নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) আগের বছরের তুলনায় দুই হাজার ৮৯০ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে কমেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ। গত বছর জুন থেকে ডিসেম্বর শেষে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৯০ শতাংশ। কোম্পানির এমন আর্থিক অবস্থার কারণ হিসেবে ব্যবসায়িক ছন্দপতনকে দায়ী করেছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, চলতি হিসাববছরের অর্ধ-বার্ষিক (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২১) ও দ্বিতীয় প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০২১) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে খুলনা প্রিন্টিং। তথ্যমতে, কোম্পানিটির চলতি হিসাব বছরের ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে দুই দশমিক ৯৯ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময় শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল শূন্য দশমিক ১০ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির লোকসান দুই দশমিক ৮৯ টাকা বা দুই হাজার ৮৯০ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে কোম্পানিটির চলতি হিসাববছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে এক দশমিক ৯৬ টাকা। আগের হিসাববছর একই সময় শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল শূন্য দশমিক ০২ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে এক দশমিক ৯৪ টাকা বা ৯ হাজার ৭০০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর কোম্পানিটির ঋণাত্মক শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ৭৬ টাকায়।
কোম্পানির এমন ব্যবসায়িক অবনতির কারণে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও। ছয় মাসের ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৯০ শতাংশ। ডিএসইর তথ্যমতে, গত বছর জুন শেষে খুলনা প্রিন্টিংয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। নভেম্বর শেষে এর পরিমাণ দাঁড়ায় এক দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর পরে সেটি আরও কমেছে। ডিসেম্বর শেষে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ৬৮ শতাংশে।
পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানির প্রতিটি তথ্য চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে থাকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। যেসব কোম্পানির ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ভালো নয় বা খারাপের দিকে যাচ্ছে, সেগুলো থেকে বিনিয়োগ তুলে নেয় তারা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও মুনাফার জন্যই বিনিয়োগ করেন। ফলে যেখানে লোকসানের আশঙ্কা থাকবে, সেখানে তারা বিনিয়োগ করবেন না, এটাই স্বাভাবিক।
এদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমলেও এ সময় কোম্পানিটিতে বেড়েছে সাধারণ বিনিয়োগ। গত বছরের জুনের শেষে সাধারণ বিনিয়োগ ছিল ৪৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সর্বশেষ ডিসেম্বর শেষে সেটি দাঁড়িয়েছে ৫৮ দশমিক ৫৬ শতাংশে। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগ বেড়েছে ৩১ শতাংশের বেশি।
এদিকে কোম্পানির ব্যবসায়িক মন্দার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে এর শেয়ারদরেও। গত ছয় মাসের লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আলোচ্য সময়ের মধ্যে, অর্থাৎ গত আগস্ট থেকে পরবর্তী ছয় মাসে শেয়ারদর কমেছে ৪৩ শতাংশের বেশি।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ১০ আগস্ট কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয় ১৭ টাকা ২০ পয়সায়। এরপর ক্রমাগত দর হ্রাস পেতে দেখা গেছে। সর্বশেষ গতকাল আগের দিনের চেয়ে দুই দশমিক ৯৭ শতাংশ দর হ্রাস পেয়ে প্রতিটি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৯ টাকা ৮০ পয়সায়।
২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। ওই বছর বেশ ভালো রিটার্ন পেয়েছেন এর বিনিয়োগকারীরা। সেবার পাঁচ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। পরের বছরে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়া হয়। তবে এরপর তিন বছর আর লাভের মুখ দেখেননি বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে ব্যবসায়িক দুরবস্থার মধ্যেও কোম্পানির শেয়ার ‘বি’ ক্যাটেগরি ধরে রাখতে ২০১৯ সালে এক শতাংশ ও ২০২০ সালে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ নামমাত্র লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি।
ডিএসইর তথ্য বলছে, ১০০ কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৭৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ৩০ জুন, ২০২১ সমাপ্ত সময়ের হিসাবমতে, কোম্পানির মোট দায়ের পরিমাণ ৫৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদে ২৩ কোটি ৫৩ লাখ ও স্বল্প মেয়াদে ২৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের সংখ্যা ৭৩ কোটি ৪০ হাজার। এর মধ্যে কোম্পানির পরিচালকদের হাতে ৩৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিকের কাছে এক দশমিক ৬৮ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৫৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ শেয়ার।