Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 1:17 pm

কমানো হচ্ছে এনজিও ঋণের বর্তমান সুদহার

শেখ আবু তালেব: ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (মাইক্রোক্রেডিট) সুদহার আগের মতোই রয়েছে। যদিও গত বছরের এপ্রিল থেকে ব্যাংক খাতে সর্বোচ্চ ঋণ সুদহার বেঁধে দেয়া হয়। এতে দুই খাতের ঋণের সুদহার ব্যবধান অনেক বেড়েছে। এটি কমিয়ে আনা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) ঋণের সুদহার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এজন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

ঋণ সুদহার কমিয়ে আনতে এনজিওগুলোর পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূত্র অনুযায়ী, সম্প্রতি এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পর্ষদের সদস্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক আবদুস সালাম, পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আবদুল্লাহ ও সদস্য সচিব মো. ফশিউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

পরিচালন ব্যয় ও ঋণ সুদহার কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেবে ওই কমিটি। ১০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির প্রধান করা হয়েছে ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমআরএ’র নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফশিউল্লাহকে। এতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থায়নকারী সংস্থা পল্ল¬ী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থা ক্রেডিট ডেভেলপমেন্ট ফোরামসহ (সিডিএফ) কয়েকটি ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে এমআরএ।

জানা গেছে, ব্যাংকঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট অর্থাৎ ৯ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে গত এক বছর ধরে। কিন্তু ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদহার এখনও ১৮ শতাংশের ওপরে রয়েছে। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে গিয়ে তাই অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। এ পরিস্থিতিতে এনজিও ঋণের সুদহার কমানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে ব্যাংকঋণের সুদহার ৯ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। শুধু ক্রেডিট কার্ড ছাড়া আর প্রায় সব ঋণের গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে কম সুদে বিনিয়োগ পাচ্ছেন। এতে ব্যবসায়ের ব্যয় কমে গেছে। কিন্তু একই উদ্যোক্তা যখন এমআরএ লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণদান প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিচ্ছেন, তখন প্রতি ১০০ টাকার জন্য ব্যয় করছেন ১৮ থেকে ৩০ টাকা। অর্থাৎ ক্ষেত্রবিশেষ ৩০ শতাংশ সুদে উদ্যোক্তারা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ নিতে হচ্ছে। এতে তাদের একদিকে যেমন ব্যবসা-ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, তেমনি একই বাজারে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেকে ব্যবসায়ে লোকসান গুনছেন। এমনি পরিস্থিতিতে এনজিও ঋণের সুদহার কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমআরএ থেকে।

জানা গেছে, এমআরএর নিবন্ধন নিয়ে মাঠ পর্যায়ে ৮০০ প্রতিষ্ঠান বা এনজিও ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করে। এর মধ্যে ২০২টি প্রতিষ্ঠান পিকেএসএফ থেকে অর্থায়ন পায়। ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার কমেছে এসব প্রতিষ্ঠানে। বাকি ৬০০ প্রতিষ্ঠানের সুদের হার এমআরএ ২৪ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে। এনজিও ঋণের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য ইতোমধ্যে এমআরএ থেকে ১০ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে ঋণের সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে আপত্তি করা হচ্ছে। তারা বলছে, সুদের হার কমানো হলে আয় কমে যাবে। তখন প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকিতে পড়বে। এমআরএ’র একজন কর্মকর্তা জানান, ক্ষুদ্রঋণ খাতে খেলাপির হার খুবই কম। ফলে সুদের হার কমালে কোনো ঝুঁকি আসবে না।

প্রসঙ্গত, করোনাকালে ক্ষুদ্রঋণ খাতে বিতরণের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তহবিল থেকে মাঠ পর্যায়ে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে। এর আলোকে এনজিও খাতেও কীভাবে ঋণের সুদের হার কমানো যায় সে বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবে।

বৈঠকে উল্লেখ করা হয়, কমিটি ঋণের সুদের হার কমাতে ছোট, বড় ও মাঝারি ধরনের ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা আয়-ব্যয় ও তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ পর্যালোচনা করে দেখবে। এর মধ্যে কোন কোন খাতে ব্যয় কমানো ও আয় বাড়ানো সম্ভব সেগুলো খতিয়ে দেখবে। একইসঙ্গে তহবিল ব্যবস্থা ব্যয় কমিয়ে ঋণের সুদের হার কমানোর কৌশল নির্ধারণ করবে। এর জন্য কমিটি প্রয়োজনীয় সুপারিশও করবে। কমিটি পর্ষদের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে।