কম খরচে অর্থ সংগ্রহের প্রধান উৎস পুঁজিবাজার

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজ নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে পুঁজিবাজার থেকে ফান্ড সংগ্রহ করা উচিত। এতে দুটি লাভ হয়। একটি হচ্ছে, এই ফান্ডের জন্য কোনো সুদ দিতে হয় না এবং অন্যটি হচ্ছে প্রথমদিকে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিলেই বিনিয়োগকারীরা সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বাধাগ্রস্ত হয়। তবে দেশের স্বার্থে কম খরচে ফান্ড সংগ্রহের প্রধান উৎস মানি মার্কেট নয় বরং ক্যাপিটাল মার্কেট। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এএস জুনায়েদ এবং আইনজীবী ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হাসান মাহমুদ বিপ্লব।

এএস জুনায়েদ বলেন, দেশে বিদ্যুৎ খাতে প্রতিনিয়তই দর বাড়ছে। দেশের জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি এখন সাত শতাংশের ওপর। আর এটির অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। তবে আমি এটি নিয়ে বেশি চিন্তিত নই। কারণ দুই থেকে তিন শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি সুস্থ অর্থনীতিরই লক্ষণ। হয়তো বিদ্যুৎ খাতের দর একটু বেশিই বেড়েছে। তবে কর্মদক্ষতা থাকলে হয়তো আরও ভালো করা যাবে এ খাতে। আরও বেশি প্রতিযোগিতায় আসলে হয়তো এর বাজার আরেকটু ভালো হবে। তিনি বলেন, কানাডায় সবচেয়ে শক্তিশালী খাত হচ্ছে ব্যক্তি খাত। সেখানে সরকার প্রয়োজন ছাড়া সরাসরি অংশগ্রহণ করে কোনো কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রন করছে না। এদিক থেকে তাদের সঙ্গে আমাদের দেশের পার্থক্য অনেক বেশি।

হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপারে জার্মানির সঙ্গে সরকারের চুক্তি হতে যাচ্ছে। আমি মনে করি, সরকারের উচিত এর ফান্ড পুঁজিবাজার থেকে নেওয়া। আর পুঁজিবাজার থেকে এই ফান্ড সংগ্রহ করা হলে দুটি লাভ হবে। একটি হচ্ছে, এর জন্য কোনো সুদ দিতে হয় না এবং অন্যটি হচ্ছে প্রথমদিকে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিলেই বিনিয়োগকারীরা সন্তুষ্ট থাকবে। কিন্তু যে প্রকল্পটি হতে যাচ্ছে তাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। আমরা জানি, আমলারা এসব কোম্পানি থেকে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে। দু-চারটি গাড়ি, সুন্দর বাংলোসহ প্রচুর সুবিধা পায়। কিন্তু বাজারে তালিকাভুক্ত হলে জবাবদিহিতার মধ্যে পড়তে হয়। তিতাস গ্যাস তালিকাভুক্ত করেই আমলাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পাঁচ-ছয়টি গাড়ি নিলে অডিট হয়। এছাড়া অনেক নিয়ম-কানুনের মধ্য দিয়ে আসতে হয়। ফলে তাদের বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। আমি মনে করি, দেশের স্বার্থে কম খরচে ফান্ড সংগ্রহের প্রধান উৎস মানি মার্কেট নয় বরং ক্যাপিটাল মার্কেট। আর এটির জন্য এসইসির আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত। তাছাড়া ডিমিউচুয়ালাইজেশন হওয়ার পর ডিএসইর (ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ) যতটা গতিশীল হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। কারণ আমরা জানি, ডিএসইর ৩০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি হয়নি। পাশাপাশি বাজারে ডিবিএ (বাংলাদেশ ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন) অত্যন্ত দুর্বল। কাজের  চেয়ে তাদের পিকনিক নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। লক্ষ্য করলে দেখবেন, ডিএসইর আগের সভাপতি রকিবুর রহমান একক প্রচেষ্টায় টেলিকম খাতের গ্রামীণফোন কোম্পানিকে বাজারে এনেছিলেন। যার ফলে বাজারে ব্যাপক পরিবর্তনও লক্ষ করেছি আমরা। এছাড়া বাংলাদেশের বৃহৎ তিন কোম্পানি স্কয়ার, রেনাটা ও এসিআই সব সাবসিডিয়ারিকে তাদের মধ্যে রেখেছে। এতে বিনিয়োগকারীরা অনেক লাভবান হয়েছে। স্পন্সররা আরও বেশি হয়েছে। তাই আমি ডিএসইকে বলব, সত্যিকার অর্থে সাবসিডিয়ারি ঢুকালে প্রকৃতপক্ষে লাভবান হবেন নিজেই। কারণ শেয়ারের ফেসভ্যালু ১০ টাকা থাকলে সেটির দাম ৫০০ টাকাও হতে পারে। এ  বিষয়টি সবাইকে বোঝাতে হবে। তাছাড়া স্টক মার্কেট ভালো হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে মার্চেন্ট ব্যাংক। ইস্যু আনার দায়িত্ব তাদের, এসইসির নয়। এখন যদি কঠোরভাবে দু-তিনটি মার্চেন্ট ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হয় তাহলে সবাই ঠিক হবে।

 

শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০