Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 5:45 pm

কভিডের টিকা বনাম স্বাস্থ্যবিধি: মাস্ক

ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপিক অণুজীব করোনাভাইরাসের দাপটে সারা পৃথিবী স্তব্ধ। প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাসের ট্রান্সমিশন চ্যানেল ভাঙতে এখন পর্যন্ত কার্যকর অস্ত্র হিসেবে রয়েছে সুরক্ষাসামগ্রী মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রভৃতি। এছাড়া লকডাউন-শাটডাউনসহ সর্বশেষ টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। কিন্তু কোন পন্থাটি বেশি কার্যকরÑএমন প্রশ্ন অনেকের।
করোনা সংক্রমণ-সংক্রান্ত কিছু তথ্য
এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা করোনা সংক্রমণের প্রধান পথ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন নাক, মুখ, চোখ, হাত ও রেসপিরেটরি পার্টিকেল নামের বাহন। এই বাহন আবার আকার ও সংক্রমণ সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে দুই রকম। একটি হলো রেসপিরেটরি ড্রপলেট (৫-১০০০ মাইক্রোমিটার) এবং অন্যটি রেসপিরেটরি নিউক্লিয়াই অথবা এরোসল (১-৫ মাইক্রোমিটার)। করোনা সংক্রমণের জন্য রেসপিরেটরি ড্রপলেট এবং হ্যান্ড-ফোমাইটসের মাধ্যম দায়ী ৯৯ শতাংশ। আর মাত্র এবং শতাংশ দায়ী রেসপিরেটরি এরোসল। রেসপিরেটরি পার্টিকেল তৈরি হয় মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস, কথাবার্তা, গান, বক্তৃতা, হাঁচি-কাশি প্রভৃতির সময়।
মানুষের হাঁচি-কাশির সময় যে রেসপিরেটরি ড্রপলেট বের হয়, তা বাইরে এসে তিন ভাগ হয়। প্রথমাংশ নিজের জামাকাপড়, চেয়ার-টেবিল প্রভৃতিতে পড়ে, দ্বিতীয়াংশ ড্রপলেট হিসেবেই মাটিতে পড়ে এবং সর্বশেষ অংশ ড্রপলেট ভেঙে রেসপিরেটরি এরোসল হিসেবে বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
আমেরিকান জার্নাল অব রেসপিরেটরি অ্যান্ড ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, একটি কাশি ও হাঁচিতে যথাক্রমে তিন হাজার ও ৪০ হাজার রেসপিরেটরি ড্রপলেট (৫-১০০০ মাইক্রোমিটার) বের হয়ে আসে। ১০০ ও ১০ মাইক্রোমিটার সাইজের একটি ড্রপলেট যথাক্রমে ১০ ও ২০ সেকেন্ডের মধ্যে মাটিতে পড়ে। একজন সুপারস্প্রেডার একটি জোরে হাঁচিতে ২০ কোটি ভাইরাস পার্টিকেল ছাড়ে। আবার ১-৫ মাইক্রোমিটার সাইজের রেসপিরেটরি ড্রপলেট নিউক্লিয়াই হালকা হওয়ার কারণে চলমান বাতাসে ঘুরে বেড়ায়। একজন করোনা-আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে এক টেবিল বা পাশাপাশি টেবিলে বসে কথা বলা, খাওয়াদাওয়া বা মুখোমুখি কথাবার্তায় ১০ মিনিটের মধ্যে অন্য সবাই সংক্রমিত হতে পারে। এ ব্যাপারে নিয়ম হলো, যত বেশি ভাইরাল লোড, যত বদ্ধ ঘর এবং যত সময় যত অন্য কো-মর্বিড রোগী একসঙ্গে অবস্থান করবেÑসে অনুপাতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তত বাড়বে। এ অবস্থায় বদ্ধ ঘরে স্পিলিট এসি চালু থাকলে ওই রুমে অবস্থানকারী সবাই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁঁকিতে পড়ে। কারণ স্পিলিট এসি ঘরের বাতাস টেনে নিয়ে ঠাণ্ডা করে আবার ঘরেই ছেড়ে দেয়। [ক্রমশ]

ডা. মো. তৌহিদ হোসাইন
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
হিস্টোপ্যাথলজি বিভাগ, এনআইকেডিইউ