শেয়ার বিজ ডেস্ক: কভিড-১৯ মহামারি বিশ্বব্যাপী শুধুমাত্র ২০ লাখ মানুষকে আক্রান্তই করেনি, পাশাপাশি আইসোলেশনের মধ্যে বসবাস করার কারণে সমগ্র জনসংখ্যার উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে দীর্ঘস্থায়ীভাবে।
এই বিপর্যয়কে বিবেচনায় নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি পরামর্শক ও সফটওয়্যার প্রযুক্তি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইজেনারেশন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ‘বিটকরোনা’ নামে করোনা সনাক্তের কৃত্তিম বৃদ্ধিমত্তা টুল উন্মোচন করেছে। ইজেনারেশনের তৈরি করা করোনাবট এবং এক্স-রে ইমেজ অ্যানালাইসিস টুল অধিকতর উন্নত উপায়ে ও দ্রুতগতিতে করোনাভাইরাস সনাক্ত করতে পারে।
ব্যবহারকারী যাতে নিজেই কভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত কিনা সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সেজন্য ইজেনারেশন করোনাবটকে সেলফ-টেস্টিং টুলস হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। এটি ব্যবহারকারীকে নিজে থেকেই তাৎক্ষণিকভাবে আইসোলেশনে থাকতে উদ্ভুদ্ধ করে এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে রোগ সনাক্তকরণের আগে প্রাথমিক চিকিৎসায় বেশি সময় না দিয়ে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সংকটপূর্ণ রোগীদের অধিক সময় দিতে পারেন সেটি নিশ্চিত করে। ব্যবহারকারীদের প্রশ্ন বুঝতে পারা এবং সেটির যথাযথ উত্তর দেয়ার জন্য করোনাবটটিতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করা হয়েছে। বটটি ইংরেজি, বাংলা এবং বাংলা ভাষাকে ইংরেজি হরফে লেখা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।
এর পাশাপাশি, ইজেনারেশন মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির মাধ্যমে এক্স-রে ছবি বিশ্লেষণী টুল তৈরি করেছে যা বুকের এক্স-রে ছবি দেখে কোভিড-১৯ সনাক্তকরণে কার্যকরী পদ্ধতি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই টুল ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা সুস্থ আছেন কিনা, মৃদু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কিনা অথবা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন কিনা সেটি জানা যাবে। ইজেনারেশন বিটকরোনা (http://beatcorona.egeneration.co/) ওয়েবসাইটে গিয়ে এক্স-রে ছবি আপলোড করলে টুলটি ফলাফল দেখাবে। এক্ষেত্রে দুটি মেশিন লার্নিং মডেল ব্যবহার করা হয়েছে, ফিড-ফরোয়ার্ড নিউরাল নেটওয়ার্ক এবং কনভোলিউশনাল নিউরাল নেটওয়ার্ক; যা ইটালি এবং ভারতের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সংগ্রহীত ডেটা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত। এই এক্স-রে বৃহৎ স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে সহজে ও দ্রুততম সময়ে করোনাভাইরাস সনাক্ত করবে এবং এর ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার হার সফলভাবে হ্রাস পাবে।
ইজেনারেশন গ্রুপের চেয়ারম্যান শামীম আহসান বলেন, ইজেনারেশন বিগত দুই বছর ধরে স্বাস্থ্যসেবা সফটওয়্যার ও অ্যানালিটিক্স নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করে আসছে এবং এর প্রেক্ষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির যে সক্ষমতা আমাদের তৈরি হয়েছে সেটি ব্যবহার করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের এই সল্যুশনগুলি আমরা স্বল্প সময়ে তৈরি করতে পেরেছি। ইজেনারেশন থেকে করোনাভাইরাস এর মতো মহমারী প্রতিরোধ সহ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ও সুস্থতার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা বিনিয়োগ করে যাব এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে এ ধরণের সেবা পৌঁছে দেবার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা খাতে আমরা গুরূত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারব বলে আশা রাখছি।
ইজেনারেশনের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), ন্যাচারাল লাঙ্গুয়েজ প্রেসেসিং এবং ব্লকচেইন বিভাগের প্রধান সাব্বির আরিফ সিদ্দিক বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সরকার এবং আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য মেশিন লার্নিং এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছি। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণও যেন এই সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করতে পারে, ই-জেনারেশন বিটকরোনা- আমাদের সেই প্রচেষ্টারই অংশ।
ইজেনারেশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, যেহেতু এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কোনো কার্যকরী চিকিৎসা আবিস্কার হয়নি তাই যথাযথ জ্ঞান এবং সচেতনতাই এই মহামারী মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আবশ্যক। এক্ষেত্রে নিজেই নিজের প্রাথমিক পরীক্ষা করা জরুরী হয়ে পড়েছে- যা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বাধ্যতামূলক। এছাড়া এই টুল ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর চাপ কমবে, যারা অসংখ্য করোনা রোগীর পরীক্ষার ফলাফল যাচাইয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
আগ্রহীরা তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা যাচাইয়ে এবং বিস্তারিত জানতে বিট করোনার ওয়েবসাইটে (http://beatcorona.egeneration.co/) ভিজিট করতে পারেন।