Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 8:44 pm

করপোরেট করহারে আরও ছাড় চায় এমসিসিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট করহার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সমপর্যায়ে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। একইসঙ্গে কার্যকরী করপোরেট করহার আরও কমানো বা যৌক্তিক করারও প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ প্রস্তাব দেয়া হয়। সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সভাপতিত্ব করেন।

এমসিসিআই সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম সভায় একটি সংক্ষিপ্ত সূচনা বক্তব্য তুলে ধরেন এবং বাজেট প্রস্তাবনার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেন। পরবর্তী সময়ে তার সহকর্মী চেম্বারের ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশন কমিটির চেয়ারম্যান আদিব এইচ খানকে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আহ্বান জানান। এমসিসিআই সভাপতি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, এবারের বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সরকারের বিশেষ সহযোগিতা প্রয়োজন। তাছাড়া ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিগণিত হতে যাচ্ছে। সেই হিসেবে এবারের বাজেট একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট হিসেবেও গণ্য হবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমাদের ধারণা মতে, সামগ্রিক জাতীয় রাজস্বের প্রায় ৪০ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি আসে এমসিসিআইয়ের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে। দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও শিল্প গ্রুপ যারা প্রতিবছরই সর্বাধিক পরিমাণ জাতীয় রাজস্ব পরিশোধ করে। যেমন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, গ্রামীণফোন, স্কয়ার গ্রুপ, এসিআই গ্রুপ ও ট্রান্সকম গ্রুপসহ অন্যরাও এমসিসিআইয়ের সদস্য। সেই হিসেবে এমসিসিআই ও এর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় রাজস্ব সংগ্রহে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।

এমসিসিআইয়ের সভাপতি আরও উল্লেখ করেন, এমসিসিআই সবসময়ই একটি উন্নত রাজস্ব ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালুকরণে গুরুত্বারোপ করে আসছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলছে এবং সর্বক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করছে। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বর্তমান সরকারের সুনেতৃত্ব এবং বর্তমান চেয়ারম্যানের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় এনবিআরও দেশের উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। বিগত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কর প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৫ শতাংশ।

সংগঠনটির প্রতিনিধিরা জানান, এমসিসিআই বাজেট প্রস্তাবনার মধ্যে সবসময়ই বাজেট ব্যবস্থাপনা অধিকতর গতিশীল করার দিকে জোর দিয়ে থাকে। এমসিসিআই বিশ্বাস করে, বাজেট ব্যবস্থাপনা গতিশীল ও স্বচ্ছ হলে ব্যবসায়ীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে রাজস্ব দেবে। এমসিসিআই তাদের বাজেট প্রস্তাবনায় সামগ্রিক কল্যাণ তথা দেশের কল্যাণ ও ব্যবসায়ীদের কল্যাণ চিন্তা করে। এতে একদিকে যেমন ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হয়, অন্যদিকে দেশের রাজস্ব আয়েও ঘাটতি হয় না। বিগত অর্থবছরে যদিও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে রাজস্ব আয় চাপের মধ্যে ছিল, তথাপি এনবিআর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে রাজস্ব আহরণের গতিকে স্বাভাবিক রাখতে।

এমসিসিআই’র পক্ষ থেকে আগামী বাজেটে বাস্তবায়নের কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করে সভাপতি বলেন, ‘বিগত অর্থবছরে প্রায় সকল ক্ষেত্রে (প্রাইভেট, পাবলিক ও ব্যাংক) করপোরেট করহার বিগত ২ বছর আড়াই শতাংশ করে ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। সে জন্য আমরা সরকারের নীতিনির্ধারক ও এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা রাখি, ভবিষ্যতে এ করহার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সমপর্যায়ে উন্নীত হবে। কিন্তু আমাদের দেশে কার্যকরী করপোরেট করহার অনেক বেশি। এখানে অননুমোদিত ব্যয় এবং উৎসে কর কর্তন এত বেশি যে, আমরা ব্যবসায়ীরা এ করপোরেট করহারের ৫ শতাংশ কমানোর সুবিধা ভোগ করতে পারছি না। বাস্তবে এ করপোরেট করহার পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে আর নির্দিষ্ট থাকে না, তা ক্ষেত্রবিশেষে ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে যায়। সুতরাং বিষয়টি আবারও ভেবে দেখার জন্য চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

এছাড়া কর নির্ধারণ, আপিল, ট্রাইব্যুনাল, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পর্যায়ে অনলাইনে শুনানি গ্রহণ, অর্থ আইনের যেকোনো পরিবর্তন-পরবর্তী বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার বিধান রাখা, মূসক হার কমানোসহ আয়কর অধ্যাদেশ বিষয়ে ৪৪টি, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন বিষয়ে ৩৩টি এবং কাস্টমস আইন বিষয়ে ৮টি প্রস্তাব করা হয়।