লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে হলে অর্থনীতির অবস্থা সবল রাখতে হবে। যদি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তারল্য সংকট এবং পুঁজিবাজারে দৈন্যদশা থাকে, বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি না বাড়ে, কর্মসংস্থান বাড়ানো না যায়, তাহলে লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হবে না। মোট করদাতার মধ্যে মাত্র ছয় শতাংশ হচ্ছে করপোরেট করদাতা। যদি এ ছয় শতাংশের মধ্যে যে কোনো একজন তার কর প্রদানের একটি ফাইল হিসাব থেকে সরিয়ে ফেলে, তাহলে যে পরিমাণ অর্থ ফাঁকি দেওয়া হয় তা প্রায় ২৮ হাজার সাধারণ করদাতার সমান। তাই ওই ছয় শতাংশ করদাতার ওপর কঠোর নজরদারি করা উচিত। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
মাহমুদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ৭১ টেলিভিশনের সিনিয়র বিজনেস এডিটর কাজী আজিজুল ইসলাম এবং আইসিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট সাব্বির আহমেদ এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মজিদ।
কাজী আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারের সূচক কমেই যাচ্ছে। একদিকে সূচক কমছে অন্যদিকে বাজার থেকে টাকা উধাও হচ্ছে। এদিকে কেউই নজর দিচ্ছে না। এখন যদি পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে কিন্তু অর্থনীতি বন্ধ হবে না। কিন্তু একটি দেশের পুঁজিবাজার ভালো না মন্দ সেটার ওপর নির্ভর করে বিদেশি বিনিয়োগ। কারণ যখন বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশে বিনিয়োগ করতে আসবে, তারা প্রথমেই দেখবে সে দেশের পুঁজিবাজার কী অবস্থায় রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে আগে বাজারকে উন্নয়ন করতে হবে।
সাব্বির আহমেদ বলেন, বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি এখন থমকে রয়েছে। কয়েক বছর ধরে এ খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না। এর বেশকিছু কারণ রয়েছে। মূল কারণ হচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সব অবকাঠামো উন্নয়ন একসঙ্গে এগোচ্ছে। এর ফলে সরকারের খরচে চাপ বাড়ছে। যার জন্য সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এতে তারল্য সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশি যে ঋণ নেওয়া হয়েছে সেটাও পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিদেশি ঋণ নেওয়ায় বৈদেশিক কারেন্সির রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে। এ দুটি বিষয়ের কারণে সরাসরি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে প্রভাব পড়ছে। যেহেতু ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত তারল্য নেই, তাই বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করতে পারছে না।
ড. মো. আবদুল মজিদ বলেন, বাজেটে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ ধরা হয়, তার চেয়ে কম আদায় হয়। যদি প্রথম ছয় মাসের রাজস্ব আদায়ের কথা বলি, সেক্ষেত্রে দেখা যাবে লক্ষ্য নির্ধারণের তুলনায় খুবই নগণ্য। আসলে যখন একটি উন্নয়ন বাজেট করা হয়, তখন অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে বাজেটের আকার কত বড় হবে। দেশের উন্নয়ন করতে হলে উন্নয়ন বাজেটের দরকার রয়েছে। যদি বড় উন্নয়ন বাজেট করা হয়, অবশ্যই তার ব্যাকআপ থাকতে হবে। মানে কী পরিমাণ রাজস্ব আদায় হবে। যদি সেটা পারা যায়, তাহলে উন্নয়ন বাজেট করা ঠিক আছে। কিন্তু উন্নয়ন বাজেট তৈরি করে ব্যয়ের ব্যবধান বেশি রেখে যদি বলা হয় এখন টাকা আদায় কর। অর্র্থাৎ এখানে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য বেশি দেওয়া হচ্ছে। ফলে এর চাপ পরে অর্থনীতির ওপরে। যদি লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে হয় সেক্ষেত্রে অর্থনীতি অবস্থা সবল রাখতে হবে। কথা হচ্ছে যদি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তারল্য সংকট এবং পুঁজিবাজারে দৈন্যদশা থাকে, বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি না বাড়ে, কর্মসংস্থান বাড়ানো না যায়, তাহলে লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হবে না। রাজস্ব আদায়ের সব উপায়গুলো ঠিক রেখে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত বলে মনে করি। আবার মোট কর দাতার মধ্যে মাত্র ছয় শতাংশ হচ্ছে করপোরেট করদাতা। যদি এ ছয় শতাংশের মধ্যে যে কোনো একজন তার কর প্রদানের একটি ফাইল হিসাব থেকে সরিয়ে ফেলে, এ ক্ষেত্রে যে পরিমাণ অর্থ ফাঁকি দেওয়া হয়, তা প্রায় ২৮ হাজার সাধারণ কর দাতার সমান।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ