Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 4:24 pm

কম্পিউটার ভাইরাস

মো. হাসানুজ্জামান পিয়াস: কম্পিউটার ভাইরাস শব্দযুগলের সঙ্গে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। জীবদেহে ভাইরাসজনিত কারণে নানা রোগের সৃষ্টি হয়, কম্পিউটারেও রয়েছে নানা ধরনের ভাইরাস, যা প্রযুক্তিপণ্যটির ক্ষতি করে থাকে। তবে কম্পিউটার ভাইরাস মূলত এক ধরনের প্রোগ্রাম। ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই এই প্রোগ্রাম ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম। মেটামরফিকের মতো ভাইরাসটি কপিগুলোকে পরিবর্তন করতে পারে। অথবা নিজেরাই পরিবর্তিত হতে পারে। আক্রান্ত কম্পিউটারের মাধ্যমে অন্য স্বাভাবিক কম্পিউটারও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেমন কোনো ব্যবহারকারী অজান্তে ভাইরাসটিকে একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাঠাতে পারেন কিংবা কোনো বহনযোগ্য মাধ্যম, যেমন ফ্লপি ডিস্ক, সিডি, ইউএসবি ড্রাইভ বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এছাড়া ভাইরাসগুলো কোনো নেটওয়ার্ক ফাইল সিস্টেমকে আক্রান্ত করতে পারে, ফলে অন্য কম্পিউটার যা ওই সিস্টেম ব্যবহার করে সেগুলোও আক্রান্ত হতে পারে।

 কম্পিউটার ভাইরাসের ইতিহাস

১৯৮৩ সালে কম্পিউটার ভাইরাসের কথা প্রথম শোনা যায়। তখন যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার বিজ্ঞানী ফ্রেড কোহেন নিরাপত্তাবিষয়ক একটি সেমিনারে কম্পিউটার ভাইরাস দেখান। অনেকে এ ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ করেন। কেউ কেউ বলেন, ১৯৮২ সালে

পেনসিলভানিয়ার রিচ স্ক্রেনটা ফ্লপি ডিস্কের মাধ্যমে অ্যাপল টু কম্পিউটারকে সংক্রমিত করতে পারে এমন একটা প্রোগ্রাম লেখেন, কিন্তু ব্যাপারটা ছিল স্রেফ মজা করার উদ্দেশ্যে। স্ক্রেনটা ও তার বন্ধুরা ছাড়া বাইরের কেউ বিষয়টি জানতেন না। তখন একে ভাইরাস বলা হতো না। আবার অনেকে বলেন, প্রথম ভাইরাসের নাম ‘ক্রিপার’ (১৯৭১)। ক্যামব্রিজভিত্তিক বিবিএনের কম্পিউটার প্রোগ্রামার রবার্ট (বব) থমাস নিজে অনুলিপি তৈরি করতে পারে তেমন একটা পরীক্ষামূলক প্রোগ্রাম তৈরি করেন।

কোহেন ১৯৮৩ সালে একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটারে তার কোড প্রবেশ করিয়ে পাঁচ মিনিটেই গোটা যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছিলেন। একইভাবে আরও চারটি প্রদর্শনীতে গড়ে আধা ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ওই কোড ব্যবহার করে কম্পিউটারের সম্পূর্ণ সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করত সক্ষম হন। কোহেনের উপদেষ্টা লেন অ্যাডলেম্যান কোহেনের অনুলিপি সৃষ্টির প্রোগ্রামটিকে ভাইরাসের সঙ্গে তুলনা করেন। এর নাম দেন ‘ভাইরাস’। সেই থেকে এমন ক্ষতিকর প্রোগ্রামের নাম হয় কম্পিউটার ভাইরাস।

কম্পিউটার ভাইরাসের প্রভাব

প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস তৈরির পর থেকে প্রোগ্রামাররা একের পর এক ভাইরাস তৈরি করে যাচ্ছে। এসব ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে অনেক ক্ষতিকর ভাইরাস। ওইসব ভাইরাসের ক্ষতির মাত্রা এতটাই বেশি যে ওগুলো সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ক্ষতিকর ওইসব ভাইরাস লাখ লাখ কম্পিউটারের অনেক মূল্যবান তথ্য ধ্বংস করেছে। আজ পর্যন্ত অসংখ্য ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর ভাইরাসের তালিকায় রয়েছে মেলিসা, মাই ডুম, স্যাসার, স্ট্রম ট্রোজান, অ্যানা কুর্নিকোভা, মরিস অ্যান্ড কনসেপ্ট, আই লাভ ইউ, সø্যামার, নিমডা ও কনফিকার প্রভৃতি।

ইন্টারনেট ও লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত অনেক কম্পিউটার ক্ষতিকর কোড ছড়াতে সাহায্য করে। কম্পিউটার ফাইল শেয়ারিং, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ও ই-মেইলের মাধ্যমেও ভাইরাস সংক্রমণ ঘটে থাকে। অনেক ভাইরাস তৈরি করা হয় প্রোগ্রাম ধ্বংস করার জন্য। আবার কিছু ভাইরাস কম্পিউটারের সরাসরি কোনো ক্ষতি না করলেও নিজেদের অসংখ্য কপি তৈরি করে, যা লেখা, ভিডিও বা অডিও বার্তার মাধ্যমে তাদের উপস্থিতির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। তবে এই ভাইরাসগুলোও ব্যবহারকারীর অনেক সমস্যা তৈরি করতে পারে। এগুলো স্বাভাবিক প্রোগ্রামগুলোর প্রয়োজনীয় স্থান দখল করে। বেশ কিছু ভাইরাসের মাধ্যমে সিস্টেম ক্র্যাশ বা তথ্য হারানোর আশঙ্কা থাকে।

কম্পিউটারে থাকা ভাইরাস যদি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের পক্ষে মুছে ফেলা সম্ভব না হয়, তাহলে ভাইরাস আক্রান্ত কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম আবার ইনস্টল করা উচিত। অন্যথায় তা ব্যবহার করা বিপজ্জনক। এটি সঠিকভাবে করার জন্য হার্ড ড্রাইভ সম্পূর্ণভাবে ডিলিট (পার্টিশনসহ) করতে হয়।

কিছু ভাইরাস কম্পিউটার থেকে সরিয়ে ফেলা যায়। এজন্য বেশ কিছু পদ্ধতিও রয়েছে। তবে তা সরোনো যাবে কি না তা নির্ভর করে ভাইরাসের প্রকার ও আক্রান্ত হওয়ার মাত্রার ওপর। উইন্ডোজ এক্সপিতে ক্ষতিগ্রস্ত সিস্টেমকে আগের মতো ফিরিয়ে নিতে সিস্টেম রি-স্টোর পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এটি রেজিস্ট্রি ও গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম ফাইলগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।