করপোরেট করে ছাড় ও করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে করপোরেট করে ছাড়, ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো ও স্থানীয় শিল্পে করবৈষম্য দূর করার প্রস্তাব করেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)।

গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে এনবিআরের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এমসিসিআই’র পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়। সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সভাপতিত্ব করেন।

সংগঠনের পক্ষে এমসিসিআই’র সহসভাপতি গোলাম মইনুদ্দিন বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ ত্বরান্বিত হচ্ছে না। দেশের উৎপাদন খাত এখনও বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করছে। প্রথম আট মাসে রাজস্ব ঘাটতি ১৭৫.১২ মিলিয়ন। বাকি চার মাসে এ ঘাটতি পূরণ অত্যন্ত দুরূহ। বর্তমানে সব ব্যাংকই তারল্য সংকটে ভুগছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ না ঘটলে অর্থনীতির ক্ষতি হবে। সেজন্য বাজেটে ব্যাংক খাতের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। আগামী বাজেট নির্বাচনী বাজেট নয়, জনকল্যাণ ও ব্যবসাবান্ধব করার সুপারিশ করেন তিনি। তিনি দেশীয় শিল্পের প্রতিযোগিতা বাড়াতে করবৈষম্য দূর, কর বিভাগের বিশেষ প্রয়োগ ক্ষমতা বিলোপ, ব্যক্তি করদাতাদের করহার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ করা এবং সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন।

এমসিসিআই’র মহাসচিব ফারুক আহমেদ প্রস্তাবনায় কোম্পানির সব কর্মচারীর কর রিটার্ন প্রদানে বাধ্যতামূলক আইন প্রত্যাহারের জন্য প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, এ আইনের ফলে কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত ও কর্মচারীর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হচ্ছে। পারকুইজিটের ক্ষেত্রে ডাবল ট্যাক্স হচ্ছে, যা বাতিল করা প্রয়োজন। রয়্যালিটি, কারিগরি সেবা ফি ও কারিগরি সহায়তা ফি কমানো উচিত বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন,  কোম্পানির হিসাব বিবরণীতে নিট লাভের আট শতাংশ নির্ধারিত। কিন্তু বিডা, বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশিকা অনুযায়ী ছয় শতাংশ পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রায় রেমিট্যান্স করা যায়। সেজন্য এ ফি ছয় শতাংশ করা প্রয়োজন। এছাড়া সিএসআর ব্যয় খরচ হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব করেন তিনি।

ফারুক আহমেদ বলেন, তিন অর্থবছর ধরে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে না, কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়েছে। এ কারণে করমুক্ত সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা, নারী ও বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা, প্রতিবন্ধী করদাতা ও তাদের বাবা-মায়ের জন্য চার লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ছয় লাখ টাকা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে চার লাখ ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে সাত লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেন তিনি। করপোরেট করহার প্রাইভেট কোম্পানির ক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ হারে কমানোর সুপারিশ করা হয়। সারচার্জ সীমা দুই কোটি ২৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে তিন কোটি টাকার প্রস্তাব করে ফারুক আহমেদ বলেন, সারচার্জ বিষয়ে কোনো নিয়মনীতি নেই। একই ব্যক্তি কর এবং সারচার্জ দিচ্ছেন। শেয়ারবাজারের বাইরে যে ব্যবসা করছেন তিনি নিজে কর দিচ্ছেন, ব্যবসা করে সম্পদ অর্জন করলে তার সারচার্জ দিচ্ছেন। আর একজন শেয়ারবাজারে ব্যবসা করে আয় করে ট্যাক্স দিচ্ছেন না। আবার সে আয়ে সম্পদ অর্জন করেও সারচার্জ দিচ্ছেন না। এর ফলে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। ট্যাক্স জিডিপি বাড়াতে ট্রান্সপোর্ট সেক্টর ও কৃষি খাতের ট্যাক্স বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি। এছাড়া ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প ডিউটি প্রত্যাহার, স্থানীয় কিছু পণ্যে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারসহ ৫৮টি প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এমসিসিআই’র সদস্য ও এসিআই’র চেয়ারম্যান এম আনিস-উদ-দৌলা বলেন, রিটেল আউটলেটের ক্ষেত্রে চার শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়, কিন্তু অন্য দোকানে দিতে হয় না। এমন বৈষম্যের কারণে ১০ বছর ধরে স্বপ্ন প্রায় ৯০০ কোটি টাকা লোকসান করেছে। অন্য রিটেইল আউটলেটের একই অবস্থা। ই-কমার্স ব্যবসায় ভ্যাট নেই, কিন্তু রিটেল আউলেটের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কর দিতে হয়। এর ফলে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কোম্পানির কর্মচারীর রিটার্ন জমার ব্যর্থতায় জরিমানার বিষয়টি এবার বাজেটে বিবেচনা করা হবে। রয়্যালিটি ফি ছয় শতাংশ রাখা হবে। লভ্যাংশের ওপর ট্যাক্স নিয়ে এনবিআর কাজ করছে। সিএসআরের ট্যাক্স প্রত্যাহার করা হবে। ট্রান্সপোর্ট সেক্টর থেকে কীভাবে ট্যাক্স বাড়ানো যায়, তা বিবেচনা করা হবে। রিটেইল শপের ভ্যাট বিষয়ে বিবেচনা করা হবে। এনবিআর ভ্যাট ও ট্যাক্সের অটোমেশনের দিকে যাচ্ছে। ইসিআর মেশিনের সঙ্গে এনবিআরের সংযোগ না থাকলে বাধ্যতামূলক করে লাভ নেই। সেজন্য এনবিআর সক্ষমতা তৈরির চেষ্টা করছে। সক্ষমতা তৈরি হলে ইসিআরের মাধ্যমে এনবিআর যুগান্তরকারী ভ্যাট আদায় করতে পারবে। ভ্যাট আহরণ করে তা সঠিকভাবে কোষাগারে জমা দিতে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানান চেয়ারম্যান। স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় চেষ্টা করা হবে, তবে এ বছরও কিছু পণ্যে সম্পূরক শুল্ক থাকবে।

অপরদিকে সকালে এনবিআরের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিডব্লিউসিসিআই) পক্ষ থেকে নারীদের জাতীয় অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ বাড়াতে ব্যবসা শুরুর তিন বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা প্রদান, করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে বরাদ্দকৃত ১০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ করার প্রস্তাব করা হয়। বাংলাদেশে ভ্যাটের হার প্রতিযোগী অন্য সব দেশের চেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করে এ হার ১০ শতাংশের নিচে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ-ভারত চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইবিসিসিআই)।

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০