কভিডে স্কুল বন্ধ রাখার শীর্ষে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে স্কুল বন্ধ রাখায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সবার শীর্ষে। বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৬১ সপ্তাহ ধরে স্কুল বন্ধ। সমান ৬১ সপ্তাহ স্কুল বন্ধ রেখে পরের অবস্থানে রয়েছে ভেনেজুয়েলা। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি-বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো এসব তথ্য জানিয়েছে।

কভিডকালে বিশ্বের যেসব দেশে স্কুল বন্ধ রাখা হয় তার একটি তালিকা ৩০ আগস্ট প্রকাশ করেছে ইউনেস্কো। তালিকায় ১২টি দেশের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকার প্রথম ১১টি দেশে স্কুল বন্ধ রাখা হয়। তবে কভিড পরিস্থিতির মধ্যেও স্কুল বন্ধ রাখেনি যুক্তরাষ্ট্র। ফলে তালিকার সর্বশেষ ১২তম স্থানে রয়েছে দেশটি। আর স্কুল বন্ধ রাখা ১১ দেশের ৯টি দেশই দক্ষিণ এশিয়ার।

ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে স্কুল বন্ধ ছিল ৬১ সপ্তাহ। সপ্তাহের হিসেবে সমানসংখ্যক দিন স্কুল বন্ধ রেখে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভেনেজুয়েলা। এর পরের আটটি দেশই দক্ষিণ এশিয়ার। তালিকার তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশটি স্কুল বন্ধ রেখেছে ৪৬ সপ্তাহ। ৩৩ সপ্তাহ স্কুল বন্ধ রেখে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে নেপাল।

এর পরের অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান। তালেবানের সঙ্গে আফগান সরকারের লাগাতার সংঘর্ষের মধ্যেও দেশটি কভিড পরিস্থিতি সামলে খুলে দিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তারা স্কুল বন্ধ রেখেছে ৩০ সপ্তাহ।

ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। বিশ্বজুড়ে কভিড সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যায় ভারত সবসময় শীর্ষ তিনের মধ্যেই থেকেছে। এর পরও দেশটিতে স্কুল বন্ধ ছিল মাত্র ২৫ সপ্তাহ। ভারতের চেয়ে দুই সপ্তাহ কম স্কুল বন্ধ রেখে তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে পাকিস্তান। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে স্কুল বন্ধ ছিল ২৩ সপ্তাহ।

২০ সপ্তাহ স্কুল বন্ধ রেখে ভুটান অষ্টম, ১৪ সপ্তাহ বন্ধ রেখে মালদ্বীপ নবম, ৯ সপ্তাহ বন্ধ রেখে চীন দশম ও মাত্র পাঁচ সপ্তাহ স্কুল বন্ধ রেখে তালিকার ১১তম স্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড।

বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম কভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হন। এরপর ১৬ মার্চ সরকার ঘোষণা দেয় ১৭ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্কুল-কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। এরপর দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়।

গত ১৮ আগস্ট এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি শিগগির স্কুল খুলে দেয়ার তাগিদ দেন। এরপর স্কুল খুলতে তৎপর হন সংশ্লিষ্টরা।

১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে বলে জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২ সেপ্টেম্বর রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে টকশোতে অংশ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ কথা জানান। পরের দিন ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী চাঁদপুরে সদর উপজেলার শাহ মাহমুদপুর ইউনিয়নের মহামায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের উদ্বোধন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, সর্বশেষ সিদ্ধান্তে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছিল। আমরা আশা করছি, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারব ইনশাআল্লাহ।

তবে স্কুল-কলেজে সশরীরে ক্লাস চালুর পর প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে এক দিন ক্লাস নেয়ার পরিকল্পনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ার উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

সেখানে তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী যে সুনির্দিষ্ট তারিখ (১২ সেপ্টেম্বর) ঘোষণা করেছেন, ওইদিন থেকে শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে ক্লাস শুরু করতে পারব। প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে এক দিন করে ক্লাস নেয়ার কথা চিন্তা করছি। তবে এটা পরিবর্তন হতে পারে। হয়তো আরও বেশিদিন শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আনতে পারব। আপাতত আমাদের পরিকল্পনা এটাই। কয়দিন শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আনার বিষয়ে সম্মত হয়েছি। তবে এর জন্য সর্বশেষ দিন (১১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এদিকে শিক্ষা উপমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। ১২ সেপ্টেম্বর আবার কোনো কারণ দেখিয়ে স্কুল খোলা হবে না বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ট্রল করেছেন অনেকে। ফলে স্কুল খোলা নিয়ে ফের এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০