কভিডে বিপুল সুদ মওকুফ করেছে ব্যাংক

জয়নাল আবেদিন: কভিড মহামারির কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, কমেছে মুনাফা এবং আটকে গেছে ব্যাংকঋণ। আটকে থাকা ঋণ আদায়ে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে ব্যাংক। এর মধ্যে একটি প্রক্রিয়ার নাম সুদ মওকুফ। অল্প ছাড় দিয়ে বড় স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যাংকগুলো এ পথ বেছে নিয়েছে। তথ্যমতে, করোনায় বিধ্বস্ত দুই বছরে তিন হাজার ৪৩৩ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে এক হাজার ৮৫৫ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এছাড়া ২০২০ সালে এক হাজার ৫৭৮ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করা হয়েছে। সবমিলে তিন হাজার ৪৩৩ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করা হয়েছে গত দুই বছরে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুদ মওকুফ করে ব্যাংকগুলো ঋণ আদায়ের চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি ঋণ খেলাপি হওয়া থেকে রক্ষা করা হয়েছে গ্রাহককে। তারপরও বাড়ছে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ। কারণ ২০২১ সাল শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপির পরিমাণ পৌঁছেছে এক লাখ তিন হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। কিন্তু এক বছর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। সুতরাং ব্যাংক খাতে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। করোনার কারণে ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধে যে ছাড় দেয়া হয়েছিল, ধাপে ধাপে তা উঠিয়ে নেয়া হয়। তারই প্রভাব পড়েছে খেলাপি ঋণে।

ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা দেয়া হলে ব্যাংকের নিট আয় কমে যায়, যার ফলে আমানতকারীদের সুদ আয় কমে যায়, ডিভিডেন্ড কম হয় এবং সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। আবার কিছু ছাড় দিয়ে যদি ব্যাংকের বড় স্বার্থ রক্ষা করা যায়, তাও ব্যাংকের জন্য লাভজনক।

‘ব্যাংকিং কোম্পানি আইন, ১৯৯১’-এর ধারা-৪৯ (চ)-তে বলা হয়েছে, ‘ঋণ শৃঙ্খলার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণভাবে সব ব্যাংক-কোম্পানি বা কোনো বিশেষ ব্যাংক-কোম্পানি বা বিশেষ শ্রেণির ব্যাংক-কোম্পানির জন্য ঋণ শ্রেণিকরণ ও সঞ্চিতি সংরক্ষণ, ঋণ মওকুফ, পুনঃতফসিলীকরণ কিংবা পুনর্গঠন-সংক্রান্ত বিষয়সমূহে বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণীয় নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।’ ওই বিধান মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৯১ সালে বিসিডি পরিপত্রমূলে নির্দেশ প্রদান করে যে, প্রতিটি ব্যাংক তাদের নিজস্ব নীতিমালার মধ্যে সুদ মওকুফ করতে পারবে, তবে আসল (প্রিন্সিপাল) মওকুফ করা যাবে না।

অপরদিকে এক বছরের ব্যবধানে ঋণ অবলোপনের পরিমাণও বেড়েছে ব্যাপক হারে। কারণ গত বছর (২০২১) দুই হাজার ৪৪০ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ঋণ অবলোপন করেছে ব্যাংক। কিন্তু এক বছর আগে অবলোপনের অঙ্ক ছিল ৯৭০ কোটি টাকা। সুতরাং এক বছরের ব্যবধানে এক হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ অবলোপন বেড়েছে।

হিসাব অনুযায়ী, গত দুই বছরে (২০২০ ও ’২১) মোট তিন হাজার ৪১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ঋণ অবলোপন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা গেছে, ১০ বছরে ঋণ অবলোপন বেড়েছে ২৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। ব্যালেন্স শিট পরিষ্কার রাখতে সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংক এই কৌশলী অবস্থান নিচ্ছে। একই সময়ে খেলাপি ঋণের হার ছয় থেকে বেড়ে ১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিআইবিএমের হালনাগাদ গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পুরো ব্যাংক খাতে ঋণ অবলোপনের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ২৭০ কোটি টাকা, যেক্ষেত্রে ২০০৯-১০ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ১০ বছরে ঋণ অবলোপন বেড়েছে ২৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন,

করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সরকারও চায়, আমরা ব্যবসায়ীদের সাহায্য করি। সুতরাং সুদ মওকুফ করে যদি প্রিন্সিপাল (আসল) ফেরত পাওয়া যায়, তাহলে আমি মনে করি, এটা খারাপ জিনিস নয়। অনেক গ্রাহকের লোন রিকভার করতে এটা সাহায্য করবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০