Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:57 am

কভিড শনাক্ত ফের ১০ হাজার ছাড়াল

নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯-এর নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তারের মধ্যে পাঁচ মাস পর দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আবার ১০ হাজারের ঘর ছাড়িয়ে গেল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সোয়া ৪১ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ১০ হাজার ৮৮৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। নতুন রোগী পাওয়া গেছে দেশের ৬৪ জেলাতেই। এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ গত বছরের ১০ আগস্ট। সেদিন ১১ হাজার ১৬৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। বুধবার ৯ হাজার ৫০০ নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে হিসেবে গত এক দিনে রোগী বেড়েছে এক হাজার ৩৮৮ জন, বা ১৪ দশমিক ৬১ শতাংশ।

জানুয়ারির প্রথম দিনও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল চারশর নিচে, ৬ জানুয়ারি তা হাজার ছাড়ায়, ১৬ জানুয়ারি পেরিয়ে যায় পাঁচ হাজারের ঘর। এরপর মাত্র চার দিনে তা দ্বিগুণ হলো। গতকাল নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্ত হওয়ার হার আরও বেড়ে ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়েছে, যা গত বছরের ৫ আগস্টের পর সর্বোচ্চ। সেদিন শনাক্ত হওয়ার হার ছিল ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ। মহামারির বছর গড়ানোর পর ডেল্টার দাপটে বাংলাদেশে দিনে রোগী শনাক্ত হওয়ার হার ৩২ শতাংশে উঠেছিল ২০২১ সালে। তবে এরপর সংক্রমণের হার কমতে কমতে দুই শতাংশের নিচে নেমে এসেছিল। ওমিক্রনের প্রভাবে ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকে আবার তা বাড়ছে। দৈনিক নমুনা পরীক্ষা বাড়লে এ হার ৪০ শতাংশও হতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকে ধারণা করছেন।

নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ১৮২ জনে। গত এক দিনে আরও চারজনের মৃত্যু হওয়ায় এ মহামারিতে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৮ হাজার ১৮০ জনে দাঁড়াল। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন ৫৭৭ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৫ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন। এ হিসেবে দেশে এখন সক্রিয় কভিড রোগীর সংখ্যা ৭০ হাজার ১৫৭ জন। অর্থাৎ এই সংখ্যক রোগী নিশ্চিতভাবে সংক্রমিত অবস্থায় রয়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৫৯ হাজার ৮৫০ জন। ১০ জানুয়ারি ছিল ১৬ হাজার ৭১৩ জন। অর্থাৎ মাত্র ১০ দিনে সক্রিয় রোগী বেড়ে প্রায় চারগুণ হয়েছে। মহামারির মধ্যে সার্বিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর মৃত্যুহার এক দশমিক ৭০ শতাংশ।

গত এক দিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে সাত হাজার ৮৪৩ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্ত রোগীর প্রায় ৭২ শতাংশের বেশি। এ বিভাগের মধ্যে ঢাকায় সাত হাজার ৩৪৯, গাজীপুরে ১২৯ ও নারায়ণগঞ্জে ১০৭ জনের কভিড শনাক্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৯৩০, কক্সবাজারে ১৪১; রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী জেলায় ১৫৬, বগুড়ায় ১৩৭ ও সিলেটে ২২৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে। যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন এক পুরুষ ও তিন নারী। তাদের মধ্যে দুজন ছিলেন ঢাকা বিভাগের। বাকি দুজন চট্টগ্রাম বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে একজনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, একজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, একজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ও একজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এ বছর ১২ জানুয়ারি তা ১৬ লাখ পেরিয়ে যায়। তার আগে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত বছর ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ নতুন রোগী শনাক্ত হয়।

প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বছর ৫ ডিসেম্বর কভিডে মোট মৃত্যু ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার আগে ৫ ও ১০ আগস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারির মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা। বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে ৫৫ লাখ ৬৬ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ৩৩ কোটি ৮০ লাখের বেশি রোগী।