নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যবসায়ীদের দাবিতে সাড়া দিয়ে এবারও করপোরেট করহারে ছাড় দেয়ার ঘোষণা দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উৎপাদনমুখী শিল্প খাতের কোম্পানির করহার দুই দশমিক ৫০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছেন। গতকাল বাজেট প্রস্তাবে আগামী অর্থবছরে তিনি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়Ñউভয় ধরনের কোম্পানির করহার কমানোর কথা বলেছেন। চলতি অর্থবছরেও একই পরিমাণ করপোরেট কর কমানো হয়, তবে তা ছিল শুধু পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য।
অর্থমন্ত্রীর নতুন প্রস্তাবের ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির জন্য করহার সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে কমে ৩০ শতাংশ হবে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমে সাড়ে ২২ শতাংশ হবে। বর্তমানে কোম্পানির কর কাঠামোয় আটটি স্তর রয়েছে। ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক, মোবাইল ফোন কোম্পানি ও সিগারেট কোম্পানিসহ বাকি ছয় স্তরের করপোরেট করে কোনো পরিবর্তন হবে না।
তবে এক ব্যক্তির করপোরেট করহার সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন মুস্তফা কামাল।
অন্যদিকে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল কোম্পানির (এমএফএস) করহার তালিকাভুক্ত বা তালিকাভুক্ত নয় উভয়ের ক্ষেত্রে বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে সাড়ে ৩২ থেকে সাড়ে ৩৭ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত না হলে সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে ব্যক্তি-সংঘের করহার সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘করপোরেট করহার কমিয়ে আনলে বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপি অনুপাত কমিয়ে আনা সহজ হতে পারে। বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তাই বাংলাদেশেও করহার পুনর্নির্ধারণ করা সময়ের দাবি।’
বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে উচ্চ করহার দিতে হয় বলে তা কমানোর তাগিদ দিয়ে আসছে। শিল্প খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণে এবং মহামারিতে উদ্যোক্তাদের আরও সুবিধা দিতে এমন প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতায় এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান বিরাজমান ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের সঙ্গে একটি প্রতিযোগিতামূলক করহার দেশের বাণিজ্যের প্রসারে ও শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
ছয় স্তরের করকাঠামো অপরিবর্তিত থাকবে, অর্থাৎ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংক (৩৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ), তালিকাবহির্ভূত ব্যাংক (৪০ শতাংশ), মার্চেন্ট ব্যাংক (৩৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ), সিগারেট, জর্দা ও গুলসহ তামাকজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি (৪৫ শতাংশ), তালিকাভুক্ত মোবাইল ফোন কোম্পানি (৪০ শতাংশ) ও তালিকাবহির্ভূত মোবাইল ফোন কোম্পানির (৪৫ শতাংশ) কর একই থাকছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাব অনুযায়ী, গত অর্থবছরে করপোরেট কর থেকে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আসে। দেশে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক লাখ ৩৫ হাজার টিআইএন বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারী কোম্পানি রয়েছে।