শেয়ার বিজ ডেস্ক: মুসলিম অধ্যুষিত কসাইখানা ও গবাদিপশু বিক্রিতে সরকারের কঠোর অবস্থানের জন্য প্রভাব পড়েছে ভারতের চামড়া শিল্পে। চলতি বছরের জুনে দেশটি থেকে চামড়ার তৈরি জুতা রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ১৩ শতাংশ। সরবরাহের নিশ্চয়তার জন্য বিশ্ব ব্র্যান্ডগুলোর চীন, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকছে, যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পাশাপাশি উৎপাদন কমে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট খাতে শ্রমিকরা চাকরিও হারাচ্ছেন। খবর রয়টার্স।
চলতি বছর মার্চে ক্ষমতায় এসেই ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অনিবন্ধিত সব কসাইখানা বন্ধের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি বৈধ কসাইখানাগুলোর ওপরও কড়াকড়ি আরোপ করেন। পরে অবশ্য এলাহাবাদ হাইকোর্ট যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে রাজ্যের কসাইখানাগুলোর বৈধতা দেওয়ার নির্দেশ দেন। নয়া লাইসেন্স ইস্যু এবং পুরোনো লাইসেন্স নবায়ন না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কসাইখানা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া আদালত সব মাংস ব্যবসায়ীকে নিজ নিজ জেলা কর্মকর্তার কার্যালয় ও জেলা পঞ্চায়েত কার্যালয়ে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে বলেছেন।
উত্তরপ্রদেশে মাংস ব্যবসায়ে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে তিন কোটি ৫৬ হাজার লোক যুক্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে বড় অংশই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। কসাইখানা বন্ধে তারা বেকার হয়ে পড়েছিলেন। হাইকোর্টের ওই রায়ের ফলে তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন, তবে তা এখনও চ‚ড়ান্ত নয়।
এদিকে গত মে মাসে ভারতে জবাইয়ের উদ্দেশে বাজারে গবাদি পশু বেচাকেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত গেজেট জারি করে। গেজেটে বলা হয়, কৃষিকাজের প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে গরু, ষাঁড়, গাড়িটানা বলদ, হালটানা বলদ, মোষ, বকনা বাছুর ও উট বিক্রি করা যাবে না।
সরকারি ওই নির্দেশনায় আরও বলা হয়, বাজারে গরু বা অন্য গবাদি পশু আনতে গেলে প্রয়োজনীয় আগাম অনুমতি নিতে হবে। কৃষি ও পশুপালন-সংক্রান্ত উদ্দেশ্য উল্লেখ করলে তবেই ছাড় দেওয়া হবে। বিক্রেতা সঠিক পরিচয়পত্রে নিজেকে কৃষক প্রমাণ করতে পারলেই গরু বা মহিষ কিনতে পারবেন।
পাশাপাশি রাজ্যের সীমান্তের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো পশু বিক্রির বাজার থাকতে পারবে না বলেও নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে।
জবাইয়ের উদ্দেশ্যে গবাদি পশু বিক্রির নিষেধাজ্ঞা-সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবিত আইনও পরে বাতিল করে দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিমকোর্ট।
আদালত এ সিদ্ধান্ত বাতিল করলেও সরকারের পরোক্ষ কঠোর হস্তক্ষেপে গরু কেনা, বেচা ও জবাই কমে গেছে। এতে বিশ্ব ব্র্যান্ডগুলো ভারতের চামড়াজাত পণ্য সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। তারা বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও চীনের দিকে ঝুঁকতে থাকে। এতে দেশটির চামড়াজাত খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ভারত থেকে ৫৭০ কোটি ডলারের চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি তিন দশমিক দুই শতাংশ কম। এছাড়া এপ্রিল-জুনে দেশটি থেকে চামড়াজাত জুতা রফতানি হয়েছে ৬৭ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি চার শতাংশ কম।
ইন্ডিয়া এক্সপোর্ট অরগানাইজেশনের সাবেক সভাপতি ও চেন্নাইয়ের শীর্ষস্থানীয় জুতা রফতানিকারক ফারুক আহমেদ বলেন, সরবরাহ অনিশ্চয়তায় এইচঅ্যান্ডএম, ইনডিটেক্সের জারা ও ক্লার্কসের মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো ভারত থেকে তাদের ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ দিতে না পারার অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় আমাদের ক্রেতারা এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছে।
Add Comment