করমুক্ত আয়সীমা বাড়েন রিটার্ন দাখিলে কড়াকড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক: তৃতীয় বছরের মতো ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়ের সীমায় কোনো পরিবর্তন আসছে না; তবে করের আওতা বাড়াতে রিটার্ন দাখিলের বিষয়ে কড়াকড়ির  ঘোষণা এসেছে প্রস্তাবিত বাজেটে। মূল্যস্ফীতি ও কভিড মহামারি বিবেচনায় এবার বিভিন্ন মহল থেকে ব্যক্তির করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর দাবি ছিল। অন্তত নিচের স্তরের সীমা বাড়ানোর পরামর্শ এসেছিল বিভিন্ন প্রাক-বাজেট আলোচনায়। তবে অর্থমন্ত্রী তা বিবেচনায় নেননি। সবশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হয়। আর চলতি অর্থবছরে এ সীমা আগের মতো রেখে শুধু তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের ক্ষেত্রে সীমা বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হয়।

গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট ঘোষণায় করের আওতায় বাড়ানোর জন্যই আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে আগের সীমা বহাল রাখার প্রস্তাব করার কথা বলেন। এতে আগের মতোই বছরে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হবে না। নারী, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ও তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত এ আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এলাকার করদাতার ন্যূনতম আয়করের পরিমাণ হবে ৫ হাজার টাকা। অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার করদাতাদের ন্যূনতম ৪ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। এসব সিটি ছাড়া অন্যান্য এলাকার করদাতাতের ক্ষেত্রে ন্যূনতম করের পরিমাণ হবে ৩ হাজার টাকা। করের আওতা বাড়ানোর মাধ্যমেও অর্থমন্ত্রী সরকারের আয় বাড়াতে চান। এজন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বাড়াতে তিনি ছয়টি ‘আইনি বিধান’ আরোপের প্রস্তাব করেন। দেশে কর ও জিডিপি অনুপাত অন্যান্য উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের মতো আশাব্যঞ্জক নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশের সোপানে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে এ অনুপাত অনেকাংশে বাড়ানো প্রয়োজন। এ উদ্দেশ্যে দেশের করযোগ্য বিপুল জনগোষ্ঠীকে করের আওতায় আনতে পারলে কর আহরণের সক্ষমতা ও আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির আওতা বৃদ্ধি পাবে।’

অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বিধানগুলো হলোÑকতিপয় ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ উপস্থাপন বাধ্যতামূলক করা; স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড, অনুমোদিত গ্র্যাচুইটি ফান্ড, পেনশন ফান্ড, অনুমোদিত সুপারএন্যুয়েশন ফান্ড এবং শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ব্যতীত অন্যান্য ফান্ডের রিটার্ন দাখিল; যেসব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ভার্সন চালু রয়েছে তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের বিধান প্রবর্তন, অন-স্পট কর নির্ধারণের বিদ্যমান বিধানকে কেবল গ্রোথ সেন্টারসমূহে সীমাবদ্ধ না রেখে সব পর্যায়ে এর প্রয়োগ বিস্তৃত করা; ধারাবাহিক তিন বছর বা ততোধিক সময়ব্যাপী কোনো কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ থাকলে পরিচালকদের নিকট হতে বকেয়া অবিতর্কিত কর আদায়ের বিধান করা; সরকারের অবিতর্কিত রাজস্ব দাবি পরিশোধে ব্যর্থ হলে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিধান প্রবর্তন।

অন্যদিকে কর ফাঁকিরোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণসহ করযোগ্য আয়ধারী সবাইকে কর-জালের আওতায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, টিনধারীর সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত ও রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে মধ্যবিত্ত বা তদূর্ধ্ব শ্রেণির জনসংখ্যা প্রায় চার কোটির মতো, যার অধিকাংশই আয়কর প্রদান করছে না। কর ফাঁকিরোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণসহ করযোগ্য আয়ধারী সবাইকে কর-জালের আওতায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা টিনধারীর সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি এবং গত চার বছরে প্রতি বছর গড়ে ১০ লাখেরও বেশি হারে এ সংখ্যা বেড়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিল নাগাদ এ সংখ্যাটি ৭৫ লাখ ১০ হাজারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি ২০২২ সালের মার্চে কর প্রদানকারীর সংখ্যা বেড়ে ২৯ লাখে দাঁড়িয়েছে। কর দাখিল সহজ করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এটি হবে সহজবোধ্য এবং ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের জন্য এক পাতায়। এছাড়া কিছু ক্ষেত্র ছাড়া সবার জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০