গতকালের পর
প্রতিরোধের উপায়: প্রথমত, যেসব কারণে কোলেস্টেরল মেটাবলিজম ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, সেগুলোর প্রতিকার করতে হবে। ডায়াবেটিসকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। উচ্চ রক্তচাপের উপযুক্ত চিকিৎসা করতে হবে। ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করতে হবে। ওজন কমাতে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। প্রয়োজনে চর্বি কমাতে নিয়মিত স্ট্যাটিন-জাতীয় ওষুধ খেতে হবে। শরীরের চর্বি বা কোলেস্টেরলের চিকিৎসা নিয়ে এক ধরনের ভুল ধারণা আমাদের অনেকের মাঝে রয়েছে। ধারণাটি হলো যত দিন রক্তে কোলেস্টেরল বেশি পাওয়া যাবে, তত দিন স্ট্যাটিন-জাতীয় ওষুধ খেতে হবে। ডায়াবেটিস যাদের আছে, তাদের বয়স ৪০ হলে সারাজীবন স্ট্যাটিন-জাতীয় ওষুধ খেতে হবে। ডায়াবেটিসের ওষুধ যেমন সারাজীবন খেতে হয়, তেমনি চর্বির ওষুধও সারাজীবন খেতে হবে। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ছাড়া স্ট্যাটিন-জাতীয় ওষুধ কখনও বন্ধ করা যাবে না।
কোলেস্টেরল কমানোর লক্ষ্যমাত্রা: গুড কোলেস্টেরল এইচডিএল পুরুষের ক্ষেত্রে ৪০ মিলিগ্রামের ওপর এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৫০ মিলিগ্রামের ওপরে থাকতে হবে। মন্দ কোলেস্টেরলের এলডিএলের মাত্রা সুস্থ মানুষের জন্য ১৩০ থেকে ১৬০ মিলিগ্রামের মধ্যে থাকতে হবে। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের ক্ষেত্রে একশ’র মধ্যে রাখা নিরাপদ। আর যাদের এরই মধ্যে হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে বা ব্রেইন স্ট্রোক অথবা পায়ের রক্তনালিতে ব্লক ধরা পড়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এলডিএলের মাত্রা ৭০ মিলিগ্রামের নিচে রাখতে হবে। ট্রাইগ্লিসারাইডসের মাত্রা ২০০ মিলিগ্রামের নিচে রাখলে ভালো।
কোলেস্টেরলের রোগীর খাদ্যতালিকা: প্রচুর তাজা শাকসবজি, ফলমূল ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন বেশি করে খাবেন। পর্যাপ্ত মাছ খাবেন, সামুদ্রিক মাছ হলে আরও ভালো। মাংস খেতে চাইলে সপ্তাহে দু’দিন মুরগির মাংস খেতে পারেন; তবে চামড়া, গিলা, কলিজাÑএসব ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বাদ দিয়ে খাবেন। দিনের দু’বেলা ব্রাউন রুটি এবং দুপুরে একবেলা পরিমিত পরিমাণে (সম্ভব হলে ঢেঁকিছাঁটা চালের) ভাত খাবেন। শরীরের মোট চর্বির প্রায় ৮০ শতাংশ তৈরি বা নিয়ন্ত্রণ করে লিভার। বাকি মাত্র ২০ শতাংশ আসে খাদ্য থেকে। তাই চর্বি নিয়ন্ত্রণে খাদ্য উপাদানের প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম। শরীরের প্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল ও পর্যাপ্ত আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি জোগান দিতে প্রতিদিন একটি কুসুমসহ ডিম ও পাতলা সরমুক্ত এক কাপ দুধ পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। (শেষ)
সারমিন আরা
পুষ্টিবিদ