নিজস্ব প্রতিবেদক: টেকসই ও অগ্রগতিমূলক বিনিয়োগে ধীরে ধীরে করপোরেট কর কমিয়ে আনা ও করপোরেট ডিভিডেন্ডের (লভ্যাংশ) ওপর করহার কমানোসহ রাজস্ব বান্ধব বাজেট প্রণয়ের প্রস্তাব করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। আর অনুন্নত অঞ্চলে শিল্প স্থাপনে বিশেষ কর সুবিধা ও ট্যাক্স নেট বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে এনবিআরের সঙ্গে আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় দুটি সংগঠন পৃথক এসব প্রস্তাব দেয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান আগামী অর্থবছর ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা দুই লাখ ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ, পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকা আয়ে পাঁচ শতাংশ, সাত লাখ টাকায় ১০ শতাংশ, ৯ লাখ টাকায় ১৫ শতাংশ ও ১১ লাখ টাকা আয়ের ওপর ২০ শতাংশ হারে কর নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো নয় বরং চার লাখ টাকা আয়ের ওপর যে ১০ শতাংশ কর রয়েছে তা কমানো যেতে পারে।
ডিসিসিআই সভাপতি নিট সম্পদের মূল্য পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত হলে শূন্য হারে সারচার্জ আরোপের পাশাপাশি ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে সারচার্জ নির্ধারণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখনও অবকাঠামো উন্নয়ন হয়নি। স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়ছে না। সারচার্জ কমানো হলে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে।
তিনি সব স্তরের করপোরেট কর হার ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫%, ৭% ও ১০% হারে হ্রাস করার প্রস্তাব করেন। তিনি করপোরেট ডিভিডেন্ডের আয়ের ওপর ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করে বলেন, এটি একটি দ্বৈত কর। ডিসিসিআই সভাপতি কোম্পানির করযোগ্য আয়ের পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত গবেষণা ও উন্নয়ন এবং ব্যবসায়ে এসডিজি খাতের কার্যক্রমে বিনিয়োগ করলে উক্ত আয় করমুক্ত ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ভ্যাট আদায়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান প্যাকেজ ভ্যাট বলবৎ রাখা এবং টার্নওভার করের সীমা এক কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকে বাড়ানোর জন্য করবান্ধব করনীতিমালার কোনো বিকল্প নেই। ডিসিসিআইয়ের সভাপতি উৎপাদানমুখী খাতে বিনিয়োগ, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি এবং পুনর্বিনিয়োগে ব্যবহƒত অর্থ শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের আহ্বান জানান, যার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনীতির চাকা গতিশীল থাকবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে আমাদের রফতানির পরিমাণ প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার, এটাকে স্বল্প সময়ের মধ্যে ৫০ বিলিয়নে উন্নীত করতে হবে। বাংলাদেশ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। বিশেষ করে সড়ক উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকার লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এ বছরের মধ্যে এলএনজি সরবরাহ নিশ্চিত করা হলে শিল্প-কারখানায় চাহিদামাফিক গ্যাস সংযোগ প্রদান সম্ভব হবে। তিনি বলেন, করপোরেট কর বিষয়ে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে।
বিসিআই সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু সব শিল্প খাতে একক রেয়াতি হারে আমদানি শুল্ক, শিল্প খাতে সব মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে এক শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রদানের সুযোগের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে শর্ত সাপেক্ষে কতিপয় মূলধনি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে ওই রেয়াতি সুবিধা রয়েছে। তিনি মূল্য সংযোজন করের (মূসক) নতুন আইন অনুযায়ী শিল্প ও সেবা খাতের জন্য বার্ষিক টার্নওভার করের ঊর্ধ্বসীমা ৮০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ কোটি টাকায় উন্নীত করা, করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানো, করপোরেট কর কমানোসহ ৭টি প্রস্তাব করেন।