নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে করপোরেট কর কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল রোববার এনবিআর-এফবিসিসিআই যৌথ পরামর্শ সভায় এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
এ-সময় এফবিসিসিআই’র পক্ষ থেকে দেওয়া লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়, পুঁজিবাজারের স্বার্থে বর্তমানে প্রযোজ্য কম হারে করারোপের সুযোগ তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির জন্য আরও অবারিত করা প্রয়োজন। এজন্য পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির আয়ের ওপর আরোপিত করপোরেট করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। একই সঙ্গে তালিকাভুক্তির বাইরে থাকা কোম্পানিগুলোর বর্তমান করপোরেট করহার ৩৫ শতাংশ। এ হার কমিয়ে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ এবং ট্রেডিং কোম্পানির ক্ষেত্রে সাড়ে ৩২ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বিদ্যমান ৪৫ শতাংশ করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে টেলিকম খাতের কোম্পানিগুলোর সংগঠন অ্যামটব।
এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী অর্থবছর থেকে করপোরেট কর যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি করপোরেট করহার টেলিকম খাতে। খাত-সংশ্লিষ্টদের দাবির প্রেক্ষিতে এ কর কিছুটা কমানোর বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও তালিকাভুক্তির বাইরে থাকা কোম্পানিগুলোর করপোরেট করও কমানোর আশ্বাস দেন তিনি। তিনি বলেন, স্থানীয় পণ্যের সুরক্ষা দিতে হবে। তাই বলে সবকিছু ফ্রি করে দিলে তো দেশ চলবে না।
এদিকে আইসিটি খাতকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অবকাশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এনবিআর থেকে এ সংক্রান্ত সনদপত্র পেতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে খাতসংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সনদপত্র প্রদানের জন্য এনবিআরকে নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, এফবিসিসিআই’র প্রস্তাবে ব্যাংক, বিমাসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইল ফোন অপারেটর, মার্চেন্ট ব্যাংকের ওপর আলাদা করহারের কথা বলা হয়েছে। তবে সিগারেট প্রস্তুতকারক কোম্পানির করের ওপর বর্তমান ব্যবস্থায় কোনো সংস্কারের প্রস্তাব করেনি শীর্ষ ব্যবসায়ীদের এ সংগঠন। তামাকজাত পণ্য প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ খাতে করারোপের ক্ষেত্রে দক্ষতায় এখনও আমরা পিছিয়ে। তবে আগামী দুবছরের মধ্যে বিড়ি বিলুপ্ত করা হবে। সেজন্য করনীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
এফবিসিসিআই’র প্রস্তাবে আরও বলা হয়, তালিকাভুক্ত নয় বা নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির জন্যও করহার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব কোম্পানির জন্য বর্তমান করপোরেট করহার ৩৫ থেকে কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানিগুলোকে ম্যানুফ্যাকচারিং ও নন-ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরিতে ভাগ করার কথা বলা হয় এবং ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির জন্য করপোরেট কর ৩৫ শতাংশের পরিবর্তে ৩০ শতাংশ আর নন-ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির কর ৩৫-এর বদলে সাড়ে ৩২ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবের ব্যাখ্যায় বলা হয়, ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ট্রেডিং (নন-ম্যানুফ্যাকচারিং) উভয় কোম্পানির ক্ষেত্রে একই হারে করারোপ যুক্তিযুক্ত নয়। ম্যানুফ্যাকচারিং খাত বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও ইমপোর্ট সাবমিশনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে। এতে অর্থনীতিতে অধিকতর মূল্য সংযোজন হয় এবং আয়কর বৃদ্ধি পায়। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের এ অবদানের জন্য তাদের বাড়তি প্রণোদনা দেওয়া উচিত।
ব্যাংক, বিমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও ট্যাক্স কমানোর প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই। সংগঠনটি বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যাংক-বিমা ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যেগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত, সেগুলোর ওপর ৪০ শতাংশ করারোপিত হচ্ছে। একে দেড় শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৩৭ শতাংশ করা প্রয়োজন। তালিকাভুক্ত না থাকা কোম্পানিগুলোর বর্তমান কর ৪২ দশমিক পাঁচ শতাংশ। এটাও ৪০ শতাংশে নামানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার বর্তমান ৩৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়।
করপোরেট করহার কমানোর এসব প্রস্তাবের সপক্ষে যুক্তি দিয়ে এফবিসিসিআই বলেছে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ত্বরান্বিত করা এবং ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণের পাশাপাশি করপোরেট করহার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা দরকার। আরও বলা হয়েছে, করহার বেশি বলে পুঁজিবাজারের বাইরের কোম্পানিগুলো সঠিক আয় প্রদর্শনে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এজন্য এসব হার সহনীয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
এদিকে ব্যবসায়ী আয়করের সীমাও বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। এর জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা আয়করসীমা কিছুটা বাড়াবো। তবে আমি ভাবছি, যুক্তরাষ্ট্রের মতো ৫০ বছরের জন্য আয়করের সীমা স্থায়ী করে দেব।
Add Comment