করপোরেটদের টানাটানি অতিমূল্যায়িত এসআইবিএলের শেয়ার

 

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির উন্নতির খবরে শেয়ারের দর বাড়ে। আবার কোনো কারণে শেয়ারের চাহিদা বেড়ে গেলে কোনো ধরনের সুখবর ছাড়াও শেয়ারের দর বাড়ে। সেক্ষেত্রে ওই শেয়ারটি অতিমূল্যায়িত হয়ে যাওয়ার সমূহ সুযোগ থাকে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এ রকম অবস্থায় এসেছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) শেয়ার। ব্যাংকটির শেয়ার গত দুই মাসে একাধিক করপোরেট গ্রুপের টানাটানিতে অতিমূল্যায়িত হয়েছে। ফলে বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়েছেন হাজারো বিনিয়োগকারী। খোদ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে পুঁজিবাজারে ব্লক মার্কেটে যত লেনদেন হয়েছে তার ৭০ শতাংশই এসআইবিএলের শেয়ার। এ সময় বাজারে ৩৪ টাকা শেয়ারদর থাকলেও ব্লক মার্কেটে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এমনকি একদিনে ব্লক মার্কেটে এসআইবিএলের প্রায় ১১৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা ওই দিন ডিএসইর মোট লেনদেনের ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ডিএসইতে ব্যাংকটি মোট তিন কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার ১০৮টি শেয়ার সাতবার হাতবদল হয়েছে। এ সময় কোম্পানিটির সর্বনিম্ন ২৮ দশমিক ৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৩৪ টাকায় শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এভাবেই এসআইবিএলের শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়েছে।

এদিকে এসআইবিএলের শেয়ার নিয়ে বাজারে বড় ধরনের কারসাজি হলেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, যদি কেউ সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে এবং তা যদি প্রমাণিত হয়, তবে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিনিয়োগকারীদের মতে, ব্যাংক এশিয়া, যমুনা ব্যাংক, সাউথইস্ট ও ঢাকা ব্যাংকের সমমানের ব্যাংক এসআইবিএল। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটি এসব ব্যাংকের চেয়ে নিট মুনাফা করেছে অনেক কম। কিন্তু শেয়ারের দর এসব ব্যাংকের চেয়ে অনেক বেশি।

মূলত একটি সমন্বিত ও সুসংগঠিত অসাধু চক্র শেয়ারের দর বাড়িয়ে ফায়দা লোটার জন্য এটি করেছে।

জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা হয়েছে ২৩ কোটি টাকা। তবে মুনাফা কম হলেও অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ২২ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৩ টাকা ৬০ পয়সায়। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বøক মার্কেটে অস্বাভাবিকহারে শেয়ার কেনাবেচা এবং মালিকানা পরিবর্তনের গুজবে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বাড়তে থাকে। একসময় যার পিই (শেয়ারের মূল্য-আয় অনুপাত) ৪০ ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির পিই রেশিও ৪১.২৫। যে কারণে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে মার্জিন ঋণ সুবিধা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু তারপর অব্যাহত রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরবৃদ্ধি।

এদিকে সারা বছর এসআইবিএলের শেয়ারদরের কাছাকাছি থাকা তালিকাভুক্ত অন্য ব্যাংকগুলোর মুনাফা বেশি হলেও শেয়ারদর অনেক কম। ৫৪ কোটি টাকা মুনাফা করা ঢাকা ব্যাংকের শেয়ারের বর্তমান বাজারদর ২০ থেকে ২১ টাকা। একইভাবে ৬৪ কোটি টাকা মুনাফা করা শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ২৩ টাকা এবং ৬৫ কোটি টাকা মুনাফা করা এনসিসি ব্যাংকের শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে ১৭ টাকা ৯০ পয়সায়। এদিকে এসআইবিএলের চেয়ে তিনগুণের বেশি মুনাফা করা যমুনা ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ২২ থেকে ২৩ টাকার মধ্যে। জুন পর্যন্ত এ ব্যাংকটি মুনাফা করেছে প্রায় ৭৬ কোটি টাকা। তালিকায় থাকা সাউথইস্ট ব্যাংক মুনাফা করেছে ১১৭ কোটি টাকা। অথচ এ ব্যাংকটির শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে ২১ থেকে ২২ টাকার মধ্যে। একই অবস্থা তালিকাভুক্ত মার্কেন্টাইল ব্যাংকের। জুন পর্যন্ত ব্যাংকটি মুনাফা করেছে ১৫৬ কোটি টাকা। এসআইবিএলের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা হয়েছে প্রায় সাতগুণ। অথচ বর্তমানে এ শেয়ার হাতবদল হচ্ছে ২৮ থেকে ২৯ টাকার মধ্যে। ৩২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে স্ট্যার্ন্ডাড ব্যাংক।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কেউ ঘোষণা ছাড়া শেয়ার বিক্রি করলে তা আইনের পরিপন্থি। কেউ এটা লঙ্ঘন করলে তার শাস্তি হওয়া উচিত। এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে লুৎফর রহমান নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, এ শেয়ারের দর কিছুতেই ৩০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। অনেক আগেই এ শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে কয়েকটি গ্রæপের আধিপত্য দেখা যাচ্ছে। তারা একধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কারসাজি করে শেয়ার অতিমূল্যায়িত করছে।

ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানটির ওপর একটি অশুভ চক্রের ছায়া পড়েছে। তারা যে কোনো মূল্যে মালিকানায় আসতে চাচ্ছেন। এ কারণেই তারাই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শেয়ার কিনে অস্বাভাবিকহারে বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের বিবেচনায় মুনাফা অনুযায়ী এ শেয়ারের দর ২৫ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। শেয়ার অতিমূল্যায়িত কি না, তা নিয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সচিব মো. হমায়ূন কবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, এসআইবিএলের শেয়ারের পিই ইতোমধ্যে ৪০ ছাড়িয়ে গেছে। সেই বিবেচনায় এটাকে অতিমূল্যায়িত বলা যেতেই পারে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় প্রজন্মের যেসব ব্যাংকের শেয়ার এসআইবিএলের মানের, তাদের শেয়ারের দর অনেক কম। ধরুন যমুনা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সাউথইস্ট ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক।  এসব ব্যাংকের শেয়ারের তুলনায় এসআইবিলের শেয়ারের দর অনেক বেশি।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০