করেছে।
অ্যাকশনএইড পরিচালিত এ জরিপ চ্যালেঞ্জ শনাক্ত ও মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।