কমছে ডলারের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছরের শুরু থেকে নিয়মিত বাড়তে থাকে ডলারের দাম। আন্তঃব্যাংক থেকে শুরু করে মানি এক্সচেঞ্জ সব পর্যায়ে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে ডলার বিক্রি হয়। তবে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে কমতে শুরু করেছে ডলারের দাম। দুই সপ্তাহে কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে নগদ ডলার ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। চলতি সপ্তাহের গতকাল মঙ্গলবার সেটি নেমে এসেছে ১০৯ টাকায় ৫০ পয়সায়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলাবাজারে ডলারের দাম কমেছে ১০ টাকা।

খুচরা ডলার বিক্রেতারা জানান, ‘মার্কেটে ডলারের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। সবাই এখন বিক্রি করতে আসেন। কেউ কিনতে আসেন না। এতদিন যারা বেশি লাভের আশায় ডলার কিনে মজুত করেছিলেন, তারা সবাই এখন বিক্রি করতে আসছেন। সে কারণেই দুর্বল হচ্ছে ডলার, মান বাড়ছে টাকার।’

এদিকে খোলাবাজারের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোয় নগদ ডলারের দাম কমতে শুরু করেছে। গতকাল ব্যাংকগুলো আমদানির এলসি খুলতে ১০৫ টাকা নিয়েছে। আর ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় সংগ্রহ করেছে ১১০ টাকায়। এছাড়া গতকাল ৯৫ টাকায় ব্যাংকগুলোর কাছে ৭০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটাকে আন্তঃব্যাংক বা ইন্টারব্যাংক রেট বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এই রেট গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে কার্যত অচল অবস্থায় রয়েছে। এ রেটে কেউ লেনদেন করেনি। কারণ ব্যাংকগুলো এখনও এই দরের চেয়ে ৯ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে। আমদানি ঋণপত্র খুলতে নিচ্ছে ১০৪ থেকে ১০৫ টাকা। এদিকে ব্যাংকগুলোর ডলার সংকট মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১৯৯ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে।

ব্যাংকাররা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে শুধু জ্বালানি তেল, সারসহ সরকারি কেনাকাটার জন্য সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি পর্যায়ে পণ্য আমদানিতে ডলার সরবরাহ করতে ব্যাংকগুলো পড়েছে বেকায়দায়।

এদিকে দেশে ডলারের সংকট কাটাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানিতে দেয়া হয়েছে নানা শর্ত। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে দেয়া হয়েছে নীতিগত ছাড়। এছাড়া ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ডলার কারসাজির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ধরতে চালাচ্ছে অভিযান। অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। আর মানি এক্সচেঞ্জর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে ব্যাংকের এডি লাইসেন্স ছাড়া ব্যাংকের শাখায় ডলার বেচাকেনার সুযোগ দিতে যাচ্ছে। গত সোমবার পর্যন্ত ৩০টি ব্যাংক ৯৮৮ শাখায় বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমাতে আমদানিতে রাশ টানার উদ্যোগ শুরু হয় গত মে মাস থেকে। গত ৪ জুলাই এক্ষেত্রে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। গাড়ি, সোনা, টিভি, ফ্রিজসহ ২৭ ধরনের পণ্য আমদানির এলসি মার্জিন নির্ধারণ করা হয়েছে শতভাগ। আর জ্বালানি, অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, শিল্পে ব্যবহারের কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ কিছু পণ্য বাদে অন্য সবক্ষেত্রে এলসি মার্জিনের ন্যূনতম হার হবে ৭৫ শতাংশ। উভয় ক্ষেত্রে মার্জিনের জন্য ঋণ দেয়া যাবে না। এর মানে এলসি খোলার সময়ই আমদানিকারকের নিজস্ব উৎস থেকে পুরো অর্থ নগদে দিতে হবে।

এর আগে গত ১০ মে’র নির্দেশনায় ডলারের সরবরাহ বাড়াতে ব্যাংক ও রপ্তানিকারকের ডলার ধারণের ক্ষমতা কমানো হয়েছে। রপ্তানি আয় আসার এক দিনের মধ্যে ডলার নগদায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডলারের দর নিয়ন্ত্রণের জন্য এক ব্যাংকের রপ্তানি আয় অন্য ব্যাংকে ভাঙানোর ওপর বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। ইডিএফ থেকে নেয়া ঋণ কেবল রপ্তানি আয় বা জমা থাকা বৈদেশিক মুদ্রা থেকে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করার সময়ে শিথিলতার মেয়াদ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত ৬০২টি মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স দিলেও বর্তমানে ২৩৫টি প্রতিষ্ঠানের বৈধতা রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে। লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করায় ৯টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এবং ৪২টি প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট তলব করা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০