Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:13 am

কম সময়ে সর্বোচ্চ মুনাফা আইপিও’র চাহিদা বেড়েই চলেছে

 

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারের সেকেন্ডারি মার্কেটের লেনদেন পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো হওয়ায় তুঙ্গে উঠেছে আইপিও’র চাহিদা। একটি আইপিও শেয়ারের বিপরীতে আবেদন জমা পড়ছে ৫০টিরও বেশি। অর্থাৎ আবেদন জমা পড়ছে ইস্যুকৃত শেয়ারের ৫০ গুণ। সাধারণভাবে সেকেন্ডারি মার্কেটের ট্রেডারদের তুলনায় আইপিও বিজয়ীরা কম সময়ে অধিক মুনাফা ঘরে তুলতে পারেন। যা পুঁজির তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এ কারণে আইপিও-তে বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতা বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সর্বশেষ তিন কোম্পানির  আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে সার্বিক প্রতিযোগিতা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুঁজিবাজার সর্বশেষ তালিকাভুক্ত তিনটি কোম্পানি হচ্ছেÑ প্যাসিফিক ডেনিমস, ফরচুন সুজ ও শেফার্ড  ইন্ডাস্ট্রিজ। এর মধ্যে প্যাসিফিক ডেনিমসের একটি আইপিও’র বিপরীতে আবেদন জমা পড়ে ২৭টি।

ফরচুন সুজের ক্ষেত্রে এই প্রতিযোগিতা আরও বাড়ে। কোম্পানির দেওয়া তথ্যমতে, এই কোম্পানির একটি আইপিও’র বিপরীতে জমা পড়ে ৪২টি আবেদন।

সর্বশেষ তালিকাভুক্ত শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ক্ষেত্রে এই প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়। এ প্রতিষ্ঠানের আইপিওতে একটি লটারি বিজয়ী হওয়ার জন্য আবেদন করেন ৫৪ জন বিনিয়োগকারী।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে বর্তমানে সেকেন্ডারি মার্কেটের সার্বিক অবস্থা সন্তোষজনক। পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় এখন অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। যে কারণে আইপিও’র মাধ্যমে কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে এলেই এর ভালো দর পাওয়া যাচ্ছে। ফলে লটারি বিজয়ীদের মুনাফা বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ।

এ প্রসঙ্গে মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা-নূর-ই-নাহারীন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা মূলত সেকেন্ডারি মার্কেট দিয়েই বিবেচনা করা হয়। এই মার্কেট ভালো থাকলে প্রাইমারি মার্কেট ভালো থাকে, আবার এই মার্কেটের নাজুক অবস্থা হলে প্রাইমারি মার্কেটেও মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করে। এর কারণ হচ্ছে, প্রাইমারি মার্কেটের শেয়ারটি সরাসরি সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি হয়। তাই এই দুই মার্কেটের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে।’

এদিকে  নতুন কোম্পানির লটারি বিজয়ীরা একটি শেয়ার থেকে কয়েকগুণ অর্থ কামিয়ে নিচ্ছেন। এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের প্রথম কার্যদিবসেই কয়েকগুণ দরে বিক্রি হচ্ছে। সর্বশেষ তালিকাভুক্ত প্যাসিফিক ডেনিমসের ১০ টাকা দরের শেয়ার প্রথম কার্যদিবসই ২৭ টাকায় লেনদেন হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর কিছুটা কমলেও বর্তমানে তা অবস্থান করছে ২৭ টাকা ৬০ পয়সায়। শুরুর দিন থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের চাহিদা পরিলক্ষিত হয়।

একই চিত্র দেখা যায়, ফরচুন সুজের শেয়ারের দরে। প্রথম দিন থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক্রয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা দেখা যায়। প্রথম কার্যদিবসেই ১০ টাকা দরের শেয়ার হাতবদল হয় ৬০ টাকা ১০ পয়সায়। এরপর দর বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ায় এ শেয়ারের চাহিদা কিছুটা কমে যায়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ৫৫ থেকে ৫৬ টাকার মধ্যে লেনদেন হচ্ছে। অন্যদিকে এই পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হয় শেফার্ডের শেয়ারে। লেনদেনের দিন এ শেয়ারের দর বেড়ে বিক্রি হয় ৫৩ টাকা ১০ পয়সায়। বর্তমানে এ শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ৪৬ টাকায়।

এদিকে প্রাইমারি মার্কেট চাঙ্গা থাকলেও নতুন কোম্পানির শেয়ারগুলো যেন অতিমূল্যায়িত না হয় সেদিকে নজর দেওয়ার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতো কোনো শেয়ার যদি বাজারে এসেই অতিমূল্যায়িত হয়ে যায় তবে সেই শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে ডিএসই’র পরিচালক হানিফ ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রাইমারি হোক আর সেকেন্ডারি মার্কেট, হোক সব জায়গা থেকেই শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির মৌলভিত্তি বিবেচনা করা দরকার। একটি শেয়ার কত টাকায় ক্রয় করা যেতে পারে, কোম্পানির মৌলভিত্তি দেখলেÑ তা ঠিক করতে পারবেন একজন সচেতন বিনিয়োগকারী। কোনো শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে গেলে সে শেয়ারে বিনিয়োগে ঝুঁকি অনেক বেশি।’