Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 9:53 am

কমলাপুর আইসিডি স্থানান্তরে অগ্রগতি নেই

রহমত রহমান: চট্টগ্রাম থেকে রেলপথে আসা কনটেইনার এখন খালাস করা হয় রাজধানীর কমলাপুর আইসিডিতে (অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো)। তবে আমদানি-রপ্তানি অনুপাতে বাড়েনি কমলাপুর আইসিডির সক্ষমতা। পাশাপাশি কনটেইনার রাখা ও লোড-আনলোডের জন্য পর্যাপ্ত জায়গাও নেই আইসিডিতে। এজন্য প্রায় এক দশক আগে আইসিডিটি গাজীপুরের ধীরাশ্রমে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৭ সালে তা স্থানান্তরের কথা থাকলেও এখনও কোনো অগ্রগতিই নেই।

আবার আইসিডি স্থানান্তরের কার্যক্রম সম্পর্কে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে রেলওয়ে থেকে কিছু জানানোও হচ্ছে না। এ নিয়ে অস্বস্তিতে আছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি কাস্টম হাউস, আইসিডি কমলাপুরের কমিশনার স্থপতি মো. আনোয়ার হোসাইন এনবিআর চেয়ারম্যানকে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেন।

চিঠিতে এ হাউসের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি তুলে ধরে বলা হয়, আইসিডি কাস্টম হাউস, কমলাপুরের চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা তিন হাজার ৩৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রাজস্ব প্রবৃদ্ধি বিগত বছরের তুলনায় নিরবচ্ছিন্নভাবে ৩০-৩৫ শতাংশের মধ্যে থাকছে। এরই মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ অতিরিক্ত রাজস্ব আহরিত হয়েছে। বছর শেষে মোট রাজস্ব তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকার ওপরে দাঁড়াবে বলে আশা করা যায়। সার্বিকভাবে দেশের আমদানি-রপ্তানির চিত্র বিবেচনায় এ কাস্টম হাউসের গুরুত্ব ও কার্যক্রম বৃদ্ধির প্রবণতা উল্লিখিত পরিসংখ্যান থেকে ধারণা করা যায়।

এ কাস্টম হাউস সম্পর্কে চিঠিতে বলা হয়, কমলাপুর আইসিডি রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে গুরুত্বপূর্ণ ঘন জনবসতি ও ব্যস্ততম এলাকায় অবস্থিত। প্রধানতম রেলস্টেশন এবং যোগাযোগের কেন্দ্র হওয়ায় এই অঞ্চল নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে এখানে ‘মাল্টি মোডাল কম্যুনিকেশন হাব’ তৈরির পরিকল্পনা আছে সরকারের। এরই মধ্যে দেশের মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে মেট্রোরেলের লাইন কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত অংশের কার্যক্রম চলছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে এখানে আইসিডির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এতে আরও বলা হয়, রেলের মাধ্যমে কন্টেনারবাহিত পণ্য চালান শুল্ক আনুষ্ঠানিকতা শেষে খালাসের পর ট্রাক বা কাভার্ডভ্যানে গন্তব্যে পরিবাহিত হয়। কিন্তু দিনের বেলা রাজধানীতে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় রাতে পণ্যচালান খালাস দিতে হয়, যা নিরাপত্তার জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া এই বন্দরের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ট্রাকস্ট্যান্ড না থাকায় বন্দরের অভ্যন্তরে প্রায়ই ট্রাকের জটলা তৈরি হয়। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘটসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পিপিপির (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) আওতায় গাজীপুরের ধীরাশ্রমে নতুন আইসিডি নির্মাণের পরিকল্পনা আছে রেলওয়ের। প্রাথমিক প্রস্তাবে ২০১৭ সালেই এটি চালু হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে এটি কোন অবস্থায় রয়েছে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করেও সুনির্দিষ্ট অগ্রগতির বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সামছুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘প্রকল্প নেওয়া আছে। এটি পিপিপিতে প্রক্রিয়াধীন আছে, বাস্তবায়িত হবে।’ প্রকল্পের অগ্রগতি বা আর কতদিন লাগতে পারেÑএ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাজ চলছে। তবে কবে হবে, তা বলতে পারব না।’

এদিকে কাস্টম হাউসের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠিতে বলা হয়Ñপ্রথমত, ঢাকা মহানগর ও তার আশপাশ-কেন্দ্রিক ভোগ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সেবা ও সরবরাহ-সংশ্লিষ্ট মালামালের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় একটি আধুনিক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ আইসিডি আবশ্যক। এটি যেমন এই অঞ্চলের শিল্প, বিপণনসহ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কার্যক্রমে ধনাত্মক অবদান রাখবে, অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চলমান অসহনীয় চাপ লাঘব করবে। সেই লক্ষ্যে আইসিডি স্থানান্তর প্রক্রিয়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত শুরু করার জন্য সরকারের উচ্চতর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যোগাযোগ করা প্রয়োজন বলে কাস্টম হাউস মনে করে।

দ্বিতীয়ত, প্রস্তাবিত আইসিডির পরিকল্পনা ও প্রকল্প প্রণয়ন পর্যায়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বা এনবিআরের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। কারণ আধুনিক কাস্টমস অপারেশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও যন্ত্রপাতি সংস্থাপনের বিষয়ে এবং কাস্টমস বন্ডেড এরিয়ার নিরাপত্তার জন্য শুল্ক কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট করণীয় এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

কমিশনার স্থপতি মো. আনোয়ার হোসাইন শেয়ার বিজকে বলেন, আগামী বছর হয়তো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়ে যাবে। পদ্মা রেল সংযোগের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আইসিডি স্থানান্তর তো লম্বা সময়ের ব্যাপার। শুধু পিপিপ হলেই তো হবে না, জমি অধিগ্রহণ, অবকাঠামো নির্মাণ ও রেললাইন নির্মাণের ব্যাপার রয়েছে। এসব করতে তো ছয় থেকে সাত বছর লাগতে পারে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে কাস্টম হাউস অনেকটা সংকুচিত হয়ে গেছে। রেললাইনের জায়গা তো ছেড়ে দিতে হবে। ভাঙা মোটামুটি শুরু হয়ে গেছে। তাই বিষয়টির ক্ষেত্রে এনবিআরের বিবেচনার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, এককভাবে সড়কপথের ওপর চাপ কমাতে ও ব্যবসায়ীদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে ১৯৮৭ সালে কমলাপুর আইসিডি নির্মাণ করা হয়। ফলে একসঙ্গে অধিক পণ্য কম খরচে রেলপথে পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বছরে ৮০ হাজার ইউনিট কনটেইনার ওঠানো-নামানোর ক্ষমতা রয়েছে কমলাপুর আইসিডির।