শেয়ার বিজ ডেস্ক: শীতে জার্মানিতে শুরু হয়েছে কভিডের চতুর্থ ঢেউ। ফলে দেশটিতে বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার। কভিডের প্রভাবে জার্মানির ভোক্তা আত্মবিশ্বাস হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে শীতে গৃহস্থালি পণ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে মূল্যস্ফীতি। গতকাল জিএফকে ইনস্টিটিউট এক গবেষণা জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে দেখা হয়, কভিডের চতুর্থ ঢেউয়ের প্রভাবে নভেম্বরে ভোক্তা আত্মবিশ্বাস আগের মাসের চেয়ে এক শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। খবর: গার্ডিয়ান, ডিডব্লিউ।
জিএফকে ইনস্টিটিউট জানায়, তারা দুই হাজারের বেশি জার্মান নাগরিকের ওপর গবেষণা জরিপ চালায়। সেখানে বলা হয়, আগামী ডিসেম্বরে জার্মানির মূল্যস্ফীতি দ্রুত বাড়ছে। অন্যদিকে ভোক্তা ব্যয় হ্রাস পাচ্ছে। যদিও শীতকাল জার্মানিদের জন্য উৎসব ও কেনাকাটার মৌসুম।
তৃতীয় প্রান্তিকের জিডিপিও হ্রাস: এদিকে গতকাল জার্মানির আর্থিক প্রবৃদ্ধি তথা জিডিপি প্রবৃদ্ধি হারের সংশোধনী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সংশোধনী ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জার্মানি দেশজ উৎপাদন জিডিপি হ্রাস পেয়েছে। আগের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির প্রবৃদ্ধি বাড়লেও তা ছিল ধীরগতি। এর পরিমাণ ছিল এক দশমিক আট শতাংশ।
তবে সংশোধনী প্রতিবেদনে বলা হয়, জিডিপি শূন্য দশমিক এক শতাংশ কমে এক দশমিক সাত শতাংশ হয়েছে। এর আগে দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল দুই শতাংশ; যা ছিল ইউরো জোনের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল প্রবৃদ্ধি। যদিও যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় প্রান্তিকের এক দশমিক তিন শতাংশের চেয়ে তৃতীয় প্রান্তিকে বেড়ে দুই দশমিক দুই শতাংশ হয়েছে।
কভিডে মৃত্যু লাখ ছাড়াল: চলতি শীত মৌসুমে ইউরোপের প্রায় সব দেশেই আবারও বাড়ছে কভিড সংক্রমণ ও মৃত্যুহার। জার্মানিতেও ব্যতিক্রম নয়। দেশটিতে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় এ পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দেশটির প্রধান সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান রবার্ট কোচ ইনস্টিটিউট (আরকেআই) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে মহামারির শুরুর থেকে এ পর্যন্ত জার্মানিতে করোনায় মারা গেছেন মোট ১ লাখ ৪৮১ জন এবং এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৫৫ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৫ জন। তার মধ্যে বৃহস্পতিবার নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৭৩ হাজার ৯৬৬ এবং এ রোগে এদিন দেশটিতে মারা গেছেন ৩৫১ জন।
মহামারির শুরু দিকে ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল জার্মানির পরিস্থিতি; কিন্তু গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ-মৃত্যুর উল্লম্ফনের কারণে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা খুব দ্রুতই করোনার ইউরোপীয় উপকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে যাবে দেশটি।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় অবশ্য কিছু পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নিয়েছে সরকার। এসবের মধ্যে রয়েছেÑজনগণকে টিকার ডোজ নিতে উৎসাহিত করা, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য টিকার ডোজ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা এবং যারা এখনও টিকার ডোজ নেননি, তাদের রেস্তোরাঁ, পানশালা, সিনেমা হল, ব্যায়ামাগারসহ যাবতীয় জনসমাগমপূর্ণ স্থানে যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়া।
শলৎসের নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসছে নতুন জোট: এদিকে জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন এসপিডি দলের ওলাফ শলৎস। বুধবার তিনি শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে কোয়ালিশন চুক্তি প্রকাশ করেছেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর একাধিক ক্ষেত্রে আমূল সংস্কার করতে চায় নতুন এ জার্মান সরকার। আগামী ৬ ডিসেম্বর এ জোটের ক্ষমতা গ্রহণের কথা রয়েছে।
ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, চরম গোপনীয়তার মধ্যে আলোচনা চালিয়ে জার্মানির তিনটি রাজনৈতিক দল পরবর্তী জোট সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে। সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি, উদারপন্থি এফডিপি ও পরিবেশবাদী সবুজ দলকে এবার শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে কোয়ালিশন চুক্তির অনুমোদন করতে হবে। এরপরই মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করে ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বে জার্মানির পরবর্তী সরকার কার্যভার গ্রহণ করতে পারবে। ৬ ডিসেম্বর ফেডারেল জার্মানির নবম চ্যান্সেলর হিসেবে শপথ নিতে পারেন ওলাফ শলৎস। সেইসঙ্গে অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটবে।