Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 5:29 pm

কভিড টিকায় চীনা প্রাধান্য বাংলাদেশের

শেখ আবু তালেব: করোনার প্রতিষেধক হিসেবে বাংলাদেশে শেষ পর্যন্ত চীনের তৈরি সিনোফার্মার টিকাই প্রাধান্য পেল। চীনের কাছ থেকে ৭৫ মিলিয়ন বা সাড়ে সাত কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি সই হয়েছে। এর মধ্যে দেড় কোটি ডোজের অর্থ এরই মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। ধাপে ধাপে এসব টিকা বাংলাদেশে আসবে। চলতি মাসেই সিনোফার্ম থেকে আরও ৩৪ লাখ ডোজ টিকা আসবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন।

দেশে বিভিন্ন উৎস থেকে অনুদান ও ক্রয়ের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জাপান মিলিয়ে মোট টিকা এসেছে দুই কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০টি। আর ৫৩ লাখ ব্যক্তির দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া বাকি আছে। দ্বিতীয় ডোজের জন্য টিকা সংরক্ষণ করায় মজুত কমে এসেছে।

এ পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে এক কোটি ৯ হাজার ৯৫৩ জনকে। এর মধ্যে দুই ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে ৪৪ লাখ ১৬ হাজার ১৩১ জনকে। এজন্য অবশিষ্ট রয়েছে ৫৬ লাখ ২৪ হাজার ডোজ টিকা গতকাল পর্যন্ত। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন তিন লাখের বেশি ডোজ টিকা দেয়া হচ্ছে। টিকা গ্রহণে গতকাল পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন এক কোটি ৮০ লাখ ৮৫৪ জন।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিবন্ধনকারীদের টিকা দিতে প্রয়োজন হবে মোট তিন কোটি ৬০ লাখ ডোজের বেশি। আর এ পর্যন্ত এসেছে দুই কোটি ৫৬ লাখ। নিবন্ধনের চেয়ে মজুত টিকার সংগ্রহ কম রয়েছে। এজন্য আগামী ৭ আগস্ট থেকে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে গণটিকা দেয়া শুরুর কথা থাকলেও তা থেকে সরে এসেছে সরকার। যদিও দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এতে প্রয়োজন হবে প্রায় ২৬ কোটি টিকা।

আগামী ৭ আগস্ট থেকে গণটিকা দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শুধু ৭ আগস্ট এক দিনের জন্য সারা দেশে পরীক্ষামূলকভাবে টিকা দেয়া হবে। এ দিন ৩২ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, টিকার সংগ্রহ বাড়লে আগামী ১৪ থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত সাত দিনের জন্য গণহারে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, প্রতিটি ইউনিয়নে সপ্তাহে দু’দিন নিয়মিত টিকাদান ঠিক রাখা হবে। এর বাইরে তিন দিন করোনার টিকা দেয়া হবে।

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল জানিয়েছেন, চীনের কাছ থেকে ৭৫ মিলিয়ন বা সাড়ে সাত কোটি টিকা কেনার চুক্তি সই হয়েছে। দেড় কোটি ডোজের অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। ধাপে ধাপে এ টিকা বাংলাদেশে আসবে চীন থেকে। চলতি মাসেই আরও আসবে ৩৪ লাখ ডোজ।

এসব মিলিয়ে দেখা যায়, কভিড-১৯ টিকাদানে বাংলাদেশ এখন চীনের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়ল। আবার সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশেই যৌথভাবে উৎপাদন শুরু করা হবে। এটি হলে বাংলাদেশকে নতুন করে অন্য কোনো দেশ থেকে টিকা সংগ্রহের প্রয়োজন হবে না।

স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে টিকার প্রথম ডোজের চালান আসে গত ২১ জানুয়ারি। এরপর গত ৭ ফেব্রুয়ারি টিকাদান শুরু হয়। মূলত প্রতিবেশী দেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। হঠাৎ করেই বাংলাদেশে টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতে থমকে যায় টিকাদান কর্মসূচি। তখন বিভিন্ন দেশে থেকে টিকা সংগ্রহে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয় সরকার। এতে কিছুটা সময় পরে সফলতাও মেলে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান থেকে টিকা আসায় এ কার্যক্রম আবার গতি পায়। চীনও সিনোফার্মের টিকা সরবরাহের গতি বাড়িয়ে দেয়।

টিকার সর্বশেষ চিত্র নিয়ে গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, চলতি মা?সে চী?নের সি?নোফার্ম থে?কে আস?বে ৩৪ লাখ ডোজ টিকা। আর কোভ্যাক্সের আওতায় অ্যাস্ট্রাজে?নেকার আরও ১০ লাখ ডোজ টিকা দেশে আসবে। এছাড়া আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ফাইজার থেকে আরও ৬০ লাখ ডোজ টিকা আসবে দেশে।

টিকা মজুত করার সক্ষমতা রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অনেক টিকা আসছে। এ নিয়ে স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন আমাদের টিকা রাখার ব্যবস্থা আছে।’

জানা গেছে, চলতি মাসের মধ্যেই অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। আর আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ৬০ লাখ ফাইজারের টিকা আসবে। টিকার যৌথ উৎপাদন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, চীন, বাংলাদেশ ও ইনসেপ্টার সঙ্গে যৌথভাবে দেশেই টিকা উৎপাদন করা হচ্ছে। ইনসেপ্টা তৈরি হওয়া টিকা দেশে নিয়ে আসবে। এখানে শুধু বোতলজাত, মোড়ক ও সংরক্ষণ করা হবে।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারতের করোনা পরিস্থিতি আরেকটু উন্নতি হলে নয়াদিল্লি থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসবে।