Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 7:04 pm

কম দামে লংকাবাংলা শেয়ারে অস্বাভাবিক লেনদেন

 

 

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে শেয়ারের চাহিদা বাড়লে দাম বাড়ে। চাহিদা কমলে দাম কমে। আর দাম অস্বাভাবিক কমলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কমে যায় লেনদেন। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের শেয়ারের লেনদেনে নিয়মটি কাজে আসছে না। গত কয়েকদিন শেয়ারটির লেনদেনে শীর্ষে থাকলেও দাম কমছে অস্বাভাবিকভাবে। গতকালও এ কোম্পানির শেয়ারের দর কমে তিন টাকা। কিন্তু সর্বাধিক শেয়ার লেনদেন করে শীর্ষ তালিকায় ওঠে আসে। আর শেয়ারটির অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিনিয়োগকারীরা।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের শক্ত ভিত্তি রয়েছে। সামনে রাইট শেয়ারের আবেদন রয়েছে। পুঁজিবাজারে রয়েছে তাদের শক্ত অবস্থান। এ শেয়ারটির অবস্থা এতো খারাপ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারপরও শেয়ারটির দর কমেছে। কিন্তু দর কমলেও লেনদেন কমছে না। তাদের আশঙ্কা, একটি মহল দাম কমিয়ে কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে শেয়ার। যাদের হাত দিয়ে শেয়ারটি ৬৮ টাকায় উঠেছিল, তাদের মাধ্যমেই শেয়ারটির দর পড়ছে বলে তারা জানান।

গত তিন কার্যদিবসের বাজার চিত্রে দেখা যায়, প্রতিদিনই এ শেয়ারের দর কমেছে। কিন্তু লেনদেনের ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীদের চাহিদার শীর্ষে ছিল কোম্পানিটি। গতকাল প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয় ৮৭ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪টি। আগের কার্যদিবসের চেয়ে গতকাল এ শেয়ারের দর কমে তিন টাকা। সর্বশেষ দর গিয়ে দাঁড়ায় ৪৯ টাকা ৬০ পয়সায়। অথচ দিন শেষে কোম্পানির অবস্থান হয় শেয়ার লেনদেনের শীর্ষ তালিকার প্রথমে। এর আগের কার্যদিবসেও প্রায় ৩৮ লাখ শেয়ার লেনদেন করে কোম্পানিটি প্রথম অবস্থানে চলে আসে। এদিন শেয়ারের দর প্রায় দুই টাকা কমে লেনদেন হয় ৫২ টাকা ৬০ পয়সায়।

ঢাকার বিনিয়োগকারী সাইদুর বলেন, লংকাবাংলার শেয়ার নিয়ে একটি চক্র গেইম খেলছে। কিছুদিন আগে তারা এ কোম্পানির উচ্চমূল্যে বিক্রি করেছেন। এখন দর ফেলে দিয়ে আবার তারাই কিনে নিচ্ছেন। পুঁজিবাজারে যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে। অতি কৌশলে তারা এ কাজটি করছেন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে লংকাবাংলার অ্যানালিস্ট কবির সিদ্দিক বলেন, মার্কেটে শেয়ার কীভাবে লেনদেন হয় তা নির্ভর করে বিনিয়োগকারীদের চাহিদার ওপর। তারা যদি মনে করেন একটি ভালো কোম্পানির শেয়ার কমে দরে কিনে রাখা যেতে পারে, সেটা তাদের সুবুদ্ধির পরিচয়। কারণ বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট দরের জন্য অপেক্ষা করেন। সেই দরে গেলে তারা শেয়ার কিনে নেন।

এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, আর্থিক বিবেচনায় এই প্রতিষ্ঠানকে খারাপ বলা যায় না। সে কারণে হয়তো এ শেয়ারের চাহিদা সৃষ্টি হতে পারে। তবে বিনিয়োগকারীদের বলব, তারা যদি কোনো কারণে একটি কোম্পানির প্রতি সন্দেহ পোষণ করেন তবে তাদের সেই শেয়ারে বিনিয়োগ না করাই ভালো। সেটা যে কোম্পানিই হোক। একই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এই কোম্পানিতে বেশ কিছু বড় বড় ইনভেস্টর ছিল। যারা কিছুদিন আগে উচ্চদরে শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে গেছে। এখন তারাই আবার ক্রেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, যে কারণে প্রতিদিনই লেনদেনে এ প্রতিষ্ঠানের আধিপত্য দেখা যাচ্ছে।

এদিকে প্রতিষ্ঠানের রাইট শেয়ার ইস্যুকে কেন্দ্র করে এ শেয়ারের চাহিদা রয়েছে, তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, এই কোম্পানির রাইটের অনুমোদন পেতে অনেক সময় লাগবে। কারণ ইতোমধ্যে দুটি কোম্পানির রাইটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর লংকাবাংলার আগে আরও কয়েকটি আবেদন জমা পড়ে আছে। ফলে নিয়মমাফিকই এর জন্য সময় লাগবে। ফলে এটা ইতিবাচক কারণ হতে পারে না।

গতকাল এ কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ ৪৯ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়। দর ওঠানামা করে ৪৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৫২ টাকা ৩০ পয়সার মধ্যে। অন্যদিকে গতকাল এক বছরের লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, এই সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার সর্বনি¤œ ২৬ টাকা ১০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ৬৮ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়। ছয় মাস আগেও এ শেয়ারের দর ছিল ৩১ টাকা। ২০০৬ সালে পুঁজিবাজারে তারিকাভুক্ত আর্থিক খাতের এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে এ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করেছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে।