কম দামের শেয়ারে সুযোগ গ্রহণে সূচকের উত্থান

মো. আসাদুজ্জামান নূর: দুই কার্যদিবস টানা বড় দরপতনের পর গতকাল সোমবার প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। তবে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা শুরু করলে একটি চক্র শেয়ারবাজারে নানা গুজব ছড়িয়ে দেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ও রোববার শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। দুদিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২৭২ পয়েন্ট পড়ে যায়। কিন্তু গতকাল সূচক কিছুটা বেড়ে যায়।

পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন বড় সংশোধনের পর গতকাল আতঙ্কজনিত শেয়ার বিক্রি কমেছে। বিপরীতে কম দামের শেয়ারে বিনিয়োগের সুযোগ নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এর ফলে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেনের ১০ মিনিটের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ৫০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেয়া এই বড় উত্থান লেনদেনের শেষপর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৩ পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ৬৩৯ পয়েন্টে উঠে এসেছে।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস বা শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৪৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট বেড়েছে দুই হাজার ৪৮২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

গতকাল সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো। কোম্পানিটির ১ দশমিক ০৪ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে ৫ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে ওয়ালটন হাইটেক। কোম্পানির দর বেড়েছে ১ শতাংশ। এরপরেই ইউনাইটেড পাওয়ারের ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে ৩ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট এবং রবির শূন্য দশমিক ৮৫ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এ ছাড়া প্রিমিয়ার ব্যাংক ১ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট, ডাচ বাংলা ব্যাংক ১ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট, সিটি ব্যাংক ১ দশমিক ২ পয়েন্ট, পাওয়ার গ্রিড ১ দশমিক ১৫ পয়েন্ট, বার্জার পেইন্টস ১ দশমিক ১৩ পয়েন্ট ও আইএফআইসি ব্যাংক সূচক বাড়িয়েছে ১ দশমিক ১ পয়েন্ট। সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি সূচকে যোগ করেছে ২৪ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট।

বিপরীতে সূচক কমানোর চেষ্টায় ছিল গ্রামীণফোন, অলিম্পিক, স্কয়ার ফার্মা, লাফার্জ হোলসিম, বেক্সিমকো সুকুক, র‌্যাক সিরামিক্স, আল-আরাফাহ্ ইসলামি ব্যাংক, কাট্টলী টেক্সটাইল, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট। এই দশ কোম্পানির দর পতনে সূচক পড়েছে ৬ দশমিক ৩ পয়েন্ট।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে আস্থা ফিরে পেতে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা ‘সাইড-লাইনে’ রয়েছেন। যার কারণে ট্রেডিং কার্যক্রম মন্থর দেখা গেছে। ফলে লেনদেন কমেছে ২০ শতাংশের বেশি। গতকাল দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭৩০ কোটি এক টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৯১৬ কোটি ২৮ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ১৮৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

লেনদেনে সবচেয়ে অবদান রেখেছে বস্ত্র খাত। লেনদেনের ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ ছিল খাতটির দখলে। ১৫ শতাংশের বেশি লেনদেন হয়েছে পরের অবস্থানে থাকা বিবিধ খাতেও। এ ছাড়া প্রকৌশল ১২ দশমিক ০৯ শতাংশ, ওষুধ ও রসায়ন ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং ব্যাক খাতে ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। বাকি খাতের লেনদেন সাত শতাংশের নিচে ছিল।

এদিকে ডিএসইতে গতকাল দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ৩১৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৬টির। আর ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এর প্রভাবে সব খাতেই দর বৃদ্ধি দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে বস্ত্র খাতে ৬.৯, বিবিধ ৭.৬৯, প্রকৌশল ২.৪৪, ওষুধ ও রসায়ন ১২.৯০, ব্যাংক ৬.০৬, খাদ্য ৯.৫২, সাধারণ বিমা ২.৫০, আইটি ২৭.২৭, জীবন বিমা ১৫.৩৮, মিউচুয়াল ফান্ড ১৪.২৯ ও ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে শতভাগ বা তিনটি কোম্পানির দর পতন হয়েছে। 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০