শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: করোনার কারণে চা পানকারীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, বেড়েছে গাছ থেকে তোলা কাঁচা চা পাতার দামও। গত বছরে যে দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে গিয়ে বাগান মালিকদের কপালে দুশ্চিন্তার রেখা ফেলেছিল, এবার তা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যাওয়াতে লাভবান হচ্ছেন তারা। তবে এই দাম বৃদ্ধির পেছনে লকডাউনে বাগানগুলোতে চা উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ব্যাপারটিকে মূল কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলাধীন রুহিয়া থানার দবির টি গার্ডেনের পরিচালক দবির উদ্দিন জানান, ছয় একর জমিতে তিনটি চা বাগান করেছেন তিনি। ছয় থেকে আট হাজার কেজি পাতা পাওয়া যায় ওই বাগান থেকে। পপুলার, সুলতান টি ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে পাতা সরবরাহ করেন তিনি। দবির উদ্দিন জানান, গতবার প্রতি কেজি পাতার দাম ছিল ১২ থেকে ১৪ টাকা। এবার প্রতি কেজি পাতা বিক্রি করেছেন ৩০ থেকে ৩২ টাকা দরে। পাতার দাম পেয়ে তিনি বেশ খুশি বলেই জানালেন।
পপুলার টি ফ্যাক্টরির জেনারেল ম্যানাজার একেএম জাহিদুল হাসান (জাহিদ) বলেন, চলতি বছর চায়ের উৎপাদন কমে যাওয়ায় অকশনে দাম অনেক বেড়ে গেছে। প্রচুর বৃষ্টি থেকে আবহাওয়ার আনুকল্য পেয়ে চায়ের মানও এবার তুলনামূলক ভালো হয়েছে। এক্সপোর্ট কোয়ালিটির কারণেও এবার চায়ের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি জানান।
পঞ্চগড়ের বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয় অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ে ৩০৬ জন নিবন্ধনকৃত চা চাষি রয়েছে। এর বেশিরভাগই বালিয়াডাঙ্গীতে আর সদর উপজেলাধীন রুহিয়া থানায় রয়েছে ১০ জন চা চাষি।
রাজাগাঁও ইউনিয়নের জয় টি গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী খাদেমুল ইসলাম সরকার জানান, দুই একর জমিতে দুটি বাগান থেকে চার হাজার কেজি পাতা পেয়েছেন তিনি। সেই পাতা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। বালিয়াডাঙ্গীর লাহিড়ী এলাকার চা চাষি কালাম আজাদ (মানিক) ও সদর উপজেলার ভেলারহাট গ্রামের হিমেল ইসলাম বলেন, ‘চা পাতার বর্ধিত দাম আমাদের চা চাষে অনুপ্রাণিত করছে।’ তবে তাদের অভিযোগ, মাঝে মাঝে চা পাতার ক্রেতা জেলার একমাত্র চা প্রক্রিয়াজাত কারখানা শাহবাজপুর গ্রিন ফিল্ড টি ইন্ডাস্ট্রিজের লোকজন ঠিকভাবে সময়মতো চা পাতাটা কেনেন না। তাদের আচরণ অনেক সময় নীল চাষিদের মতো। একই অভিযোগ স্থানীয় চা চাষি কুতুব উদ্দিনেরও।
তবে এ অভিযোগের বিষয়ে শাহবাজপুর গিন ফিল্ড টি ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়জুল ইসলাম হিরু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘পাতার মান মানসম্মত হলে আমরা চাষিদের কাছে চা পাতা কিনতে আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করি।
এদিকে করোনাজনিত স্বাস্থ্যরক্ষায় আদা লাল চা পানের প্রবণতা বেড়েছে। পলে বেড়েছে চায়ের চাহিদাও। এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোকররম হোসেন বলেন, দেশ-বিদেশের জার্নাল, চিকিৎসক ও ভুক্তভোগীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করোনার সময়ে এ সংক্রান্ত পোস্ট ভিডিও দেখে মানুষের মনে একটা বিশ্বাস জš§ নিয়েছে, করোনা মুক্তিতে চায়ের একটা ভূমিকা রয়েছে। এ গ্রীষ্মকালেও ঘরে ঘরে চা খাওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে।
জেলা শহরের অনেক মানুষই এ ধরনের তথ্য জানিয়েছেন। বাজারে খুচরা ও পাইকারি চা বিক্রেতারা জানান, অন্যান্য বছর শীতপ্রধান এ এলাকায় চা খাওয়ার ধুম পড়ে। কিন্তু করোনাভাইরাসের পর এ বছরের গরমকালেও চা বিক্রি হচ্ছে শীতকালের মতোই।
ঠাকুরগাঁওয়ের দায়িতপ্রাপ্ত বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন খামার সহকারী ছায়েদুল হক বলেন, ‘চায়ের মান ভালো ছিল।’ তবে তিনি জানালেন অন্য একটি কারণ। বলেন, পাতার মূল্যবৃদ্ধিতে চা চাষিদের একটা বুদ্ধিদীপ্ত ভূমিকা কাজে লেগেছে। বিগত দিনে সব বাগানের পাতা একসঙ্গেই তোলা হতো। আর সে সুযোগে চা ক্রেতারা দাম কমিয়ে দিতেন। কিন্তু এবার বুদ্ধি করে পর্যায়ক্রমে পাতা তোলার কারণে সামান্য কৃত্রিম সংকট তৈরি হওয়ার কারণেও চাহিদা বেশি ছিল চা পাতার।