Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 8:36 pm

করমুক্ত আয় তিন লাখ টাকা চায় এফবিসিসিআই

জাকারিয়া পলাশ: ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব করতে যাচ্ছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান বিদ্যমান করসীমা নাগরিকদের জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে বলে মনে করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এ সংগঠনটি। এ প্রেক্ষিতে প্রতিবন্ধী, নারী, বয়স্ক নাগরিক ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আয়করের সীমাও বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। গত সপ্তাহে এ সংক্রান্ত খসড়া আলোচনা চূড়ান্ত করেছে এফবিসিসিআই।

খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অর্থ আইনে করমুক্ত আয়ের সীমা দুই লাখ ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয় ২০১৫ সালে, যা ২০১৩ সালে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা ছিল। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশের ওপরে উঠেছে। এ অবস্থায় জীবনযাত্রার মান বেড়ে গেছে। ফলে, ২০১৭-১৮ কর বছরের জন্য ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

এজন্য বর্তমান আড়াই লাখ টাকা থেকে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবে বিভিন্ন আয়ের মানুষের করের হারেও একইভাবে পরিবর্তন চাওয়া হয়েছে। বর্তমানে আড়াই থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের নাগরিকদের বার্ষিক ১০ শতাংশ আয়কর দিতে হয়। এই সীমানা পাঁচ লাখে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমান নিয়মে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর রয়েছে, যা বাড়িয়ে পাঁচ থেকে ১০ লাখে উন্নীত করার দাবি করা হয়েছে। ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের জন্য করহার ছিল ২০ শতাংশ। এ পরিমাণ ২০ লাখে এবং ২৫ শতাংশ করহারের সীমা ৩০ লাখ থেকে ৪০ লাখে ওঠানোর প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া, ৫০ লাখের বেশি আয় হলে তার ওপর ৩০ শতাংশ আয়কর ধার্যের দাবি করা হয়।

বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন, নারী ও বয়স্ক (৬৫ বছরের বেশি) করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা বর্তমান তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়। প্রতিবন্ধীদের বর্তমান করমুক্ত আয়সীমা হচ্ছে তিন লাখ ৭৫ হাজার, যা চার লাখ টাকা প্রস্তাবিত হয়। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমানে চার লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে কর দিতে হয় না। এই সীমাও সাড়ে চার লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে এফবিসিসিআই।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনডেন্টিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও লিগ্যাল ইকোনোমিস্ট এমএস সিদ্দিকী শেয়ার বিজকে বলেন, এখন জীবনযাত্রার ব্যয় বহুগুণ বেড়ে গেছে। মানুষের মধ্যে আয় বৈষম্যও বেড়েছে। এ অবস্থায় করমুক্তির সীমা বাড়ানো দরকার।

অবশ্য, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো ঠিক হবে না, বরং বর্তমান ইফেকটিভ মার্জিনাল ট্যাক্স বেশি আছে, যা কমানোর পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, দেশের মোট করদাতার সংখ্যা বাড়ানো দরকার। এজন্য আমাদের মাথাপিছু আয়ের সমান আয় যার আছে তার ওপরই কর আরোপ করা যেতে পারে। মোট জাতীয় আয়ের (জিএনআই) হিসাবে মাথাপিছু আয় ১৪৬০ ডলার যা প্রায় এক লাখ ১৬ হাজার টাকার মতো। অর্থাৎ, বর্তমান করমুক্ত আয়সীমায় মোট করদাতার সংখ্যা অনেক কম।

এছাড়া আমদানি শুল্ক, রফতানিতে সরাসরি প্রণোদনা বৃদ্ধি ও করপোরেট করের ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন চায় এফবিসিসিআই। আয়কর সম্পর্কিত খসড়া প্রস্তাবে সারচার্জ সংক্রান্ত নীতিকে ন্যায় ও সমতার পরিপন্থী বলে উল্লেখ করে বলা হয়, বর্তমানে প্রদর্শিত নিট পরিসম্পদের ওপর আরোপিত সারচার্জ যে নীতির ভিত্তিতে আরোপন করা হচ্ছে তা ন্যায় ও সমতা, বিশেষত কর প্রয়োগের নীতির পরিপন্থী।