নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হলে সারা পৃথিবীর বাজার এবং নিজেদের বাজার পরিস্থিতি দেশের ভেতরে বসেই দেখা যাবে। ফলে ডলার বা অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের সুযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। গতকাল ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এছাড়া পুঁজিবাজারে পলিসি সাপোর্ট অপর্যাপ্ত রয়েছে বলে জানান ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান। সেই সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক আকার অনুযায়ী কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নেই বলে জানিয়েছেন সিএসই চেয়ারম্যান এবং বিনিয়োগের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ফাইন্যান্স কোম্পানির কাছে টাকা নেই বলে জানান আজম জে চৌধুরী।
ইআরএফ মিলনায়তনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ইআরএফের সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুস রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম যে চৌধুরী এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সহসভাপতি মো. মনিরুজ্জামান।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত বলেন, আমাদের নিজেদের যদি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হয়ে যায়, তখন আপনারা এখানে বসেই দেখতে পারবেন ঘানায় আজকে চালের দাম কত বা আমাদের গার্মেন্টস পণ্য কোন দেশ কত দামে নিতে চায়। আমরা এখানে বসেই সারা পৃথিবীর বাজার এবং নিজেদের বাজার দেখতে পারব। তখন আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিংয়ের সুযোগ থাকবে না।
বিএসইসির চেয়ারমান বলেন, এত বড় ঘটনা পৃথিবীতে ঘটে গেছে, যা আমাদের কোনো রকমের বিচার-বিশ্লেষণ, ক্ষমতা বা আমাদের কোনো রকম কিছু করার বাইরে। এই ধাক্কায় তিনটা প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হয়েছে। চার-পাঁচটা দেশের লিডারশিপ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। সে রকম পরিস্থিতিতে আমরা পড়িনি।
তিনি বলেন, যে ধাক্কা আমাদের লাগার কথা ছিল, তার থেকে কম লেগেছে। সারা পৃথিবীতে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৮০-৯০ শতাংশ। আমাদের দেশে ঠিক উল্টো। যেখানে ৮০ শতাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, সেখানে আমাদের প্রটেকশনের ব্যবস্থা নিতেই হবে। সে কারণে আমরা ফ্লোর প্রাইস দিয়ে সাময়িক একটা ব্যবস্থা নিয়েছি। এটা স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না।
তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা ডে ট্রেডার। কিন্তু এখানে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা অনেকে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে বসে থাকে। আমাকে অনেকে আস্থার কথা বলছে। আমি বলছি আপনাদের কাছে কোনো সাজেশন থাকলে দেন, আমরা বাস্তবায়ন করব। পুঁজিবাজারে গত আড়াই বছরে কৌশলগত পরিবর্তন এনেছি। আমরা যেসব পরিবর্তন এনেছি, তার ফলাফল পরে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ৪৫টির মতো গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক লোক বেকার হয়ে গেছে। ফলে ব?্যাংকঋণ খেলাপি হয়েছে। এজন?্য পুঁজিবাজারে কীভাবে তহবিল দেয়া যায়, এবং এ ও এন ক?্যাটাগরির কোম্পানিকে সহায়তা করা যায় সে ব?্যাপারে চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, জ্বালানির ওপর যখন প্রভাব পড়ে, তখন সারা পৃথিবীর অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ে। যুদ্ধ শুরুর পর যে ধাক্কা এলো তাতে আমাদের সবকিছুতে অন্যরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো। যেখানে আমাদের বিদ্যুতের সারপ্লাস, সেখানে লোডশেডিংয়ের ধাক্কা এলো। যে দেশের মানুষ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, সেই দেশে আমাদের সরকারিভাবে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
সেমিনারে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের বাজারে জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কম। আমরা মোটামুটিভাবে মানুষের কথা শুনে বিনিয়োগ করে। এটা আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং দক্ষ জনবলের সংখ্যা কম।
তিনি বলেন, আমাদের বাজারে অপর্যাপ্ত পলিসি সার্পোর্ট। ব্যাংকের ৬-৯ যে সুদের হার আছে। এর অর্থ হলোÑ আমি ব্যাংক থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারব। কিন্তু বড় কোম্পানিগুলো ব্যাংকের কাছে গেলে ৮ শতাংশ সুদেও ঋণ দেবে। তখন কি তারা পুঁজিবাজারে যাবে। পুঁজিবাজারে এলে তাকে এর থেকে বেশি হার লভ্যাংশ দিতে হবে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক সাইজ অনুযায়ী কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নেই। খুব তাড়াতাড়ি আমরা ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবো। আমরা ইতোমধ্যে রুলস করে বিএসইসির কাছে পাঠিয়েছি। বিএসইসি অনুমোদন দিলে আমরা আশা করছি শিগগির কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে পারব।
বিএপিএলসির সাবেক সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, ‘পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ করবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা, ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো। তারা বিনিয়োগ করবে কীভাবে? তাদের কাছে তো টাকা নেই। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ব্যাংক সময় বেঁধে দেয়। যে মুনাফা হয় তা প্রফিশন বিল্ড আপ করতেই চলে যায়। তাহলে পুঁজিবাজারে ইনভেস্ট করবে কীভবে?’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় সব মার্কেটই তিন বছর ধরে ওঠানামা করছে, আমাদের মার্কেটেও তাই হচ্ছে। ধারাবাহিক উত্থান বা পতন প্রত্যাশা করা যায় না।’