Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 3:33 pm

করপোরেট কর কমানো ও উৎসে কর প্রত্যাহার চায় বিজিএমইএ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক। বছরে এ খাত ৬৫ বিলিয়ন পোশাক রফতানি করে বিদেশি মুদ্রা আয় করে। রফতানিতে উৎসাহ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়তার জন্য এ খাতের করপোরেট কর কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, উৎসে কর প্রত্যাহার ও অনলাইনে অডিট ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করেছে বিজিএমইএ।
গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে রফতানি খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠনের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সভায় সভাপতিত্ব করেন।
বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পোশাক খাত বর্তমানে বছরে ৬৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করে। এ খাতে ৪০ লাখ নারীসহ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ খাত থেকে সরকার বছরে দুই হাজার কোটি টাকার উৎসে কর পায়। শতভাগ রফতানি খাত হিসেবে এ খাতে উৎসে কর দশমিক ৭০ শতাংশ না নিলে রাজস্বের বড় বেশি ক্ষতি হবে না। তিন বছর পর্যন্ত তা বহাল রাখার সুপারিশ করে তিনি বলেন, রফতানি বাড়লে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। একই সঙ্গে তিনি করপোরেট কর ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার সুপারিশ করেন।
বন্ডে অডিটের নামে হয়রানি থেকে মুক্তি দিতে অনলাইন অডিট ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করেন সিদ্দিকুর রহমান। শুধু পোশাক খাত নয়, রফতানি খাতের সব প্রতিষ্ঠানকে একই সুযোগ প্রদানের সুপারিশ করেন তিনি। এছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি বিলে ভ্যাট অব্যাহতি, রফতানি খাত হিসেবে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল থেকে অব্যাহতি, বন্ডের অডিটের সময়সীমা বাড়ানোসহ ১১টি প্রস্তাব দেওয়া হয়।
বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মনসুর আহমেহ প্রণোদনা দেওয়ার ক্ষেত্রে অডিটের নামে হয়রানি বন্ধের সুপারিশ করেন। বিকেএমইএর পক্ষ থেকে বিনিয়ম বিলের ওপর আরোপিত স্ট্যাম্প শুল্ক প্রত্যাহার, উৎসে আয়করের সঙ্গে সারচার্জ প্রত্যাহার, শুধু কাটিং অ্যান্ড মেকিংয়ের ওপর চূড়ান্ত আয়কর নির্ধারণ, নিট শিল্পের যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারসহ ২২টি প্রস্তাব দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ স্পেশাল টেক্সটাইল অ্যান্ড পাওয়ার মিল অ্যাসোসিয়েশনের নেতা শেখ আবদুল হাকিম বলেন, দেশে ছোট-বড় তিন হাজার ১০০টি মিল রয়েছে। দেশীয় সুতা দিয়ে কাপড় তৈরি করি। এখন ভ্যাট বসানো হয়েছে। কিন্তু ভিয়েতনাম ও চীন থেকে বন্ডের কাপড় এবং কম শুল্কে কাপড় এসে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। আমদানি ফেব্রিক্স কাপড়ের ওপর শতভাগ শুল্ককর বসানো ও বিনিয়োগ বাড়াতে একটি বিশেষ তহবিল গঠনের সুপারিশ করেন তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বন্ডের কাপড় বাইরে বিক্রি করা যাবে না। এ বিষয়ে বন্ড ও কাস্টমসকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। বন্ড এখন বাদ দেওয়া যাবে না।
বাংলাদেশ টেক্সাটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, দেশের ১৭টি সীমান্ত হাট চালু রয়েছে। প্রতিটি হাট দিয়ে দৈনিক প্রায় ১৭ লাখ মিটার কাপড় অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করছে। এছাড়া বন্ডের কাপড়ে বাজার সয়লাব। আমাদের বাঁচাতে বন্ডের অপব্যবহার বন্ধ ও সীমান্ত হাটে কাস্টমসের তদারকি বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি। সীমান্ত হাটের মাধ্যমে অবৈধভাবে যে কাপড় আসে, তা দেখার আশ্বাস দেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) পক্ষে সচিব মো. মজিবুর রহমান এ খাতের আয়কর ১০ শতাংশ করা, উৎসে আয়কর কমানো, কর অবকাশ সুবিধা দেওয়াসহ ১০টি প্রস্তাব করেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, রফতানিতে সব খাতে সমান সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে। নিশ্চিত করতে পারলে সব খাতে রফতানির পরিমাণ বাড়বে। নতুন নতুন পণ্য রফতানি করতে হবে। রফতানি প্রবৃদ্ধি না বাড়লে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া সম্ভব হবে না। সু®ু¤ভাবে ব্যবসা করার জন্য বাজেটে যা যা করা প্রয়োজন সবই করা হবে। আমরা করজাল সম্প্রসারণে চেষ্টা করছি। সব ব্যবসায়ীকে করের আওতায় আনা হবে। অনেক ব্যবসায়ী এখনও করজালের বাইরে। তাদের চিহ্নিত করে করের আওতায় আনতে পারলে রাজস্ব বাড়বে।