নজরুল ইসলাম: কভিডের টিকা নিয়ে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। কারও চার মাস, কারও তিন মাস, কারওবা দুই মাস পেরিয়ে গেলেও টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের এসএমএস আসছে না। বারবার টিকা কেন্দ্রে আসতে হচ্ছে। আবার হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে মিলছে এসএমএস। কেউ কেউ ভিন্ন পথেও সমাধান নিচ্ছেন। এ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন টিকাগ্রহীতারা। তাদের ক্ষোভ, সময়মতো এসএমএস দিলেই তো হয়। কর্তৃপক্ষ তো জানে, কোন টিকার কত ডোজ বাকি রয়েছে। সে হিসাবেই তো এসএমএস দিতে পারে। কেন এত অব্যবস্থাপনা?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন টিকাপ্রার্থী গতকাল মুগদা হাসপাতালে শেয়ার বিজকে জানান, তিনি মডার্নার টিকা প্রথম ডোজ নিয়েছেন পাঁচ মাস আগে। এখনও দ্বিতীয় ডোজের এসএমএস আসেনি। তাই তিনি সমস্যা সমাধানের জন্য এসেছেন। কাউন্টার থেকে তাকে চারতলায় পরিচালকের কার্যালয়ে যেতে বলেছে।
২২ জুলাই রেজিস্ট্রেশন করে এখনও এসএমএস পাননি একজন ভুক্তভোগী। গত ২৯ জুলাই রেজিস্ট্রেশন করে এখনও প্রথম ডোজের এসএমএস পাননি আরেকজন টিকা প্রার্থী। তাকে হেল্প বুথ থেকে বলা হয়, পুনরায় রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
৯ আগস্ট রেজিস্ট্রেশন করে এখনও প্রথম ডোজের এসএমএস পাননি আরেক ভুক্তভোগী। ২৮ আগস্ট রেজিস্ট্রেশন করে প্রথম ডোজের এসএমএস পাননি আরেক জন।
গতকাল টিকার এন্ট্রি কাউন্টারের সামনে এক প্রবাসী কাকুতি-মিনতি করে বলছেন, আমার তিন দিন পর ফ্লাইট। দেখেন না কিছু একটা করা যায় কি না। কিন্তু কাউন্টার থেকে কোনো উত্তর আসে না।
মুগদা হাসপাতালের চার তলায় গিয়ে দেখা গেছে, একজন আনসার সদস্য কয়েক জনকে ডেকে তাদের টিকা কার্ড দিচ্ছেন। তাদের উপপরিচালকের কার্যালয় থেকে এসএমএসর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। গতকাল তারা সবাই মডার্নার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপপরিচালকের কার্যালয় থেকে বলা হয়, মডার্নার টিকা দ্বিতীয় ডোজ যাদের বাকি ছিল, তাদের দেয়া শুরু হয়েছে। মোট ১৫০ ভায়াল মডার্নার টিকা পেয়েছে মুগদা হাসপাতাল। এছাড়া ফাইজার, সিনোফার্ম ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে মুগদা হাসপাতালে আসা ফয়সাল সরকার শেয়ার বিজকে জানান, তিনি বিদেশে যাবেন। তাই জরুরি ভিত্তিতে টিকা পেতে ৩১ অক্টোবর রেজিস্ট্রেশন করে তিনি এসএমএস পেয়ে গেছেন। তার টিকা গ্রহণের তারিখ ছিল গতকাল (১ নভেম্বর)। কিন্তু তার কেন্দ্র দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফাইজারের টিকা নেই। তাই তাকে মুগদা হাসপাতালে আসতে বলা হয়েছে।
ফাইজারের টিকা তো নির্দিষ্ট কেন্দ্রে দেয়া হয়, তাহলে আপনি কেন কেন্দ্র হিসেবে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দিলেন? জানতে চাইলে ফয়সাল সরকার বলেন, ‘আমি একটি দোকানে রেজিস্ট্রেশন করেছি। তারা ৯০০ টাকা নিয়েছে। তারাই কেন্দ্র দিয়েছে। আমি তো এসব বুঝি না। তারাই আমাকে আবার মুগদা হাসপাতালে আসতে বলেছে।’
ফয়সাল সরকারের ঘটনা উল্লেখ করে সমাধান জানতে চাইলে মুগদা হাসপাতালের উপপরিচালকের কার্যালয় থেকে শেয়ার বিজকে বলা হয়, প্রত্যয়নপত্র নিয়ে এলে টিকা দিতে পারবেন।
পরে মোবাইল ফোনে মুগদা হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, যারা পাসপোর্ট দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। তাদের অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে যারা জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন তাদের এসএমএস দেরিতে যাচ্ছে। আমরা গতকাল থেকে মডার্নার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিচ্ছি। এতদিন আমাদের কেন্দ্রে মডার্নার টিকা ছিল না।
এন্ট্রি না করেও টিকা নিচ্ছেন কেউ কেউ। এ বিষয়ে উপপরিচালক ডা. মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। এমন কিছু ঘটলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
গত শনিবার দুপুর ১২টার দিকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার স্বেচ্ছাসেবকরা হাঁকডাক দিচ্ছেন, ‘ফাইজার লাগবে ফাইজার’। সেখানে তুলনামূলক কম টিকাগ্রহীতা ছিলেন। পরিচালকের কার্যালয়ে গেলে সেখানে কয়েক জনকে পাওয়া যায়, যারা এসএমএস সমস্যার সমাধান নিতে এসেছেন। কিন্তু আনসার সদস্য ইকরাম তাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না।
এক ভুক্তভোগী জানান, তিনি ২৬ অক্টোবর একবার এসেছিলেন। তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তাই আবার এসেছেন। এছাড়া আরেক ভুক্তভোগী জানান, তিনি ২৩ অক্টোবর টিকা দিয়েছেন। কিন্তু এখনও তথ্য আপডেট করা হয়নি। তাই তিনি সনদ সংগ্রহ করতে পারছেন না।
এসব বিষয়ে জানতে প্রথমে পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে আনসার সদস্য ইকরাম বাধা দেন। পরে উপ-পরিচালক কিংবা সহকারী পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। আনসার সদস্য ইকরাম দরজায় আটকিয়ে অপর প্রান্তে বসে থাকেন।
পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষমাণ ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আনসার সদস্য ইকরাম তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয় না।
এতদিন পর গতকাল আবার মডার্নার টিকা প্রয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও টিকা কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, যখনই চাহিদা দেয়া হয়েছে, আমরা টিকা পাঠিয়ে দিয়েছি।
মাসের পর মাস এসএমএস না পাওয়া ও টিকাকেন্দ্র থেকে দেরিতে মডার্নার টিকা প্রয়োগ করার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা তারা (টিকাকেন্দ্র) বলতে পারবে। এটা তো আমরা দেখি না। আমরা শুধু ডিস্ট্রিবিউশন করি।